রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে সমঝোতা হলে আগামী নির্বাচনে ভোটগ্রহণ ব্যালটে হবে: সিইসি

বাংলাদেশ

টিবিএস রিপোর্ট
07 September, 2022, 07:45 pm
Last modified: 08 September, 2022, 02:06 pm
গত ২৩ আগস্ট আগামী জাতীয় নির্বাচনে সর্বোচ্চ ১৫০ আসনে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেয় নির্বাচন কমিশন।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, দেশের প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলগুলি যদি সমঝোতায় আসতে পারলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যালটে ভোটগ্রহণ করা হবে।

বুধবার (৭ সেপ্টেম্বর) নির্বাচন ভবনে উপস্থিত সাংবাদিকদের সিইসি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলি যদি ব্যালটের মাধ্যমে ভোট গ্রহণে ঐক্যমত্যে আসতে পারে, তাহলে নির্বাচন কমিশনও সেভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠান করবে'। 

'এছাড়া সরকার যদি অর্থনৈতিক সংকটের কারণে প্রয়োজনীয় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) কেনার বরাদ্দ না দেয়, তাহলেও ইভিএম দিয়ে ভোটগ্রহণ করা হবে না'- যোগ করেন তিনি। 

গত ২৩ আগস্ট আগামী জাতীয় নির্বাচনে সর্বোচ্চ ১৫০ আসনে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেয় নির্বাচন কমিশন। এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানায় ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। তবে বিরোধী দলগুলো প্রত্যাখ্যান করে। তাদের দাবি, আ. লীগের রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নে কমিশন এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের সাথে আলোচনা করেন সিইসি। এসময় তিনি বলেন, কারো দ্বারা প্রভাবিত হয়ে নয়, বরং কমিশন নিজে থেকেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

গত রোববার (৪ সেপ্টেম্বর) কমিশন জানায়, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অন্তত ৭০টি আসনে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ভোটকেন্দ্রে যেকোনো প্রকার অনিয়ম ঠেকাতে সকল কেন্দ্রে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা স্থাপন করা হবে।

এরপর এক বিবৃতিতে সর্বোচ্চ ১৫০টি আসনে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্তকে অযৌক্তিক হিসেবে আখ্যা দিয়ে এটি প্রত্যাহারের আহ্বান জানান ৩৯ বিশিষ্ট নাগরিক। 

বিশিষ্ট নাগরিকদের মধ্যে আছেন ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন খান ও আকবর আলি খান, বিচারপতি মো. আবদুল মতিন, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী, সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার প্রমুখ।

ইভিএম ব্যবহারে কমিশনের পদক্ষেপকে অযৌক্তিক বলে অভিহিত করেন তারা। তাছাড়া, চলমান অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে এই ইলেকট্রনিক ডিভাইস আমদানি করতে বৈদেশিক মুদ্রায় প্রায় ৪৫০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করার বিষয়টিও প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়।

অযৌক্তিকতার কারণ সম্পর্কে বিবৃতিতে বলা হয়, প্রযুক্তিগতভাবে ইভিএম একটি 'দুর্বল' যন্ত্র। "এতে 'ভোটার ভেরিফায়েড পেপার অডিট ট্রেইল' (ভিভিপিএটি) নেই। যার ফলে কমিশন ভোটের যে ফলাফল ঘোষণা করবে, তা-ই চূড়ান্ত হিসেবে গ্রহণ করতে হবে এবং এটি পুনর্গণনা বা নিরীক্ষা করার সুযোগ থাকবে না। এ কারণেই কমিশনের গঠন করা কারিগরি উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারম্যান প্রয়াত জামিলুর রেজা চৌধুরী ২০১৮ সালে ইভিএম কেনার সুপারিশে সই করেননি।"

নাগরিক সমাজের এই প্রতিনিধিরা বলেছেন, প্রযুক্তির কারণে ইভিএম ব্যবহার করে ডিজিটাল জালিয়াতিও করা সম্ভব। বায়োমেট্রিক-ভিত্তিক ইভিএম অনেক ভোটারকেই শনাক্ত করতে পারে না। ফলে কমিশন প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের তাদের আঙুলের ছাপ দিয়ে যন্ত্রটি খুলে দেওয়ার তথা ইভিএমকে ওভাররাইড করার ক্ষমতা দিয়ে থাকে। 

বিশিষ্ট নাগরিকদের বিবৃতির বিষয়ে বুধবার সিইসি বলেন, 'নির্বাচন কমিশনে এসে ইভিএম- এর ত্রুটির বিষয়গুলি তাদের তুলে ধরা উচিত'। 

উল্লেখ্য, বর্তমানে বিশ্বের মাত্র ১৩টি দেশ তাদের সব নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করছে।
 
 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.