রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বাধা দিতে আঞ্চলিক সম্প্রীতি নষ্ট করছে মিয়ানমার: ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব

বাংলাদেশ

টিবিএস রিপোর্ট
20 September, 2022, 03:00 pm
Last modified: 20 September, 2022, 05:10 pm
“মিয়ানমারের উস্কানিতে বাংলাদেশ পা দেবে না,” বলেন ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মোঃ খোরশেদ আলম।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে মিয়ানমার আঞ্চলিক সম্প্রীতি নষ্ট করছে বলে মন্তব্য করেছেন ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মোঃ খোরশেদ আলম।

আজ মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় ঢাকায় অবস্থানরত কূটনীতিকদের (আসিয়ান কূটনীতিকদের ছাড়া) সঙ্গে বৈঠকে তিনি এ মন্তব্য করেন।

মিয়ানমারের সঙ্গে চলমান সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশের উদ্বেগ জানাতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এই ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয়।

প্রায় ৩০ মিনিট ধরে চলে ব্রিফিং। 

শান্তি বজায় রেখে মিয়ানমারের ফাঁদে পা না দেওয়ায় বাংলাদেশের অবস্থানের প্রশংসা করেন উপস্থিত কূটনীতিকরা।

রাষ্ট্রদূতরা বাংলাদেশের উদ্বেগের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছেন এবং এটি তাদের নিজ নিজ রাজধানীতে যথাযথভাবে পৌঁছে দেওয়ার ব্যাপারেও নিশ্চয়তা দিয়েছেন। 

তবে চীন, রাশিয়া ও ভারতের কোনো প্রতিনিধি আলোচনায় অংশ নেননি।

ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব বলেন, "রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত ও বিলম্বিত করতেই মিয়ানমার ইচ্ছাকৃতভাবে আঞ্চলিক সম্প্রীতি নষ্ট করছে। তারা পরিস্থিতির সুযোগ নিতে চায়।"

"মিয়ানমারের উস্কানিতে বাংলাদেশ পা দেবে না," যোগ করেন ভারপ্রাপ্ত সচিব।

বাংলাদেশে মর্টার শেল নিক্ষেপের জন্য মিয়ানমার আরাকান আর্মি ও এআরএসএকে দায়ী করছে, এমন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব বলেন, মিয়ানমারের পক্ষ থেকে সবসময়ই একই দাবি করা হয়। 

তিনি আরও বলেন, "আমরা তাদের (কূটনীতিকদের) সাহায্য চেয়েছি, যাতে মিয়ানমার এই অঞ্চলে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির সুযোগ নিতে না পারে।"

এর আগে, গতকাল (১৯ সেপ্টেম্বর) ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মোঃ খোরশেদ আলম দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মিশন প্রধানদের ব্রিফ করেন এবং বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করেন।

ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব সম্প্রতি মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে মর্টার শেল নিক্ষেপ ও বিস্ফোরণের ঘটনা, নির্বিচারে বিমান থেকে গুলিবর্ষণ, মানুষের প্রাণহানি ও গুরুতর জখম হওয়া, সীমান্তবর্তী এলাকায় জনগণের সম্পত্তি ও জীবিকার ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে বাংলাদেশের গভীর উদ্বেগের কথা তুলে ধরেন বিদেশি কূটনীতিকদের কাছে।

মিয়ানমারের প্রতিনিধিত্বকারী কোনো কূটনীতিক ব্রিফিংকালে উপস্থিত ছিলেন না, তবে অন্যান্য আসিয়ান দেশ- ব্রুনাই, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া, লাওস, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড এবং ভিয়েতনামের কূটনীতিকরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

এ সময় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া শাখা) মোঃ নাজমুল হুদাও উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে, রোববার (১৮ সেপ্টেম্বর) প্রয়োজন সাপেক্ষে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এবং বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডকে 'শক্তিশালীকরণ' সহ 'উচ্চ সতর্কতায়' থাকার নির্দেশ দেয় সরকার।

একই দিনে, ঢাকায় নিযুক্ত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত অং কিয়াও মোকে এক মাসে চতুর্থবারের মতো তলব করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

শনিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, সরকার মিয়ানমারের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ ও কূটনৈতিকভাবে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছে, তবে প্রয়োজনবোধে সীমান্তে মর্টার ছোড়ার বিষয়ে জাতিসংঘে অভিযোগ জানানো হবে।

শুক্রবার (১৬ সেপ্টেম্বর) রাতে বান্দরবানের তুমব্রুতে আন্তর্জাতিক সীমান্তের কাছাকাছি জিরো পয়েন্ট রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর ছোড়া মর্টার শেল বিস্ফোরণে ১৭ বছর বয়সী রোহিঙ্গা মোহাম্মদ ইকবাল নিহত ও পাঁচজন আহত হন।

নিহত ও আহতরা সবাই 'নো ম্যানস ল্যান্ডের' বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের নিকটতম জিরো পয়েন্ট রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা।

রাত ৮টার দিকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পরপর চারটি মর্টার শেল পড়ে।

এছাড়া, একই দিন বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে আদিবাসী যুবক অঙ্গনথোয়াই তঞ্চঙ্গ্যা গুরুতর আহত হন।

স্থানীয়রা জানান, মিয়ানমার সেনাবাহিনী ওই এলাকায় মাইন পুঁতে রেখেছিল।

আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশের ভূখণ্ডে মিয়ানমার সেনাবাহিনী মোট ১২টি মর্টার শেল নিক্ষেপ করেছে। 
 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.