এলপিজির দাম কমতে না কমতেই বাড়ছে বিদ্যুতের দাম
অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে বিদ্যুতের পাইকারি (বাল্ক) মূল্য ১৫ থেকে ১৭ শতাংশ বাড়াতে পারে সরকার যার ফলে ইতোমধ্যে মূল্যস্ফীতির কারণে জর্জরিত সাধারণ মানুষের ওপর আসতে চলেছে আরেকটি আঘাত।
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের মতে, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের বিদ্যুৎ ক্রয় ও বিক্রয় হারের মধ্যে ব্যবধান কমানোর লক্ষ্যে দাম বাড়ানো হবে। ফলে অক্টোবরে কমিশন এলপিজির দাম ৩৫ টাকা কমানোর ঘোষণা দিয়ে গ্রাহকদের কিছুটা স্বস্তি দিলেও বিদ্যুতের বাড়তি দামে ফের নাকাল হতে হবে জনগণকে।
রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি তরল পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম (যা বেশিরভাগ বাড়িতে এবং রেস্তোরাঁয় রান্নার জন্য ব্যবহৃত হয়) কমিয়ে ১,২০০ টাকা নির্ধারণ করে। আন্তর্জাতিক বাজারে প্রোপেন ও বিউটেনের দাম কমে যাওয়ায় চলতি মাসের জন্য মূল্য সমন্বয় করা হয়েছে।
বর্তমানে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড প্রতি কিলোওয়াট বাল্ক বিদ্যুৎ ৩.৪৬ টাকা থেকে ৪৩.৪২ টাকায় কিনে থাকে এবং বিতরণকারীদের কাছে প্রতি কিলোওয়াট ৫.১৭ টাকায় বিক্রি করে।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, দাম বৃদ্ধির পর বোর্ড প্রতি কিলোওয়াট বিদ্যুৎ বিতরণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে ৬ টাকায় বিক্রি করবে।
গত ১৮ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের বাল্ক বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাবের উপর সর্বশেষ শুনানির আয়োজন করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। তবে শুনানির পর গত সাড়ে তিন মাসে কোনো শুল্ক ঘোষণা হয়নি।
এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল জলিল দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, ১৪ অক্টোবর সময়সীমা অর্থাৎ শুনানির ৯০ কার্যদিবসের মধ্যে নতুন শুল্ক ঘোষণা করার আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
'আমরা নির্ধারিত সময়সীমার আগে যেকোনো দিন নতুন বাল্ক মূল্য ঘোষণা করতে প্রস্তুত,' তিনি বলেন। তবে কোনো নির্দিষ্ট তারিখ বা কত টাকা বাড়ানো হবে সেসব কথা তিনি উল্লেখ করেননি।
এর আগে ২০২০ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি সর্বশেষ বাল্ক বিদ্যুতের দাম ঘোষণা করা হয়েছিল। সেসময় জ্বালানি নিয়ন্ত্রক সংস্থা ৪.৭৭ টাকা কিলোওয়াট থেকে দাম ৮ শতাংশ বাড়িয়ে ৫.১৭ টাকা কিলোওয়াট ঘোষণা করে। তখন বোর্ড বিদ্যুৎ কিনত ৩.৪৬ টাকা কিলোওয়াট থেকে ৪৩.৪২ টাকা কিলোওয়াটে, যে দামে এখনও বিদ্যুৎ কিনছে তারা।
মে মাসে শুনানিতে, বোর্ড বাল্ক বিদ্যুতের শুল্ক ৬৬ শতাংশ বাড়িয়ে ৮.৫৬ টাকা কিলোওয়াট করার প্রস্তাব করেছিল।
তবে চলতি অর্থবছরে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের জন্য ১৭ হাজার কোটি টাকা বিদ্যুৎ ভর্তুকি থাকায় এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের কারিগরি কমিটি বাল্ক বিদ্যুতের দাম ১৫ থেকে ১৭ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধির মাধ্যমে ট্যারিফ সমন্বয়ের পরিকল্পনা করছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্ববাজারে জ্বালানি মূল্যবৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে সর্বশেষ শুনানি হয়। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজার পরিস্থিতি এখন পরিবর্তিত হয়েছে, অন্যদিকে দেশেও শিডিউল অনুযায়ী লোড শেডিং দেওয়া হচ্ছে। আর তাই ট্যারিফ সমন্বয়ের জন্য আরেকটি শুনানির প্রয়োজন।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, 'বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড গত শুনানিতে ৭ শতাংশ উৎপাদন বৃদ্ধির আশ্বাস দিয়ে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেছিল, যা হয়নি। তার পরিবর্তে, সরকার প্রতিদিন ১৭ থেকে ১৮ শতাংশ লোডশেডিং দিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে। তাই গত শুনানির ওপর মূল্য সমন্বয় আদেশের আর ভিত্তি নেই।'
'জ্বালানি নিয়ন্ত্রক কমিশন যদি সত্যিকার অর্থে আইনকে সম্মান করে, তাহলে তাদের বর্তমান শুল্ক অপরিবর্তিত রাখা উচিত,' বলেন তিনি।