চট্টগ্রামের বিশেষায়িত শিশু হাসপাতাল: প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও শুরু হয়নি নির্মাণকাজ

বাংলাদেশ

23 September, 2022, 12:20 pm
Last modified: 23 September, 2022, 12:26 pm
দুটি সরকারি হাসপাতালে পৃথক শিশু ওয়ার্ড থাকলেও চট্টগ্রামে কোন বিশেষায়িত শিশু হাসপাতাল নেই। ফলে হাসপাতাল দুটিকে সক্ষমতার কয়েকগুণ রোগী সেবা দিতে হয়।

চট্টগ্রামের বিশেষায়িত শিশু হাসপাতালের নির্মাণ প্রকল্পের মেয়াদ ফুরিয়ে গেলেও ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় এখনো কাজ শুরু হয়নি। ২০১৭ সালে হাতে নেওয়া স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এই প্রকল্পের জন্য নির্ধারিত স্থানে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) মহাপরিকল্পনার একটি রিভারফ্রন্ট সড়কের কারণে থমকে আছে হাসপাতালের নির্মাণকাজ। পাঁচ বছরেও এই জটিলতার সমাধান করতে পারেনি চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য প্রশাসন। অথচ প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদকাল শেষ হয়েছে চলতি বছরের জুনে। সর্বশেষ হাসপাতালের প্রস্তাবিত স্থানে মূল ভবন নির্মাণের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় আবাসিক ভবনের জন্য বিভাগীয় পরিচালকের (স্বাস্থ্য) কার্যালয়ের পরিত্যক্ত স্থান নির্ধারণ করে পরিকল্পনা পাঠানো হয়েছে মন্ত্রণালয়ে। 

গণপূর্ত অধিদপ্তর চট্টগ্রাম-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী রাহুল গুহ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "চট্টগ্রামে একসঙ্গে দুই একর জমি পাওয়া কঠিন বিষয়। এজন্য শুরু থেকেই শিশু হাসপাতালের জমি নির্ধারণ নিয়ে জটিলতা ছিল। বাকলিয়ার ওই নির্ধারিত স্থানে সিডিএর মহাপরিকল্পনার আওতায় বাস্তবায়নাধীন কর্ণফুলী রিভারফ্রন্ট রোড এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের আওতাধীন শাহ আমানত ব্রিজ সংযোগ সড়ক রয়েছে। ফলে দুই একর জমি থেকে প্রায় শূন্য দশমিক ৫৪ একর বাদ পড়ে যায়। এতে করে পূর্ণাঙ্গ একটি শিশু হাসপাতাল ও যাবতীয় অবকাঠামো নির্মাণ সম্ভব নয়।

বিভাগীয় পরিচালকের (স্বাস্থ্য) কার্যালয়ের জমিতে নার্সেস ডরমেটরি, ডক্টরস ডরমেটরি, এসেনসিয়াল স্টাফ ডরমেটরিসহ আবাসিক ভবনগুলো সেখানে নির্মাণের প্রস্তাবসহ একটি নকশা স্থাপত্য অধিদপ্তর থেকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিলে এরপর প্রক্রিয়া শুরু হবে। ভূমি অধিগ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসন থেকে ব্যয়ের বিবরণ চাওয়া হবে। এছাড়া নির্মাণ ব্যয় তখন হিসাব করা হবে।"

চিকিৎসা সেবার জন্য বৃহত্তর চট্টগ্রাম ছাড়াও ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লার মানুষ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে আসেন। এছাড়া চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালেও চিকিৎসার জন্য রোগীরা নির্ভর করেন। এই দুটি সরকারি হাসপাতালে পৃথক শিশু ওয়ার্ড থাকলেও চট্টগ্রামে কোন বিশেষায়িত শিশু হাসপাতাল নেই। ফলে হাসপাতাল দুটির সক্ষমতার কয়েকগুণ রোগী সেবা দিতে হয়।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান টিবিএসকে বলেন, "আমাদের নবজাতক ওয়ার্ডে অনুমোদন রয়েছে ৩২ শয্যার। রোগীদের চাপের কারণে অতিরিক্ত শয্যা সংযুক্ত করে ১০০ রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু বিপরীতে এখানে দৈনিক গড়ে ২০০ এর বেশি নবজাতক চিকিৎসা সেবা নেয়। আর শিশু ওয়ার্ডে ১৭ শয্যার অনুমোদন থাকলেও ২৭৩ রোগীকে চিকিৎসা দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। অথচ বিপরীতে দৈনিক গড়ে পাঁচ শতাধিক শিশু চিকিৎসা নেয়।"

