প্রশাসনের বাধায় ভেস্তে গেল বস্তিবাসীর প্রেস ব্রিফিং, প্রেসক্লাব থেকে আটক ৯

বাংলাদেশ

টিবিএস রিপোর্ট 
11 September, 2022, 07:20 pm
Last modified: 11 September, 2022, 10:26 pm
চট্টগ্রাম শহর লাগোয়া সীতাকুণ্ড উপজেলার ৮৫০ একর জমিতে গড়ে ওঠা ছিন্নমূল বস্তিতে প্রায় এক লাখ মানুষের বসবাস। যাদের বেশিরভাগই জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে অভ্যন্তরীণ অভিবাসনে বাধ্য হওয়া জনগোষ্ঠী...

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের জঙ্গল সালিমপুরের আলী নগর এলাকায় উচ্ছেদ ও পুলিশের গুলির ঘটনার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করতে এসে আটক হলেন ৯ বস্তিবাসী।

রোববার দুপুর ৩টায় পূর্বঘোষিত প্রেস ব্রিফিং করতে বস্তিবাসীরা চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে আসেন। এসময় জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট তৌহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে কোতোয়ালী ও সীতাকুন্ড থানার একদল পুলিশ এসে তাদের আটক করে কোতোয়ালী থানায় হস্তান্তর করে।

এর আগে, বৃহস্পতিবার জঙ্গল সালিমপুরের আলী নগর-ছিন্নমূল বস্তি এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান চালাতে গিয়ে বস্তিবাসীদের বাধার মুখে পড়ে অভিযানকারী দল। পরে পুলিশের রাবার বুলেট ও গুলির আঘাতে আহত হন কমপক্ষে  ৩০ জন। এ ঘটনার প্রতিবাদে, আলী নগরের বাসিন্দারা প্রেস ব্রিফিংয়ের ঘোষণা দেয়। তবে প্রেস ব্রিফিং শুরুর আগেই প্রেসক্লাব এলাকায় অবস্থান নেয় জেলা প্রশাসন ও পুলিশ সদস্যরা। নির্ধারিত সময়ের কিছু পর, বস্তিবাসীরা ব্যানার নিয়ে প্রেস ক্লাবের নিচে আসলে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট তৌহিদুল ইসলাম ও আব্দুল্লাহ আল মামুনের নেতৃত্বে পুলিশ সদস্যরা ১১ জনকে আটক করে তাদের কাছ থেকে ব্যানার কেড়ে নেয় এবং মোবাইল জব্দ করে।

দীর্ঘ দুই ঘন্টারও বেশি সময় তাদের মোবাইল তল্লাশি ও যাচাই-বাছাই করার পর দুই জনকে ছেড়ে দিয়ে বাকিদের কোতোয়ালী থানা পুলিশের হাতে সোপর্দ করেন জেলা প্রশাসনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলাম।

এসময় তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, 'এখানে আটক সবাই আলী নগরের বাসিন্দা। তারা যোগসাজসে সরকার-বিরোধী ষড়যন্ত্র করছিল। প্রত্যেকের কাছ থেকে জব্দ করা মোবাইল ফোনে হোয়াটস অ্যাপে যোগাযোগ করে ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে।'

সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, 'আটককৃতদের কোতোয়ালী থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে, সেখান থেকে সীতাকুণ্ড থানায় হস্তান্তর করা হবে। সীতাকুণ্ডের জঙ্গল সালিমপুরে পুলিশের সাথে সংঘর্ষের ঘটনা ও সরকারি কাজে বাঁধাদানের ঘটনায় তাদের গ্রেফতার দেখানো হবে।'

এর আগে শনিবার রাতে ঢাকা যাওয়ার পথে জঙ্গল সালিমপুর ছিন্নমূল বস্তির ৬১ বাসিন্দাকে আটক করে পুলিশ। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সীতাকুণ্ড পৌর সদরের বাইপাস এলাকা থেকে যাত্রীবাহী দুটি বাস আটক করে তাদের থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। পরে যাচাই-বাছাই শেষে ২২ জনকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়। বিষয়টি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানিয়েছেন সীতাকুণ্ড থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সুমন বণিক।

