লক্ষ্মীপুরে রাজনীতির মাঠ গরম, আ.লীগ-বিএনপির পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি

বাংলাদেশ

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি
29 August, 2022, 03:40 pm
Last modified: 29 August, 2022, 03:48 pm
'আমরা যেখানে যে সময়ে সমাবেশ ডাকি, একই সময়ে আওয়ামী লীগও সমাবেশ দেয়। এর কারণ হচ্ছে, আমরা যেন সমাবেশ না করতে পারি। বিএনপি সমাবেশ ডাকলে লাখ লাখ মানুষ মাঠে নেমে আসবে, তাই তারা ভয় পাচ্ছে।

আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে দিনদিন গরম হয়ে উঠছে লক্ষ্মীপুরের রাজনীতির মাঠ। গত কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন ইস্যুতে একই দিন একই স্থানে দুই দলের পক্ষ থেকে সমাবেশের ডাক দেওয়া হচ্ছে। জেলা বিএনপির সমাবেশস্থল এবং জেলার শীর্ষ নেতার বাসাবাড়িতেও হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ জন্য আওয়ামী লীগকে দায়ী করেছে বিএনপি। আবার পূর্বঘোষিত কর্মসূচির দিনে আওয়ামী লীগের পাল্টা কর্মসূচিকে অপকৌশল হিসেবে দেখছে বিএনপি। তবে আওয়ামী লীগ বলছে, শোকের মাস ঘিরে মাসব্যাপী নানা কর্মসূচি পালন করছে তারা।

অন্যদিকে বিএনপি বলছে, আওয়ামী লীগের উদ্দেশ্য হচ্ছে, বিএনপির কর্মসূচিতে বাধা দেওয়া।

স্থানীয়ভাবে জানা গেছে, ২৪ আগস্ট লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলা বিএনপির উদ্যোগে পৌর বাস টার্মিনালে সমাবেশের ডাক দেওয়া হয়েছিল। জ্বালানি তেল, গ্যাস, পরিবহন ভাড়া বৃদ্ধি এবং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে দলটির পক্ষ থেকে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হলেও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ওই দিন একই স্থানে পাল্টা কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়। এতে প্রশাসনের অনুরোধে এবং অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে ওই দিনের কর্মসূচি পিছিয়ে দেয় বিএনপি। পরে সেখানে উপজেলা এবং পৌর আওয়ামী লীগের আয়োজনে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করা হয়।

বিএনপির পক্ষ থেকে স্থগিত সমাবেশের দিনক্ষণ নির্ধারণ করা হয় সোমবার (২৯ আগস্ট)। কিন্তু এ দিনেও আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গ সংগঠনের পক্ষ থেকে রায়পুর শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে সমাবেশের ডাক দেওয়া হয়। এতে করে আবার উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে উপজেলাব্যাপী। একই সময়ে দুই দলই সমাবেশ পালনের ঘোষণায় অটুট থাকলেও রবিবার (২৮ আগস্ট) গভীর রাতে বিএনপির পক্ষ থেকে তাদের কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়া হয়।

রায়পুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট মনিরুল ইসলাম হাওলাদার জানিয়েছেন, 'আমরা সমাবেশ পালন করতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। কিন্তু আমরা যাতে সমাবেশ করতে না পারি- সে জন্য আওয়ামী লীগ পাল্টা কর্মসূচি দেয়। যেদিন আমাদের সমাবেশ থাকে, ঠিক ওইদিনই কেন তাদের সমাবেশ করতে হবে? মূলত এটা বিএনপির সমাবেশ ঠেকানোর একটা অপকৌশল। এর আগেও আওয়ামী লীগ পরিকল্পিতভাবে আমাদের পূর্ব নির্ধারিত জনসমাবেশ বানচাল করেছে। বিশৃঙ্খলা এড়াতে ও প্রশাসনের অনুরোধে আমরা ওই সময় জনসভা স্থগিত করেছিলাম।'

একই ব্যাপারে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তানভীর হায়দার চৌধুরী রিংকু জানান, 'সোমবার (২৯ আগস্ট) বাসস্ট্যান্ডে বিএনপির কোনো কর্মসূচি আছে কিনা, তা আমাদের জানা নেই। শোকের মাসের এ কর্মসূচি আমাদের পূর্ব নির্ধারিত। আমরা আমাদের শোকসভা ও বিক্ষোভ মিছিল নির্ধারিত সময়েই করব।'

