বাংলাদেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিতে সম্মত কম্বোডিয়া, সম্ভাবনা ওষুধ শিল্পে

বাংলাদেশ

24 September, 2022, 10:15 am
Last modified: 24 September, 2022, 01:28 pm
এলডিসি পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় নেপাল, ভুটান, মালয়শিয়া, ভিয়েতনাম, ভারতসহ ১৭টি দেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি বা এফটিএ নিয়ে আলোচনা করছে বাংলাদেশ।
ইনফোগ্রাফ: টিবিএস

মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) স্বাক্ষরে সম্মত হয়েছে বাংলাদেশ ও কম্বোডিয়া। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মতে, এই চুক্তি কার্যকর হলে নমপেনের ১ বিলিয়ন ডলারের ফার্মাসিউটিক্যাল বাজারে ব্যবসা করার সুযোগ পাবে ঢাকা। 

জাতীসংঘের ৭৭তম অধিবেশনে যোগ দিয়ে কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন সেনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষীয় বৈঠকে এ চুক্তির ব্যাপারে সম্মত হয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জাতীসংঘের অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর কাজের বর্ণনা দিয়ে এসব তথ্য জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।

এলডিসি পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় নেপাল, ভুটান, মালয়শিয়া, ভিয়েতনাম, ভারতসহ ১৭টি দেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি বা এফটিএ নিয়ে আলোচনা করছে বাংলাদেশ। তবে এখনও পর্যন্ত কোনো দেশের সঙ্গে এ চুক্তিতে যাওয়া সম্ভব হয়নি।

অন্যদিকে, চীনসহ ১৪টি দেশের সঙ্গে এ চুক্তিতে বাণিজ্য করছে কম্বোডিয়া। কম্বোডিয়ার সঙ্গে চুক্তি হলে এটি হবে বাংলাদেশের জন্য প্রথম এফটিএ। 

এফটিএ স্বাক্ষরিত হলে উভয় দেশই নিজেদের মধ্যে শুল্কমুক্ত বাণিজ্য সুবিধা ভোগ করবে।

প্রায় ২ কোটি জনসংখ্যার দেশ কম্বোডিয়ায় কোনো বড় ওষুধ তৈরির কারখানা নেই এবং দেশটি তার ওষুধের চাহিদার প্রায় ৫৫ শতাংশই আমদানি করে থাকে। তাই ওষুধ প্রস্তুতকারকরা বলছেন, এফটিএ স্বাক্ষরিত হলে দেশটির শুল্কমুক্ত বাজারে উচ্চমান ও সাশ্রয়ী মূল্যের ওষুধ রপ্তানির ভালো সম্ভাবনা তৈরি হবে বাংলাদেশের। 

বর্তমানে, ভারত এবং চীনের কোম্পানিগুলো কম্বোডিয়ার ওষুধের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। ২০২২ অর্থবছরে বাংলাদেশ ৯.৭৬ মিলিয়ন ডলার মূল্যের ওষুধ রপ্তানি করেছে দেশটিতে। 

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ফার্মাসিউটিক্যালস ইন্ডাস্ট্রিজের সাধারণ সম্পাদক এসএম শফিউজ্জামান বলেন, "বিশেষ সুবিধা না থাকলে চীন ও ভারতের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে বাজার বাড়ানো সম্ভব নয়। এলডিসি থেকে উত্তরণের পর এটি আরো কঠিন হবে। ফলে দেশটির সঙ্গে এফটিএ হলে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে।"

এ চুক্তি হলে কম্বোডিয়াতে বাংলাদেশের ওষুধ, চামড়া ও কৃষি প্রক্রিয়াজাত শিল্পের জন্য সুযোগ তৈরি হবে বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।

