রংপুরে বিএনপির বিভাগীয় সম্মেলনের আগেই পরিবহন ধর্মঘট আহ্বান
ময়মনসিংহ, খুলনা মতো এবার রংপুরে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশের দুদিন আগেই পরিবহন ধর্মঘটের ডাক এলো। রংপুর অঞ্চলে মহাসড়কে 'অবৈধ যানচলাচল' করছে; এসব যানচলাচল বন্ধের দাবিতে ধর্মঘটের ডাক দিল জেলা মোটর মালিক সমিতি।
তাদের ধর্মঘট অনুযায়ী, শুক্রবার ভোর ৬টা থেকে এ শনিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত তারা কোনো ধরনের যানবাহন চালাবে না। এর মধ্যে বাস, মিনিবাস, ট্রাক ও মাইক্রোবাস রয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৭ অক্টোবর) দুপুরে এসব বিষয় জানিয়ে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেছেন রংপুর জেলা মটর মালিক সমিতির সভাপতি একেএম মোজাম্মেল হক।
এ সময় তিনি বলেন, 'মহাসড়কে নিরাপত্তার জন্য পরিবহন মালিকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার আইন করেছে। কিন্তু, রংপুরের মহাসড়কগুলোতে এখনো মহাসড়কে নছিমন, করিমন, ভটভটিসহ বিভিন্ন অবৈধ যানবাহন চলাচল করছে। এ জন্য প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। এমন অবস্থায় মহাসড়কে এসব যান চলাচল বন্ধের জন্য আমরা কয়েকটি সংগঠন মিলে সভা করে শুক্রবার ভোর থেকে শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত রংপুরের সকল রুটে পরিবহন ধর্মঘট আহ্বান করা হয়েছে।'
মহাসড়কে নছিমন, করিমন, ভটভটি বন্ধে দাবি দীর্ঘদিনের উল্লেখ করে এই নেতা আরও বলেন, আমাদের যৌক্তিক দাবি আদায়ের লক্ষ্যে বুধবার সন্ধ্যায় মটর মালিক সমিতি, ট্রাক মালিক সমিতি, কার-মাইক্রোবাস মালিক সমিতি ও সাধারণ পরিবহন মালিকদের বৈঠক বসে। সেখানে সর্বসম্মতিক্রমে ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত মতে, মহাসড়কে থ্রি হুইলার, নসিমন, করিমনসহ লাইসেন্সবিহীন ও অন্যান্য অবৈধ যানবাহন চলাচল বন্ধ করতে হবে। একই সাথে বন্ধ করতে হবে রংপুর-কুড়িগ্রাম রুটে প্রশাসনিক হয়রানিও।
রংপুরে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশের দুদিন আগে এভাবে পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেওয়ার বিষয়ে কথা বলার জন্য একাধিকবার ফোন করা হলেও রংপুর জেলা মটর মালিক সমিতির সভাপতি একেএম মোজাম্মেল হক তা রিসিভ করেননি। তার মোবাইলে এমএসএস পাঠানো হলেও কোনো প্রতিক্রিয়া জানাননি।
২০১৭ সালে মহাসড়কে এসব ঝুঁকিপূর্ণ লাইসেন্স-বিহীন যান চলাচল বন্ধের নির্দেশ দেন মহামান্য হাইকোর্ট। কিন্তু, কখনোই এটি পুরোপুরি কার্যকর হয়নি দেশের জেলাগুলিতে। কিন্তু, বিএনপির সমাবেশকে সামনে রেখে এই অজুহাতে পরিবহন ধর্মঘট ডাকা হচ্ছে বলে অভিযোগ দলটির নেতাকর্মীদের।
ধর্মঘটের মধ্যেই বিভিন্ন দাবিতে ২৯ অক্টোবর রংপুরে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ হবে। আগে থেকেই এমন ধর্মঘটের আশঙ্কা করে রংপুর কালেক্টরেট ঈদগাহ মাঠে বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে বিএনপি'র নেতাকর্মীরা আগাম আসতে শুরু করেছেন।
ধর্মঘট দিয়ে সরকার গণজোয়াগর ঠেকাতে পারবে না বলে মনে করছে দলটি। কারণ সম্প্রতি হয়ে যাওয়া খুলনা ও ময়মনসিংহ বিভাগীয় গণসমাবেশে বিএনপিকে সেই শিক্ষা দিয়েছে বলে দাবি করেছেন সংগঠনের নেতারা।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার, খালেদা জিয়ার বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং বিভিন্ন স্থানে গুলিতে নেতাকর্মী নিহত হওয়ার প্রতিবাদসহ নানান দাবিতে দেশব্যাপী বিভাগীয় শহরে গণসমাবেশ করছে বিএনপি। এই ধারাবাহিকতায় শনিবার রংপুরে বিভাগীয় গণসমাবেশের ডাক দেওয়া হয়।
গণসমাবেশের প্রধান অতিথি হিসেবে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। এছাড়া দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বেগম সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুসহ বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা গণসমাবেশে অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বলে বিএনপির একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
এর মধ্যেই বিভাগীয় সমাবেশ সফল করতে নানা প্রচারণা চালাচ্ছেন দলের নেতাকর্মীরা। বিএনপির অঙ্গ সংগঠন যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, কৃষক দল, ওলামা দল, শ্রমিক দল, তাঁতী দলসহ অন্য অঙ্গ সংগঠনের নেতারা দিনরাত কাজ করছে।
সমাবেশের আগে ধর্মঘটের এসব অভিজ্ঞতা থেকেই এবারও আগাম প্রস্তুতির কথা জানিয়েছেন রংপুর বিএনপির নেতা-কর্মীরা।
রংপুর বিভাগীয় সমাবেশের সমন্বয়কারী ও বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, 'সরকার ধর্মঘটসহ কোনো বাধা দিয়েও সমাবেশে গণজোয়ার ঠেকাতে পারবে না। সমাবেশ সফল হবেই।'
জানতে চাইলে, রংপুর বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু দ্য বিজনেস স্টান্ডার্ডকে বলেন, এর আগের মহাসমাবেশেও পরিবহন ধর্মঘটের নামে একই পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে। রংপুর, ময়মনসিংহ ও খুলনায় সরকার এই কৌশলে খেলছে। এতে লাভ নেই। আমরা তো গণদাবির কথা বলছি। মানুষের মুক্তি কথা নিয়ে মাঠে এসেছি। সরকার বার বার বলে বিএনপি ষড়যন্ত্র করছে। কিন্তু, এখন সরকারই ষড়যন্ত্র করে আমাদের বাধা দিচ্ছে'।