এদিকে রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শিপন বড়ুয়া বলেন, 'সভা-সমাবেশের নামে কাউকে বিশৃঙ্খলা করতে দেওয়া হবে না। বিশৃঙ্খলা এড়াতে ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি শান্ত রাখতে আমরা সচেষ্ট রয়েছি।'

২৩ আগস্ট বিকেলে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা (পশ্চিম) বিএনপির উদ্যোগে সদর উপজেলার পালেরহাটে সমাবেশে ডাক দেওয়া হয়। এরপরই একই স্থানে পাল্টা কর্মসূচির ডাক দিয়েছে যুবলীগ, ছাত্রলীগ এবং স্বেচ্ছাসেবক লীগ। পরে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে বিএনপির পক্ষ থেকে পালের হাট থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে খিলবাইছার মাছিমনগরে জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আবুল খায়ের ভূইয়ার বাড়ির পাশে সমাবেশ করে। পালেরহাটে সমাবেশ করে যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও শ্রমিকলীগ।

ওই দিন লক্ষ্মীপুর-রামগঞ্জ সড়কের বিভিন্ন স্থানে দুই রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের পৃথক পৃথকভাবে দলবদ্ধ হয়ে অবস্থান নিতে দেখা গেছে। দুপুর ২টার পর থেকে ওই স্থানে টান টান উত্তেজনা বিরাজ করছিল। এসময় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের হাতে স্টাম্প, জিআই পাইপসহ বিভিন্ন ধরনের পাইপ হাতে দেখা গেছে। তবে পাইপের মাথায় দলীয় পতাকা বাঁধা ছিল।

ওই দিনের বিএনপির কর্মসূচিতে কেন্দ্রীয় বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী তার বক্তব্যে দাবি করেছিলেন, দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা তাদের সমাবেশ বানচালের উদ্দেশ্য নিয়ে পথে পথে অবস্থান নিয়েছেন। তিনি পরবর্তী সমাবেশে নেতাকর্মীদের পতাকা মিছিল নিয়ে বের হওয়ার নির্দেশ দেন, যেন হামলা হলে পাল্টা জবাব দিতে পারে।

তবে সমাবেশ চলাকালে যে কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাব সদস্যরা সমাবেশ স্থলের আশেপাশে অবস্থান নেয়। এতে সমাবেশ এলাকায় কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটলেও ওই দিন সন্ধ্যায় বিএনপি নেতা শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানীর জেলা শহরের গোডাউন সড়কের বাসভবনে হামলার ঘটনা ঘটে।

ঘটনার সময় এ্যানী বিএনপি নেতা আবুল খায়ের ভূইয়ার বাড়িতে ছিলেন। কিন্তু হামলায় তার ভাই এবং ছেলেসহ চারজন আহত হন। হামলাকারীরা তার বাড়ির জানালার কাঁচ, চেয়ার, এয়ারকন্ডিশনার ভাঙচুর করেন।

হামলার জন্য সদর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি হুমায়ুন কবির পাটওয়ারী ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দায়ী করেছে বিএনপি।

১২ আগস্ট (শুক্রবার) দুপুরে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদ জানিয়ে সমাবেশ ডাকে বিএনপি। জেলা বিএনপির সদস্য সচিব সাহাবুদ্দিন সাবুর উত্তর তেমুহনীর বাসভবন প্রাঙ্গণে আয়োজিত সমাবেশ শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগে সেখানে হামলা চালানো হয়। হামলাকারীরা চেয়ার-টেবিল ভাঙচুর করেন।

৩০ আগস্ট (মঙ্গলবার) জেলার কমলনগরে এবং ৩১ আগস্ট (বুধবার) রামগতি উপজেলায় সমাবেশ আহ্বান করেছে বিএনপি। একই দিন রামগতিতে সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে উপজেলা ছাত্রলীগও।

আওয়ামী লীগের এ পাল্টা কর্মসূচি বিষয়ে জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট হাছিবুর রহমান বলেন, 'আমরা যেখানে যে সময়ে সমাবেশ ডাকি, একই সময়ে আওয়ামী লীগও সমাবেশ দেয়। এর কারণ হচ্ছে, আমরা যেন সমাবেশ না করতে পারি। বিএনপি সমাবেশ ডাকলে লাখ লাখ মানুষ মাঠে নেমে আসবে, তাই তারা ভয় পাচ্ছে। আমরা তো শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করি। কিন্তু তারা আমাদের সমাবেশস্থলে হামলা করেছে, আমাদের নেতার বাড়িতে হামলা করেছে। তারা যেন প্রতিহিংসার রাজনীতি থেকে বের হয়ে আসে।' 
 
 
 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.