তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ ১০টি আসনও পাবে না: ফখরুল
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ এখন ১০টি আসনও পাবে না। এ কারণেই তারা এখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার বিরুদ্ধে।
শনিবার খুলনায় বিভাগীয় সমাবেশে ফখরুল এসব কথা বলেন।
জনসভায় তিনি আরও অভিযোগ করেন, সরকার জনগণের ভোট ছাড়া ক্ষমতায় যেতে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো আরেকটি নির্বাচন করার চেষ্টা করছে।
তিনি বলেন, 'বিএনপির সামনে কোনো পথ খোলা নেই। আন্দোলন, আন্দোলন, আন্দোলন। একনায়ক, কর্তৃত্ববাদ সরকারকে হাটিয়ে জনগণের সরকার আনতে হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগের চিহ্ন থাকবে না, ১০টি আসনও পাবে না।'
এছাড়া সমাবেশে দেওয়া বক্তব্যে বর্তমান নির্বাচন কমিশনকে আওয়ামী লীগের হাতের পুতুল দাবি করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'নির্বাচনে কমিশন কার তৈরি করা—হাসিনার তৈরি করা। ভালো দেখানোর জন্য কিছু করছে, আরে তাদের তো ডিসি-এসপিরাই মানতে চায় না। তারা আর কী নির্বাচন করবেন?'
ফখরুল বলেন, বিএনপি নতুন শক্তিতে বলীয়ান হয়ে উঠেছে এবং আগের চেয়ে শক্তিশালী সংগঠনে পরিণত হয়েছে। 'আওয়ামী লীগ ভেবেছিল, খালেদা জিয়াকে জেলে দিলে বিএনপি শেষ হয়ে যাবে। তবে না, বিএনপি নতুন সাহসে বলীয়ান হয়ে উঠেছে।'
খুলনাবাসীদের বীর অভিহিত করে ফখরুল বলেন, 'ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দূর থেকে আমাদের এই সমাবেশ দেখছেন। দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে আপনাদের অভিবাদন জানাচ্ছি।'
সব পরিবহন বন্ধ থাকার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'সব উপায়ে চেষ্টা করেও সরকার সমাবেশ বন্ধ করতে পারেনি।'
বিএনপির এই নেতা বলেন, 'ইতিহাস বলে, কোনোদিন জনগণের ন্যায়সংগত দাবি শুধু শক্তি দিয়ে দমিয়ে রাখা যায় না।'
ফখরুল দাবি করেন, গত তিন দিনে বিএনপির ৫ শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
'আওয়ামী লীগের লোকেরা সমাবেশে আসার পথে বিএনপির হাজারো নেতাকর্মীকে আহত করেছে। চুকনগরে তিনজনকে গুলি করেছে, কেশবপুরে কয়েকজন গুলিবিদ্ধ,' দাবি করেন ফখরুল।
এছাড়া মোংলা বন্দরে ট্রলারে আসা বিএনপির কয়েকশ নেতাকর্মীকেও আওয়ামী লীগের লোকেরা আহত করেছে বলে দাবি করেন তিনি।
আওয়ামী লীগ দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করেছে দাবি করে সমাবেশে দেওয়া ভাষণে বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'আমাদের অর্থনীতি ধ্বংস করেছে, আমাদের অর্জন ধ্বংস করেছে। আমাদের রাষ্ট্র ব্যবস্থার যতগুলো প্রতিষ্ঠান আছে, সবগুলো ধ্বংস করেছে, মাত্র একটি কারণে—তাদের অবৈধ ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার জন্য। তারা জোর করে ক্ষমতায় থাকতে চায়। তারা বিনা ভোটে, জনগণের ভোট না নিয়ে, জনগণকে বঞ্চিত করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়। কিন্তু সেটি আর আমরা হতে দেব না।'
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, 'খুলনা থেকে আমরা অঙ্গীকার করছি, শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন করতে দেব না।
'আওয়ামী লীগের লোকেরা বলেছিল, পদ্মার এপারে কোনো সমাবেশ করতে দেবে না। তারা একটু এসে দেখুক, লজ্জা পাবে। এখানে জনসমুদ্র হয়েছে।'
অন্যদিকে খুলনা বিভাগীয় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাত করা হবে।
শনিবার গণসমাবেশে বক্তব্য দেওয়ার সময় তিনি বলেন, 'আজ খুলনায় লাখো কণ্ঠ গর্জে উঠেছে। আমরা ডিসেম্বরের মধ্যে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটাব।
'আমরা তারেক রহমানকেও দেশে ফিরিয়ে আনব।'
সড়ক ও নৌপরিহবন ধর্মঘটসহ অন্যান্য সব বাধা উপেক্ষা করে শনিবার সকালে খুলনায় দিনব্যাপী বিভাগীয় গণসমাবেশ শুরু করে বিএনপি।
জ্বালানি তেল, চাল, ডাল, তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ও দেশব্যাপী দলীয় নেতাকর্মীদের ওপর হামলা-মামলার প্রতিবাদ এবং বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে এ গণসমাবেশ ডাকা হয়েছে। শনিবার সকাল ১১টায় জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে শুরু হয় সমাবেশের কর্মসূচি।
সমাবেশ সফল করতে বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের হাজারো নেতাকর্মী সমবেত হয়েছেন।