আন্তঃলিঙ্গ মানুষদের লৈঙ্গিক স্বীকৃতি ও লিঙ্গ পরিবর্তনের অযৌক্তিক-অপ্রয়োজনীয় সার্জারি বন্ধের দাবি

বাংলাদেশ

টিবিএস রিপোর্ট
29 October, 2022, 08:00 pm
Last modified: 29 October, 2022, 08:04 pm
শনিবার (২৯ অক্টোবর) আন্তঃলিঙ্গ সচেতনতা দিবস উপলক্ষে ‘স্পেস- এ ফাউন্ডেশন ফর পিস এন্ড কেয়ার’-এর আয়োজনে এক গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করা হয়।

বাংলাদেশে আন্তঃলিঙ্গীয় মানুষদের লিঙ্গভিত্তিক কোনো সরকারি স্বীকৃতি না থাকার কারণে তারা পদে পদে নানা বাধার সম্মুখীন হন। আন্তঃলিঙ্গীয় হয়ে জন্ম নেওয়া শিশুদের নারী বা পুরুষে পরিণত করতে অপ্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচার করা হয়, যা ব্যক্তির মানবাধিকারের লঙ্ঘন। শনিবার (২৯ অক্টোবর) আন্তঃলিঙ্গ সচেতনতা দিবস উপলক্ষে 'স্পেস- এ ফাউন্ডেশন ফর পিস এন্ড কেয়ার'-এর আয়োজনে এক সভায় এসব কথা বলেন বক্তারা।

'আন্তঃলিঙ্গ মানুষদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিতকরণ' শীর্ষক ওই গোলটেবিল বৈঠকে আন্তঃলিঙ্গ জনগোষ্ঠীর পক্ষে উপস্থিত ছিলেন মোঃ পারভেজ, নুরে আলম, পরী, ও মাইমুনা আক্তার। এছাড়া বৈঠকে বিভিন্ন দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, ট্রান্সজেন্ডার অধিকারকর্মী, উন্নয়নকর্মী, আইনজীবী, সাংবাদিক, ও নারীবাদী অ্যাকটিভিস্ট উপস্থিত ছিলেন।

লিঙ্গ বৈচিত্র্যময় জনগোষ্ঠীর অন্যতম একটি গোষ্ঠী এই আন্তঃলিঙ্গ মানুষেরা। এ জনগোষ্ঠীর মানুষেরা বিভিন্ন যৌন বৈশিষ্ট্য যেমন ভিন্ন ক্রোমাজোম প্যাটার্ন, স্ত্রী ও পুংজননাঙ্গ উভয়ই থাকা ইত্যাদি নিয়েই জন্মগ্রহণ করেন।

সভায় বক্তারা জানান, সমাজের প্রচলিত নারী ও পুরুষের শারীরিক অবয়বের সঙ্গে না মেলার কারণে আন্তঃলিঙ্গীয় মানুষদের জীবনের একটা পর্যায়ে এসে পরিবার বা সমাজের চাপে বাধ্য হয়ে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে লিঙ্গ পরিবর্তন করে নারী বা পুরুষে রূপান্তরিত হতে হয়।

এ ধরনের অস্ত্রোপচারকে অদরকারি ও অযৌক্তিক উল্লেখ করে বক্তারা জানান, এতে তাদের ভবিষ্যৎ জীবন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায়। এমনকি অনেক শিশু এই ধরনের অস্ত্রোপচারের সময় মারাও যায়।

অস্ত্রোপচারের ফলে লিঙ্গ পরিবর্তন করলেও পরে ব্যক্তির দেহে বিপরীত লিঙ্গের বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পেতে পারে৷ ফলে ব্যক্তিকে সমাজে হয়রানির শিকার হতে হয় বলে জানান গোলটেবিল বক্তারা।

আন্তঃলিঙ্গীয় মানুষ আর তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের মধ্যে পার্থক্য থাকলেও বাংলাদেশে জন্মের পরপরই একজন আন্তঃলিঙ্গীয় মানুষ তৃতীয় লিঙ্গের হিসেবে চিহ্নিত হন বলেও জানান আলোচকেরা। তবে দেশে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের স্বীকৃতি থাকলেও, আন্তঃলিঙ্গীয়দের জন্য আলাদাভাবে স্বীকৃতির ব্যবস্থা নেই।

সভায় স্পেস ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে জন্মসনদ, জাতীয় পরিচয়পত্রসহ সরকারি এবং বেসরকারি নথিতে আন্তঃলিঙ্গকে লৈঙ্গিক পরিচয় হিসেবে অন্তর্ভুক্তিকরণের পাশাপাশি তাদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিতকরণ এবং অপ্রয়োজনীয় অস্ত্রোপাচারের বন্ধ করার দাবি জানানো হয়।

দৈনন্দিন জীবনে নানা প্রতিবন্ধকতা ও হয়রানির শিকারের অভিজ্ঞতার কথা জানাতে গিয়ে মাইমুনা আক্তার বলেন, সরকারি এবং বেসরকারি নথিতে কেবল আন্তঃলিঙ্গীয় মানুষের স্বীকৃতি না থাকার কারণে তিনি কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারছেন না, এমনকি তাকে পাসপোর্টও দেওয়া হচ্ছে না।

নুরে আলম জানান, তাকে ছয়বার এই ধরনের অস্ত্রোপচারের মধ্যে যেতে হয়েছে। এর ফলে তার স্বাভাবিক জীবনযাপন ব্যাহত করেছে। বর্তমানে তিনি নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন।

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.