এক দিনেই ৫ ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু, পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হওয়ার আশঙ্কা

বাংলাদেশ

07 September, 2022, 11:55 am
Last modified: 07 September, 2022, 12:01 pm
বিশেষজ্ঞরা বলছেন এ মাসে ডেঙ্গু সংক্রমণ আরও বেড়ে যাওয়ার সম্ভবাবনা রয়েছে। এসময়ে ডেঙ্গু সংক্রমণ রোধে সিটি করপোরেশনকে হটস্পট ম্যানেজমেন্টের দিকে গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
ইলাস্ট্রেশন: টিবিএস

দেশে একদিনে ৫ জন ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়েছে, যা এবছর একদিনে সর্বোচ্চ। এছাড়া একদিনে সর্বোচ্চ ২৮৪ জন ডেঙ্গু রোগী দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন এ মাসে ডেঙ্গু সংক্রমণ আরও বেড়ে যাওয়ার সম্ভবাবনা রয়েছে। এসময়ে ডেঙ্গু সংক্রমণ রোধে সিটি করপোরেশনকে হটস্পট ম্যানেজমেন্টের দিকে গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

যদিও ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন বলছে, ঢাকাতে ডেঙ্গুর সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশে ডেঙ্গুর সংক্রমণ বেড়েছে এবং দেশে থেমে থেমে বৃষ্টি হওয়ায় এসময় ডেঙ্গুর সংক্রমণ বাড়লেও তা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছে বলে দাবি দুই সিটির।

এ বছর ঢাকায় প্রাক‌–বর্ষা জরিপে গত বছরের তুলনায় ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশার প্রকোপ বেশি দেখা গিয়েছিল। তা থেকে জনস্বাস্থ্যবিদেরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন, এ বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়বে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ডেঙ্গুতে এ বছর সর্বোচ্চ ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে আগস্ট মাসে। সেখানে সেপ্টেম্বরের ৬ দিনেই মারা গেছেন ১০ জন।

এ বছর ডেঙ্গুতে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ১৩ জনই ঢাকা মহানগরের বাসিন্দা। আর চট্টগ্রাম বিভাগে মারা গেছেন ১৬ জন, তাঁদের ১৫ জনই কক্সবাজারের। এছাড়া বরিশালে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে।

মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ২৮৪ জন।

রোগীদের মধ্যে ঢাকায় ২২৪ জন এবং ঢাকার বাইরে ৬০ জনের সংক্রমণের খবর পাওয়া গেছে।

সারাদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে এই মুহূর্তে মোট ৮৫০ জন ডেঙ্গু রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

মঙ্গলবার পর্যন্ত এই বছর দেশে ৭,৩৯৭ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত এবং হাসপাতালে ভর্তি হন। এদের মধ্যে ৬,৫১৬  জন সেরে ওঠার পর হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন।

গত ১১ থেকে ২৩ আগস্ট স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালিত বর্ষা জরিপে ডিএনসিসির অধীনে ১৩.৪ শতাংশ বাড়িতে এবং ডিএসসিসির অধীনে ১১.৭৫  শতাংশ বাড়িতে এডিস মশার উপস্থিতি পাওয়া গেছে।

জরিপ অনুযায়ী, ডিএনসিসির অধীনে ৪৫.২ শতাংশ বহুতল ভবন এবং ২৪.৮ শতাংশ নির্মাণাধীন ভবনে এডিস মশা ছিল।

এছাড়া ২০ দশমিক ৩ শতাংশ স্বতন্ত্র বাড়ি, ৬ দশমিক ৮ শতাংশ বস্তি বা আধা-পাকা বাড়ি এবং ২ দশমিক ৮ শতাংশ খালি প্লটে এডিস মশা পাওয়া গেছে।

ডিএসসিসি এলাকায় ৩৩ শতাংশ বহুতল ভবন, ২৭ শতাংশ স্বতন্ত্র বাড়ি, ১২ দশমিক ১ শতাংশ বস্তি এবং ৫ দশমিক ১ শতাংশ খালি প্লটে এডিস মশা দেখা গেছে।

ডিএনসিসির ৪০টি ওয়ার্ডের ১,৩১৯টি পরিবার এবং ৫৮টি ডিএসসিসি ওয়ার্ডের ১,৮৩০টি পরিবারে গবেষণাটি পরিচালিত হয়েছে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এনটোমলজিস্ট অধ্যাপক কবিরুল বাশার দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, কর্তৃপক্ষ যদি হটস্পট (মশার প্রজননস্থল) ব্যবস্থাপনা করতে ব্যর্থ হয় তাহলে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকবে।

তিনি আরও বলেন, 'বর্ষায় পাওয়া এডিস মশার ঘনত্ব প্রাক-বর্ষা জরিপে পাওয়া ঘনত্বের দ্বিগুণেরও বেশি।'

'সেপ্টেম্বর মাস জুড়েই ডেঙ্গুর সংক্রমণ থাকবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে সম্প্রতি যে সার্ভে পরিচালনা করেছি তাতে গত বছরের চেয়ে এবছর লার্ভার পরিমাণ বেশি পেয়েছি,' বলেন তিনি। খাইরুল বাশার নিজেও এই গবেষণায় জড়িত ছিলেন।

বর্তমানে কী ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে সে সম্পর্কে তিনি বলেন, সিটি করপোরেশনকে এই পুরো মাস হটস্পট ম্যানেজমেন্ট-এর উপর গুরুত্ব দিতে হবে। যেসব এলাকায় বেশি রোগী পাওয়া যাচ্ছে সেসব এলাকাকে গুরুত্বের প্রথমে রেখে সকাল এবং সন্ধ্যা দুই বেলা কার্যক্রম চালাতে হবে।

দেশের ডেঙ্গু রোগীর সিংহভাগ ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে থাকা সত্ত্বেও তারা দাবি করছেন ঢাকায় ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ফজলে শামসুল কবির টিবিএসকে বলেন, এখন পর্যন্ত ঢাকা দক্ষিণ সিটির ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এবছর দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় ৩ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। দেশের অন্যান্য জায়গার তুলনায় দক্ষিণে সংক্রমণ নিম্নে।

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ জোবায়দুর রহমান জানান, জলাশয় পরিষ্কার ও সঠিকভাবে কীটনাশক ব্যবহারের জন্য তারা ৩০টি নৌকা কিনেছেন।

তিনি বলেন, আমরা এডিস দমনে আমাদের নিয়মিত কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। ওয়াসার পানির মিটারে ট্যাবলেট দিচ্ছি যার ফলে ৩ মাস পানিতে এডিস মশা জন্মাতে পারবে না।

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.