ছবি: টিবিএস

জঙ্গল সালিমপুর ছিন্নমূল বস্তির বাসিন্দা মিজানুর রহমান টিবিএসকে বলেন, 'বৃহস্পতিবার জঙ্গল সালিমপুরের আলী নগর-ছিন্নমূল বস্তি এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান চালাতে গিয়ে পুলিশের রাবার বুলেটের আঘাতে প্রায় অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হন। এর আগে প্রায় একমাস জঙ্গল সালিমপুরকে বিদু্ৎ বিচ্ছিন্ন রাখে স্থানীয় প্রশাসন। খাবার ও জ্বালানিবাহী গাড়ি প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছিল না সেখানে। একারণে আমরা মানবেতর জীবনযাপন করছিলাম। এসব বিষয় প্রধানমন্ত্রীকে জানাতে দুটি বাসে বস্তিবাসীরা ঢাকা যাওয়ার জন্য রওনা হয়েছিল। কিন্তু, যাওয়ার পথে সীতাকুণ্ড পৌর এলাকায় বাস দুটি জব্দ করে যাত্রীদের আটক করে নিয়ে যাওয়া হয়। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে ২২ জনকে সাত থেকে আটটি মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে থানা সূত্রে জেনেছি।'

এদিকে জঙ্গল সালিমপুর ছিন্নমূল বস্তির বাসিন্দাদের একটি দল ঢাকায় পুলিশের বাঁধা এড়িয়ে ঢাকা পৌঁছায়। সেখানে রোববার দুপুরে ঢাকা প্রেসক্লাবে আয়েজিত সংবাদ সম্মেলন থেকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে ছিন্নমূল বস্তির ২৪ হাজার পরিবারকে পুনর্বাসনের আবেদন জানান তারা। পাশাপাশি সংবাদ সম্মেলনে, জেলা প্রশাসন হাইকোর্টের আদেশ অমান্য করে উচ্ছেদ অভিযান চালাচ্ছে ও পুলিশ বিনা উস্কানিতে বস্তিবাসীর উপর গুলি চালিয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়।

চট্টগ্রাম শহর লাগোয়া সীতাকুণ্ড উপজেলার ৮৫০ একর জমিতে গড়ে ওঠা ছিন্নমূল বস্তিতে প্রায় এক লাখ মানুষের বসবাস। যাদের বেশিরভাগই জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে অভ্যন্তরীণ অভিবাসনে বাধ্য হওয়া জনগোষ্ঠী। তারা এখানে রয়েছে ২০০৪ সাল থেকেই। সম্প্রতি চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন এই বিপুল বস্তিবাসীদের সরিয়ে সেখানে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার, নভোথিয়েটার, স্পোর্টস ভিলেজ হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল, জাতীয় তথ্যকেন্দ্র ও নাইট সাফারি পার্কসহ একাধিক সরকারি অফিস নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছে।

এরই অংশ হিসেবে ২২ জুলাই থেকে ২৩ আগষ্ট পর্যন্ত নয়টি অভিযানে- জঙ্গল সালিমপুরের ১৭০টি স্থাপনা উচ্ছেদ করে জেলা প্রশাসন। ২৪ জুলাই জঙ্গল সালিমপুরের বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করা হয়। ২৩ আগষ্ট ভূমির স্থায়ী বন্দোবস্ত ও পানি-বিদ্যুতের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহের দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ করে জঙ্গল সালিমপুরের বাসিন্দারা। এসময় পুলিশের সংঘর্ষের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। ওই ঘটনায় প্রশাসনের দায়ের করা ছয়টি মামলায় অন্তত এক হাজার স্থানীয় বাসিন্দাকে আসামি করা হয়।

সর্বশেষ বৃহস্পতিবার জঙ্গল সালিমপুরের আলী নগর-ছিন্নমূল বস্তি এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান চালাতে গিয়ে বস্তিবাসীদের বাধার মুখে পড়ে অভিযানকারী দল। এসময় পুলিশের রাবার বুলেট ও গুলির আঘাতে কমপক্ষে ৩০ জন আহত হন। এ ঘটনায় পুলিশ নুতন দুটি মামলা দায়ের করে। শুক্রবার গুলিতে আহত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন পাঁচজনকে ওইসব মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। শনিবার রাতে আটক ৬১ জনের মধ্যে ২২ জনকে পূর্বের ছয়টিসহ মোট আটটি মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। পরে বিকেলে প্রেসক্লাব থেকে সংবাদ সম্মেলন করতে আসা ৯ বস্তিবাসীকে আটক করা হয়।

এদিকে বিগত কয়েকদিনের মতোন আজও বস্তিবাসীদের এলাকা ছেড়ে যেতে মাইকিং ও লিফলেট বিলি করছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন।
 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.