চমেক হাসপাতাল ছাড়াও আরেক সরকারি প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ৩০ শয্যার শিশু ওয়ার্ড রয়েছে। এখানে গড়ে দৈনিক শতাধিক রোগী চিকিৎসা নেয়।

জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্যমতে, শিশু স্বাস্থ্য সেবা দোরগোড়ায় পৌঁছানোর লক্ষ্যে ২০১৭ সালে মে মাসে চট্টগ্রাম বিভাগীয় শহরে ২০০ শয্যার বিশেষায়িত শিশু হাসপাতাল নির্মাণের অনুমোদন দেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ফিজিক্যাল ফ্যাসিলিটিজ ডেভেলপমেন্ট (পিএফডি) শীর্ষক অপারেশনাল প্ল্যানের আওতায় প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মেয়াদকাল ধরা হয় ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত। শুরুতে হাসপাতাল নির্মাণে ভূমি অধিগ্রহণের জন্য ৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। অনেক খোঁজাখুঁজির পর বাকলিয়ায় ২ একর জমি নির্ধারণ করে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায় জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়। এর প্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের ১৩ নভেম্বর স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের নির্মাণ অধিশাখা প্রশাসনিক অনুমোদন দেয়। এরপর ওই জমিতে স্থাপনা নির্মাণের জন্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) অনাপত্তিপত্রের আবেদন করলে বাধে বিপত্তি। ওই জমির একটি অংশে সিডিএর মহাপরিকল্পনার আওতায় কর্ণফুলী রিভারফ্রন্ট রোড এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের আওতাধীন শাহ আমানত ব্রিজ কানেক্টিং রোডের প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন। এজন্য নির্ধারিত জমির শূন্য দশমিক ৫৪ একর অংশ বাদ দিয়ে ১ দশমিক ৪৬ একর জমিতে স্থাপনা নির্মাণের জন্য ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে অনাপত্তিপত্র প্রদান করে সিডিএ। প্রয়োজনীয় জমির প্রায় এক-চতুর্থাংশ কমে যাওয়ায় হাসপাতালের অবকাঠামো নির্মাণসহ প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে শঙ্কা দেখা দেয়। এই সমস্যা সংকট নিরসনে গত দুই বছরে বেশ কয়েকদফা সভা করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

সর্বশেষ গত ৬ সেপ্টেম্বর মূল হাসপাতাল ভবন বাকলিয়ার ওই নির্ধারিত জমিতে নির্মাণের পাশাপাশি নগরীর লালদীঘি এলাকায় অবস্থিত চট্টগ্রামের বিভাগীয় পরিচালকের (স্বাস্থ্য) কার্যালয়ের পরিত্যক্ত শূন্য দশমিক ৫৯ একর জমিতে হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও স্টাফদের জন্য দুটি ভবন নির্মাণের প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াস চৌধুরী দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "চট্টগ্রামে দুই একরের মতো এতো জমি একসঙ্গে পাওয়া যায়নি। তাই বাকলিয়ার ওই জমিতে কীভাবে কী করা যায়, এসব বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। এরপর এটি অনুমোদন হবে কিনা, তা মন্ত্রণালয় তথা সরকারের সিদ্ধান্ত।"

চট্টগ্রামের বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা‌. মো. সাখাওয়াত উল্যাহ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "যেহেতু মেয়াদের মধ্যে কোন অর্থ ব্যয় হয়নি। তাই এটি বাতিল হওয়ার সম্ভবনা নেই। হাসপাতাল নির্মাণের প্রস্তাবনাটি পুনরায় মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। আশা করছি, পর্যালোচনার পর দ্রুত অনুমোদন পাবে।"

 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.