নারায়ণগঞ্জে যুবদল কর্মী শাওন নিহতের মামলায় বিএনপিকে দোষারোপ, ৫ হাজার নেতার বিরুদ্ধে মামলা  

বাংলাদেশ

টিবিএস রিপোর্ট
03 September, 2022, 10:25 am
Last modified: 03 September, 2022, 10:42 am
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত নগরের ডিআইটি বাণিজ্যিক এলাকায় দেড় ঘণ্টা পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীদের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে পথচারী-নারীসহ গুলিবিদ্ধ হয়েছেন ২৬ জন।

নারায়ণগঞ্জে পুলিশ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে গুলিতে যুবদলকর্মী শাওন প্রধান নিহতের ঘটনায় বিএনপিকে দোষারোপ করে মামলা দায়ের করেছে নিহতের ভাই মো. মিলন হোসেন প্রধান। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে হওয়া মামলায় বিএনপি ও তার সহযোগী সংগঠনের পাঁচ হাজার নেতাকর্মীকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

অন্যদিকে মানিকগঞ্জে বিএনপি-পুলিশের মধ্যে সহিংসতায় ২৫০০ জনকে আসামী করে মামলা করেছে পুলিশ।

নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনিসুর রহমান মোল্লা টিবিএসকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। 

নারায়ণগঞ্জ সদর থানায় করা মামলার এজহারে বলা হয়েছে, বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সকালে বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের ৫ হাজারের বেশি নেতা–কর্মী ইটপাটকেল ও লোহার রড, হকি স্টিকসহ অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে দফায় দফায় মিছিল করে। তারা পুলিশের ওপর ইটপাটকেল ছোঁড়ে এবং ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় বলেও উল্লেখ করা হয়। 

শাওন দুপুর পৌনে ১২টার দিকে শহরের ২ নম্বর রেলগেট এলাকার রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন। 

এ সময় বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা ইটপাটকেল ছোঁড়ে, ককটেল বিস্ফোরণ করে ও অবৈধ অস্ত্র নিয়ে পুলিশের ওপর আক্রমণ করতে থাকলে ওই ইটপাটকেলের আঘাত ও অস্ত্রের গুলিতে শাওন মাথায় ও বুকে গুরুতর জখম হয়ে রাস্তায় পড়ে যান। পরে রাস্তায় থাকা লোকজন উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা শাওনকে মৃত ঘোষণা করেন।

এদিকে, শাওনের পরিবারকে চাপ সৃষ্টি করেই বিএনপি ও তার সহযোগী সংগঠনের পাঁচ হাজার নেতাকর্মীকে অভিযুক্ত করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সিনিয়র সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন খান। 

তিনি বলেছেন, "এই সরকার ও এই সরকারের প্রশাসন মিথ্যার ওপর প্রতিষ্ঠিত। তারাই আমাদের ওপর আক্রমণ করল, আবার তারাই আমাদের নামে মামলা করছে। আমাদের শত শত নেতাকর্মীকে আহত করেছে, একজনকে নিহত করেছে আবার হত্যা মামলা করেছে।"

তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তাফা রাসেল। তিনি বলেন, তারা মামলা করেছে, "আমরা মামলা নিয়েছি। এখন কি সেই যুগ আছে যে চাপ প্রয়োগ করে মামলা করা যায়? আমরা কোনো চাপ প্রয়োগ করিনি।"

নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (তদন্ত) আমির খসরুর বলেছেন, "আমরা বিষয়টি তদন্ত করছি। তাছাড়া পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় আরও মামলা হবে। আমাদের কাছে ভিডিও ফুটেজ আছে এবং আমরা প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলব। এরপর তদন্তের মাধ্যমে বলতে পারব শাওন কীভাবে মারা গেছে।"

এদিকে শুক্রবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জে নিহত শাওনের বাড়িতে যান মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। যারা শাওনকে গুলি করে হত্যা করেছে তাদেরকে অবিলম্বে তাদেরকে আইনের আওতায় এনে বিচারের দাবি জানান তিনি।

প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত নগরের ডিআইটি বাণিজ্যিক এলাকায় দেড় ঘণ্টা পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীদের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে পথচারী-নারীসহ গুলিবিদ্ধ হয়েছেন ২৬ জন। পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও লাঠিপেটায় অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন।

মানিকগঞ্জে আড়াই হাজার বিএনপি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা

