অফিসের নতুন সময়: যানবাহনের ভিড়, পৌঁছাতে পারেননি অনেকেই
বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে বুধবার (২৪ আগস্ট) থেকে সব সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে সকাল আটটায় অফিস শুরু হয়েছে। এ সময়ে প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ে গিয়ে দেখা যায়, কর্মকর্তাদের উপস্থিতি তুলনামূলক কম তবে কর্মচারীদের উপস্থিতি বেশি। কেউ বলছেন, ঘুম থেকে দেরিতে ওঠার দীর্ঘদিনের অভ্যাস এক দিনে পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। আবার কেউ বলছেন রাস্তার যানজটের কথা।
সকাল ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত সচিবালয়ে অন্তত ১৫টি মন্ত্রণালয়ে ঘুরে দেখা গেছে, কোনো কোনো মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী অফিসে নতুন সময়সূচিতে আসেননি। কোথাও সচিব আসেননি। আবার বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রী ও সচিবদের যথাসময়ে অফিসে আসতে দেখা গেছে।
সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত অফিস এবং ব্যাংকের নতুন সময়সূচির প্রথম দিন রাজধানীর বেশিরভাগ সড়কে যানজটও শুরু হয়েছে আগেভাগে।
অফিস সময় এক ঘণ্টা এগিয়ে আসায় বুধবার সকাল ৭টা থেকেই ঢাকার প্রায় প্রতিটি রাস্তায় দেখা যায় ব্যাপক ভিড়।
তবে ওই সময় বাসের সংখ্যা তুলনামূলক কম থাকায় এবং আগেভাগে বেশি মানুষ রাস্তায় নামায় মোড়ে মোড়ে দেখা যায় জটলা। বাসের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে অনেককে।
নতুন নিয়মে সব সরকারি অফিস চলবে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত। ব্যাংক চলবে সকাল ৯টা থেকে ৫টা পর্যন্ত, এর মধ্যে ৩টা পর্যন্ত লেনদেন করা যাবে।
আগে সরকারি অফিস সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কাজ চলত।
ঢাকার অধিকাংশ স্কুলের প্রভাতী শাখায় ক্লাস শুরু হয় সকাল সাড়ে ৭টায়। ফলে অফিস ও স্কুলের ভিড় পড়েছে প্রায় একই সময়ে। তাতে বিভিন্ন পয়েন্টে অন্যান্য সময়ের চেয়ে ঘণ্টাখানেক আগেই যানজট দেখা দিয়েছে।
একজন যাত্রী জানালেন, বাসাবো থেকে সকাল ৭টায় বেরিয়ে আগে ৪০ মিনিটে মহাখালী পৌঁছানো গেলেও নতুন অফিস সূচির প্রথম দিন তিনি তা পারেননি। তার সময় লেগেছে সোয়া এক ঘণ্টা।
সকাল সোয়া আটটায় সচিবালয়ের সাত নম্বর ভবনে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ঢুকে দেখা গেল, একজন ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (পিও) হন্তদন্ত হয়ে অফিসে ঢুকছেন। জানতে চাইলে তিনি বলেন, সকাল সাতটায় রায়েরবাগ থেকে রওনা দিয়েছেন। সচিবালয়ে আসতে সোয়া ঘণ্টা সময় লেগেছে।
বুধবার সকাল সাড়ে আটটায়ও শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন অনেককেই অফিসে দেখা যায়নি। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়েও নতুন সময়সূচির মধ্যে নীতিনির্ধারকদের কাউকে অফিসে দেখা যায়নি।
স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম তার দপ্তরে সকাল ৯টা ১০ মিনিটে এ প্রতিবেদককে জানান, তিনি সঠিক সময়ে অফিসে এসেছেন। সরকারের এ সিদ্ধান্তের কারণে বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে বলে মনে করেন তিনি। স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, নতুন এ অফিস সময় কেমন চলছে, তা পর্যালোচনা করা হবে। সুফল মিললে অফিসের নতুন সময়সূচি অব্যাহত থাকবে।
সকালে অনেকেই যানজটের কবলে পড়েছেন এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তাজুল ইসলাম জানান, সকাল নয়টায় যখন অফিস সময় ছিল, তখনো যানজট ছিল। এ অভিযোগ পুরোনো; সমস্যাও পুরোনো।
সকাল ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত সচিবালয়ে সরেজমিন দেখা গেল, কর্মকর্তাদের উপস্থিতি কম। সে তুলনায় কর্মচারীদের উপস্থিতি বেশি।
এ বিষয়ে কথা হয় নির্ধারিত সময়ে উপস্থিত বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে। তারা বলেছেন, ঘুম থেকে দেরিতে ওঠার দীর্ঘদিনের অভ্যাস এক দিনে বদলানো কঠিন। তারা বলছেন, বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে সরকারের উদ্যোগটা ভালো। এটি স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। তবে কর্মকর্তাদের অভ্যাস বদলাতে হবে।
অধিকাংশ ব্যাংকেই সব কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। কোনো কোনো ব্যাংকে কিছু কর্মকর্তার আসতে দেরি হয়েছে। কার্যক্রম শুরুর প্রথম ঘণ্টায় অন্যদিনের তুলনায় গ্রাহকের সংখ্যা অনেক কম ছিল বলে জানিয়েছেন ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
এদিকে ব্যাংকিং সময় এগিয়ে আনা নিয়ে ভালো-মন্দের মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ব্যাংকের কর্মী ও গ্রাহকেরা।
বেশ কয়েকটি ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ব্যাংকিং সময় এগিয়ে এনে খুব একটা লাভবান হওয়া যাবে না। বরং সময় এগিয়ে নিয়ে আসার সিদ্ধান্তে তাদের ব্যক্তিগত জীবনযাপনে প্রভাব পড়েছে।
রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকার একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ব্যাংক আগে খুললেও মার্কেটসহ ব্যবসার কার্যক্রম কিন্তু ১০টার দিকেই শুরু হচ্ছে। ফলে তাদের লেনদেনও আগের সময় ধরেই হবে। শুধু ব্যক্তিপর্যায়ের গ্রাহকেরা চাইলে একটু আগে আসতে পারবেন।