বিএনপির নেতাকর্মীরা লাঠি হাতে, বিশৃঙ্খলা না করার হুঁশিয়ারি আওয়ামী লীগের

বাংলাদেশ

21 September, 2022, 10:00 am
Last modified: 21 September, 2022, 11:06 am
১১ থেকে ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাজধানীর ১৬টি স্থানে সমাবেশ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি।

দলের তিন নেতাকে হত্যা, সারাদেশের বিভিন্ন স্থানে সমাবেশে হামলা ও তেল-গ্যাস-নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে মঙ্গলবারও রাজধানীতে লাঠি, স্টাম্প হাতে জনসভা করেছে বিএনপি।  

মঙ্গলবার খিলগাঁও জোড়পুকুর খেলার মাঠে বেলা তিনটায় জনসভা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও পৌনে দুইটা থেকেই বাশেঁর লাঠি, বাংলাদেশের পতাকা টাঙিয়ে সমাবেশস্থলে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে জড়ো হতে থাকে বিএনপির নেতাকর্মীরা।

এর আগে গত ১৮ সেপ্টেম্বর পল্টনের সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, "রাজধানীর সুবজবাগে বিএনপির সমাবেশ আছে। এটা আমার এলাকা। সেখানে মিটিং করার জন্য অনুমতি চেয়েছি। অনুমতি না দিলেও মিটিং হবে। অনুমতি দিলে এক জায়গায় হবে। অনুমতি না দিলে একশ জায়গা হবে। যুদ্ধ করতে চাইলে ঘোষণা দেন, আমরা যুদ্ধ করতেও রাজি আছি।"

গত রবিবার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে রাজধানীর নয়াপল্টনে প্রথম দেখা যায় লাঠি, স্টাম্প হাতে বিএনপির নেতাকর্মীদের, তারপর সোমবারও মহাখালীতে লাঠি হাতে বিপুল সংখ্যক বিএনপির নেতাকর্মীকে কর্মসূচিতে দেখা যায়।

১১ থেকে ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাজধানীর ১৬টি স্থানে সমাবেশ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি।

ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে গতকাল ১০ নম্বর স্থানে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর আগে পল্লবী, উত্তরা ও বনানীতে বিএনপির চলমান কর্মসূচিতে বাধা ও হামলার ঘটনা ঘটেছে। ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের হামলায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল এবং ‍কুমিল্লায় দলের ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলুসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।

বিএনপির নেতাকর্মীরা বলছেন, লাঠি-বাঁশ হাতে সমাবেশে আসা কোন দলীয় সিদ্ধান্ত নয়, এটি নিজেদের আত্মরক্ষার স্বার্থে। রাজধানীর উত্তরা ও মিরপুর, পল্লবী এবং বনানীতে সমাবেশে ও মোমবাতি প্রজ্বালন কর্মসূচিতে হামলার পর থেকে সর্তকতা অবলম্বন করে আসছেন তারা।  

সে কারণে গত দুই সমাবেশে (১৮ সেপ্টেম্বর, পল্টন ও ১৯ সেপ্টেম্বর, মহাখালী) লাঠিতে করে পতাকা টানিয়ে সমাবেশে আসেন নেতাকর্মীরা। তারই ধারাবাহিকতায় খিলগাঁওয়ের সমাবেশেও নেতাকর্মীরা একই পন্থা অবলম্বন করেছেন। তবে কেউ হামলা না করলে নেতাকর্মীদের আগ বাড়িয়ে বা কোনো উসকানিতে না পড়ার নির্দেশনা দেওয়া আছে বলে জানিয়েছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। তবে কেউ হামলা করতে এলে পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তোলারও নির্দেশনা দেওয়া আছে। এছাড়াও গতকালের সমাবেশে বড় জমায়েতের প্রস্তুতি ও নির্দেশনা আগ থেকেই ছিল বলে জানান নেতাকর্মীরা।

সেপ্টেম্বর মাসের শুরু থেকেই কুমিল্লা, কিশোরগঞ্জ, ঝিনাইদহ, পটুয়াখালী ইত্যাদি এলাকায় বিএনপিকে লাঠি হাতে দেখা যায়। নারায়ণগঞ্জ, রংপুর, ফরিদপুর, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ ও আওয়ামী লীগের সাথে বিএনপির নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়।

বিশৃঙ্খলা করলে শেখ হাসিনা রেহাই দেবেন না: ওবায়দুল কাদের 

বিএনপির উদ্দেশে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, "দুই দলীয় জগাখিচুড়ি জোট গতবারও ছিল। তর্জনগর্জনই সার আপনাদের। তাই লাফালাফি করবেন না, বাড়াবাড়ি করবেন না। আমাদের নেতাদেরও (আওয়ামীলীগের) বলব, বাড়াবাড়ি করবেন না। বাড়াবাড়ি করলে কেউ নেতা হতে পারবেন না, কেউ এমপি হতে পারবেন না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলে এসেছি বিশৃঙ্খলা যারা করবে, ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনার যারা ক্ষতি করবে, শেখ হাসিনা তাদের রেহাই দেবেন না।"  

বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে সুদিন আসবে উল্লেখ করে কাদের বলেন, "সারাবিশ্বে জ্বালানির দাম বেড়েছে, ইউক্রেন যুদ্ধ আরও বেড়েছে। জনগণকে বলব, আপনারা বঙ্গবন্ধুর কন্যার প্রতি বারবার আস্থা রেখেছেন, আবারও আস্থা রাখুন।"

কথা একটাই, আমরা আর শেখ হাসিনাকে দেখতে চাই না: ফখরুল

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, "কথা বেশি নাই, কথা একটাই—আমরা কি আর শেখ হাসিনাকে দেখতে চাই? যারা আমাদের স্বাধীনতার আশা-আকাঙ্ক্ষা ধ্বংস করে দিয়েছে, যারা আমাদের সন্তানদের হত্যা করেছে, যারা আমাদের রুটি-রুজি বন্ধ করে দিয়েছে, যারা কৃষক-শ্রমিক-মেহনতি মানুষের পেটের ভাত কেড়ে নিয়েছে, আমরা কি সেই সরকারকে আর দেখতে চাই!"

আওয়ামী লীগের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন প্রসঙ্গে বিবিসিকে দেয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য 'হাস্যকর' বলে উল্লেখ করেছেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, "শেখ হাসিনার কথা শুনে এখন ঘোড়াও হাসে, শেখ হাসিনা ভুয়া। তিনি জনগণ থেকে অনেক দূরে সরে গেছেন। জনগণ তাদের সাথে নেই।"

ফখরুল বলেন, "এই সরকার আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। আমাদের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিয়েছে। বিভিন্ন মেগা প্রজেক্টের নাম করে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে।"

নেতাকর্মীদের উদ্দেশে ফখরুল বলেন, "এখন আর কথা বলার সময় নেই। কাজ করতে হবে। কাজ এখন একটাই, সমগ্র বাংলাদেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। কারণ এ সরকার জোর করে ক্ষমতা দখল করে আছে।" 
 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.