বৃহস্পতিবার বিএনপির ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনের সময় মানিকগঞ্জে পুলিশের সঙ্গে বিএনপির সংঘর্ষের ঘটনায় বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের আড়াই হাজার নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১ সেপ্টেম্বর) রাতে মানিকগঞ্জ সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুল লিটন বাদী হয়ে মামলাটি করেন। মামলায় ৩৩ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, বাকিদের অজ্ঞাতপরিচয় হিসেবে উল্লেখ করে মামলা দায়ের করা হয়। 

ঘটনাস্থল থেকে তিনজনকে আটক করা হয়েছে। পুলিশ এখনো গ্রেপ্তার অভিযান চালাচ্ছে বলে জানান মানিকগঞ্জ সদর থানার ওসি আব্দুর রউফ সরকার।

বিএনপির ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবাষির্কী উপলক্ষে সেওতা এলাকা থেকে বিএনপির কয়েকশ নেতাকর্মী মিছিল নিয়ে দলীয় কার্যালয়ের সামনে যাওয়ার পথে পুলিশ বাধা দেয়। খালপাড় এলাকায় শহীদ তজু সড়কে যান চলাচল বন্ধ রেখে স্লোগান দেওয়া শুরু করেন তারা। সেখানেই পুলিশের লাঠিচার্জ ও সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়।

মামলায় সদর উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফজলুল হক, যুবদল নেতা সেলিম মোহাম্মদ, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল নেতা রুবেল মাহমুদ, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আজাদ হোসেন খান, জেলা যুবদলের আহ্বায়ক কাজী মোস্তাক হোসেন দিপু, সদস্য-সম্পাদক তুহিনুর রহমান তুহিন, পৌর যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মো. মামলায় আহ্বায়ক রাজীব হাসান খান, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য-সম্পাদক আওলাদ হোসেন, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি রিয়াজুল ইসলাম সজীব, সাধারণ সম্পাদক নুসরাতুল ইসলাম জ্যাকিসহ অন্যদের আসামি করা হয়েছে। 

নেত্রকোনায় বিএনপির ৫০০ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা

নেত্রকোনায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের ৫ শতাধিক নেতাকর্মীকে আসামি করে মামলা করেছে পুলিশ।

বৃহস্পতিবার রাতে নেত্রকোনা মডেল থানার এসআই খন্দকার আল মামুন বাদী হয়ে মামলাটি করেন।

পুলিশ জানায়, বিএনপির ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার দিকে বিভিন্ন এলাকা থেকে দলের নেতাকর্মীরা দলীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে জড়ো হলে শহরের প্রধান সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।

পুলিশ বিএনপি নেতাকর্মীদের রাস্তা থেকে সরে অফিসের ভেতরে যাওয়ার আহ্বান জানালেও তারা সড়কে মিছিল করতে থাকে।

পুলিশ তাদের সমাবেশ চালিয়ে যেতে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে বিএনপি নেতাকর্মীরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে লক্ষ্য করে প্লাস্টিকের চেয়ার ও ইট ছুড়তে থাকে, এতে দুই পুলিশ সদস্য আহত হন। পরে পুলিশ লাঠিচার্জ করে এবং রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

মামলা করবে বিএনপি

যুবদল নেতা শাওনের বড় ভাইকে অস্ত্রের মুখে আটকে রেখে দলের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিতে বাধ্য করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

"আমরা ইতোমধ্যে ভোলায় আমাদের কর্মী নূর-ই-আলম ও আবদুর রহিম হত্যার ঘটনায় মামলা করেছি। নারায়ণগঞ্জে শাওন হত্যার ঘটনায় আমরা অবশ্যই মামলা করব। শুক্রবার মহানগর নাট্যমঞ্চে বিএনপির ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল অভিযোগ করেন, সরকার ২০১৪, ২০১৫ ও ২০১৮ সালের মতো ভয় দেখিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করছে।

শাওনের মৃত্যুতে সারাদেশে জানাজার আয়োজন করেছে বিএনপি

সাম্প্রতিক সময়ে নিহত নেতাকর্মীদের জন্য শুক্রবার রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে গায়েবানা নামাজে জানাজার (জানাজা) আয়োজন করেছে বিএনপি।

নয়া পল্টনে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত কর্মসূচিতে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, "কয়েকদিন আগে ভোলায় পুলিশের গুলিতে আমাদের দুই ভাই এবং গতকাল (বৃহস্পতিবার) নারায়ণগঞ্জে শাওন নিহত হয়েছেন। কিন্তু গতকাকল আমাদের মিছিল ছিল সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ। এটা সরকারের বিরুদ্ধে কোনো কর্মসূচিও ছিল না, এটা ছিল আমাদের দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে একটি সমাবেশ।"

জানাজা শেষে বিএনপি নেতাকর্মীরা কয়েক মিনিট সড়ক অবরোধ করে শাওনের বিচারের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেন।
 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.