দিনাজপুরের দাইনুর সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে স্কুলছাত্র নিহত

বাংলাদেশ

দিনাজপুর প্রতিনিধি
08 September, 2022, 08:50 pm
Last modified: 08 September, 2022, 08:56 pm
ওসি তানভিরুল ইসলাম জানান, রাতে দাইনুর বিওপির ৩১৫ নং পিলারের কাছে গেলে বিএসএফ কয়েকজনকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এতে ঘটনাস্থলেই মিনাজ নিহত হয় ও সাগর গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়। নিহত মিনাজের মরদেহ ওই সীমান্তের কাটাতারের বেড়ার পার্শ্বে তেলিপাড়া নামক এলাকায় ছিল। এ ব্যাপারে বিজিবি-বিএসএফ পর্যায়ে পতাকা বৈঠক শেষে মরদেহ আমাদের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে বিজিবির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।

দিনাজপুরের দাইনুর সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ'র গুলিতে মিনহাজুল ইসলাম ওরফে মিনার বাবু (১৬) নামে এক বাংলাদেশী স্কুলছাত্র নিহত হয়েছে। গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছে আরও একজন এবং একজন নিখোঁজ রয়েছেন।

বুধবার দিবাগত রাত ১১ টার দিকে জেলার সদর উপজেলার দাইনুর সীমান্তে এই ঘটনা ঘটে। বিষয়টি স্বীকার করেছেন দিনাজপুর কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তানভিরুল ইসলাম।

নিহত মিনার বাবু সদর উপজেলার ৯নং আস্করপুর ইউনিয়নের ভিতরপাড়া এলাকার জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে। সে খানপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেনীতে পড়ালেখা করতো।

গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন সাগর (১৯)। তিনি খানপুর এলাকার সালমানের ছেলে। এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত নিখোজ রয়েছেন ওই এলাকার লতিফুল ইসলামের ছেলে এমদাদুল (২৮)।

ওসি জানান, রাতে দাইনুর বিওপির ৩১৫ নং পিলারের কাছে গেলে বিএসএফ কয়েকজনকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এতে ঘটনাস্থলেই মিনাজ নিহত হয় ও সাগর গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়। নিহত মিনাজের মরদেহ ওই সীমান্তের কাটাতারের বেড়ার পার্শ্বে তেলিপাড়া নামক এলাকায় ছিল। এ ব্যাপারে বিজিবি-বিএসএফ পর্যায়ে পতাকা বৈঠক শেষে মরদেহ আমাদের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে বিজিবির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।

এই ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত সাগরকে বিএসএফ তাদের এলাকায় নিয়ে গেছে। পুলিশ জানিয়েছে, মাদক আনাকে কেন্দ্র করে এই গুলি চালিয়েছে বলে বিএসএফ দাবি করেছে।

যদিও স্থানীয়রা জানিয়েছে, তারা শুটকি আনার জন্য ওই সীমান্ত এলাকার কাটাতারের বেড়া পার হয়ে ভারতে গিয়েছিল। এই ঘটনায় এমদাদুল নিখোজ রয়েছেন। পরিবারের দাবি- মিনার বাবু সীমান্ত সংক্রান্ত কোন কাজ বা মালামাল আনা-নেয়ার সাথে জড়িত ছিল না। তাকে অজ্ঞাত কেউ রাতে ডেকে নিয়ে গিয়ে এই কাজ করিয়েছে। রাত থেকেই সে নিখোঁজ ছিল। জড়িতদের বিচারও দাবি করেছেন পরিবার ও স্বজনরা।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, রাত ১১টার দিকে তারা কয়েকটি গুলির শব্দ পেয়েছেন। যদিও বিষয়টিতে তারা তেমন গুরুত্ব দেননি। সকালে নিহতের মরদেহ পড়ে থাকার সংবাদ তারা পান। পরে তার পড়নের কাপড়, বয়সসহ সবকিছু মিলিয়ে মিনার বাবু বলে নিশ্চিত হয়েছেন।  

এদিকে একটি সূত্র জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার দুপুরে নিহত মিনার বাবুর মরদেহ বিএসএফ ভারতের গঙ্গারামপুর থানায় নিয়ে যায়। ভারতেই নিহতের মরদেহের ময়নাতদন্ত শেষে আইনী প্রক্রিয়া গ্রহণ করে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে হস্তান্তর করা হবে।

তবে বিজিবির পক্ষ থেকে সংবাদকর্মীদের কোন তথ্য দেয়া হয়নি। ঘটনার বিস্তারিত এবং পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে দিনাজপুর-২৯ বিজিবি'র অধিনায়ককে মোবাইলে বারবার ফোন দেয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি। ফোন রিসিভ করেননি বিজিবি'র দিনাজপুর সেক্টর কমান্ডারও।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ৯নং আস্করপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান জিয়া। তিনি বলেন, ঘটনাটি কীভাবে ঘটেছে তা আমার বিস্তারিত জানা নাই। তবে বিএসএফ'র গুলিতে একজন নিহত হওয়ার বিষয়টি সঠিক। 

নিহতের বড় ভাই মিজানুর রহমান বলেন, সে খানপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণিতে পড়ালেখা করে। পড়ালেখার পাশাপাশি রংমিস্ত্রির কাজ করে। এরপর কে বা কারা তাকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে আসে। পরে আর বাড়িতে ফেরেনি। সকালে তাকে গুলি করে বিএসএফ হত্যা করেছে বলে শুনতে পাই।

নিহতের বাবা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, কাজ করে বাড়িতে সাইকেল রেখে চলে যায়। মনে করেছি যে মিস্ত্রির সাথে আছে। পরে রাত ১২টা বেজে গেলেও আর ফিরে আসেনি। তার ব্যবহৃত মোবাইলটিও বন্ধ ছিল। রাতটা ওভাবেই যায়, পরের দিন সকালে খবর পাই যে আমার ছেলেকে গুলি করে হত্যা করেছে। ও কার সাথে গেছে, কেমন করে গেছে এটা আমার জানা নাই। 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.