কম্বোডিয়াতে বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানিপণ্য হলো- ফার্মাসিউটিক্যালস, টেবিলওয়ার, বাড়ির পট্টবস্ত্র, টেক্সটাইল, সিফুড এবং সামুদ্রিক পণ্য, চা, আলু, পাট ও পাটজাত পণ্য, হালকা প্রকৌশল দ্রব্য, মশলা, প্রসাধনী, সিরামিক ও মেলামাইন পণ্য, পোশাক, পাদুকা এবং চামড়াজাত পণ্য, নিটওয়্যার, টয়লেট্রিজ ইত্যাদি। অন্যদিকে, কাম্বোডিয়া প্রধানত তুলা, ভোজ্য তেল, সার, ক্লিনার, স্ট্যাপল ফাইবার, সুতা ইত্যাদি বাংলাদেশে রপ্তানি করে থাকে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্যানুসারে, ২০২২ অর্থবছরে দেশটিতে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১৮ মিলিয়ন ডলার। এরমধ্যে ফার্মা সেক্টরের রপ্তানিই ৫৩ শতাংশ। এবং দেশটি থেকে আমদানির পরিমাণ ছিল ৬ মিলিয়নের বেশি। 

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সূত্র বলছে, দুই দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের কাছ থেকে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত এলে শীঘ্রই কম্বোডিয়ার সঙ্গে এফটিএ স্বাক্ষর করা সম্ভব। 

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, ২০০৬ সালে উভয় দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পর্যায়ে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের ফলে কম্বোডিয়ার সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বাণিজ্য শুরু হয়। এরপর ২০১৪ সালে উভয় দেশের সহযোগিতার নতুন ক্ষেত্র সন্ধানে একটি যৌথ কমিশন গঠন করা হয় এবং উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্য বাড়াতে উদ্যোগ নেওয়া হয়। 

তবে এফটিএ না থাকা এবং চীনের একচেটিয়া বাজার দখলের কারণে কম্বোডিয়ায় বাংলাদেশ পিছিয়ে রয়েছে। এফটিএ হলে এ সমস্যাও কাটবে বলে মনে করছেন তারা।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি সেলের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না শর্তে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, চীন ২০০০ সাল থেকে কম্বোডিয়ার সঙ্গে এফটিএ সুবিধায় বাজার দখল করেছে। ফলে এফটিএ ছাড়া দেশটির মার্কেটে অন্য কারো পক্ষে ভালো করা সম্ভব নয়।

"এছাড়া আমাদের প্রধান রপ্তানি পণ্য, তৈরি পোশাকের চাহিদা কম্বোডিয়ায় না থাকায় তাদের সঙ্গে এফটিএ বাংলাদেশের জন্য বড় সুবিধা নিয়ে আসবে," যোগ করেন তিনি। 

কম্বোডিয়ার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক এই চুক্তিতে বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাকের জন্য তেমন কোনো লাভ তৈরি করবে না বলে মনে করছেন বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম।

তিনি বলেন, "আমাদের তুলনায় জনসংখ্যায় খুব ছোট দেশ কম্বোডিয়ায় ৬০০ থেকে ৭০০ গার্মেন্টস কারখানা রয়েছে। নিজেদের কাঁচামাল থাকায় পোশাক উৎপাদনে তারা বেশ এগিয়ে। ইউরোপের মার্কেটে তাদেরও অবস্থানও বেশ ভালো। তৈরি পোশাকে আমাদের প্রতিযোগী দেশ ভিয়েতনাম ও চীনের পরই কম্বোডিয়ার অবস্থান।" 

"ফলে তাদের দেশে আমাদের রপ্তানির সুযোগ কম। তবে ওষুধ, এগ্রো প্রসেসিংসহ কিছু খাতে দেশটির বাজার আমাদের জন্য আকর্ষণীয়," যোগ করেন তিনি। 

এ ব্যাপারে রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্ট (র‌্যাপিড) এর চেয়ারম্যান ড. এম এ রাজ্জাক টিবিএসকে বলেন, "আমরা যদি কম্বোডিয়াকে বিশ্বের বৃহত্তম বাণিজ্য ব্লক, আসিয়ান-এ যোগদানের গেটওয়ে হিসেবে ব্যবহার করতে পারি, তাহলে দেশটির সঙ্গে এফটিএ স্বাক্ষর অবশ্যই লাভজনক হবে।"
 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.