স্কুলে সহপাঠীদের স্বাস্থ্যসেবা দেয় ২৩ লাখ ‘ক্ষুদে ডাক্তার’

বাংলাদেশ

20 August, 2022, 04:05 pm
Last modified: 20 August, 2022, 04:06 pm
আগামী ২০-২৬ আগস্ট সারাদেশের এই ক্ষুদে ডাক্তারেরা নিজ স্কুলের সহপাঠীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করবে। 

কারো বয়স ৮, কারো ১২ । কেউ পড়ে ক্লাস ফোরে, কেউবা সিক্সে। চিকিৎসকদের মত গায়ে সাদা অ্যাপ্রোন। আই চার্ট দেখে সহপাঠীদের দৃষ্টিশক্তি পরীক্ষা, উচ্চতা মাপার স্কেল দিয়ে উচ্চতা মাপা, ওজন মাপা, কৃমির ওষুধ খাওয়ানোর কাজ করে তারা। 'ক্ষুদে ডাক্তার' তারা। 

শিশুর মাধ্যমে শিশুদের স্বাস্থ্যসেবা দিতে সারাদেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয়-মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসায় রয়েছে ২৩ লাখ ৫০ হাজার 'ক্ষুদে ডাক্তার'।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের (ডিজিএইচএস) সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ (সিডিসি) এই স্বাস্থ্যসেবা কর্মসূচি পরিচালনা করছে। 

আগামী ২০-২৬ আগস্ট সারাদেশের এই ক্ষুদে ডাক্তারেরা নিজ স্কুলের সহপাঠীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করবে। 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে, মাউশি অধিদপ্তর ও মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর ও অন্যান্য সহযোগী সংস্থার যৌথ উদ্যোগে এ কার্যক্রম চলবে।

স্বাস্থ্য পরীক্ষায় শিক্ষার্থদের ওজন, উচ্চতা ও দৃষ্টিশক্তি পরিমাপ করা হবে। মাদ্রাসাসহ দেশের সব প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ কার্যক্রম পরিচালিত হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার ফাইলেরিয়া নিমূল, কৃমি নিয়ন্ত্রণ ও ক্ষুদে ডাক্তার কার্যক্রমের আওতায় শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হবে।

সিডিসির প্রোগ্রাম ম্যানেজার (ফাইলেরিয়াসিস, এসটিএইচ এবং লিটল ডক্টর প্রোগ্রাম) ডা. এম এম আকতারুজ্জামান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডতড (টিবিএস) জানিয়েছেন, বর্তমানে সারাদেশে ২৩ লাখ ৫০ হাজার ক্ষুদে ডাক্তার আছে। তাদের বয়স ৫ থেকে ১৬ বছরের মধ্যে। 

''বছরে দুইবার জাতীয় কৃমি নিয়ন্ত্রণ সপ্তাহে শিশুদের কৃমিনাশক ওষুধ খাওয়ানো এবং স্কুলের অন্য বাচ্চাদের উচ্চতা, ওজন, আই টেস্ট করাসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যশিক্ষা দেয় ক্ষুদে ডাক্তারেরা। বছর ব্যাপী ভ্যাকসিনেশনে সহায়তা করাসহ যেকোন ধরনের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত প্রোগ্রামে তারা কাজ করে।''

''সাপের কামড়কে ক্ষুদে ডাক্তার কর্মসূচীর আওতায় আনা হবে। সাপে কামড় দিলে কি করণীয়, কোথায় গেলে চিকিৎসা পাবে তা ক্ষুদে ডাক্তাররা মানুষকে জানাবে'' বলেন  ডা আকতারুজ্জামান। 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, শিশুর মাধ্যমে শিশুদের স্বাস্থ্য-শিক্ষা দেওয়ার লক্ষ্যে ২০১১ সাল থেকে ক্ষুদে ডাক্তার কর্মসূচি শুরু করা হয়। সে সময় শুধু প্রাইমারি স্কুলে ক্ষুদে ডাক্তার কর্মসূচি চালু করা হয়।  পরবর্তীতে ২০১৮ সালে হাই স্কুলে ক্ষুদে ডাক্তার কর্মসূচি চালু করা হয়। তবে দুই বছর কোভিডের কারণে স্কুল বন্ধ থাকায় এ কর্মসূচীতে কিছুতে ব্যাঘাত ঘটেছে। এখন নতুন করে আবার সবকিছু চালু করা হচ্ছে।

বিদ্যালয়ের প্রতি শ্রেণি থেকে তিনজন ক্ষুদে ডাক্তার নির্বাচন করা হয়। প্রাইমারি স্কুলের ক্লাস থ্রি, ফোর ও ফাইভ এবং হাই স্কুলের সিক্স, সেভেন ও নাইনের শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে ক্ষুদে ডাক্তার  বাছাই করা হয়। একজন ক্লাস টিচার বা গাইড শিক্ষকের মাধ্যমে তাদের কার্যাবলী সম্পর্কে অবহিত করা হয়।

নাটোরের লালপুর উপজেলার নবীনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা জামিলা খাতুন টিবিএসকে বলেন, 'শিশুদের স্বাস্থ্যসচেতন করে তুলতে এ কার্যক্রম খুবই ফলপ্রসূ। এ কার্যক্রমের মাধ্যমে বোঝা যায় শিশুরা ঠিকমতো বেড়ে উঠছে কি না, তার ওজন ঠিক আছে কি না। 

সমস্যা হলে অভিভাবকদের সঙ্গে আমরা কথা বলি। সে অনুযায়ী শিশুকে পুষ্টিকর খাবার ও বেশি খাবার দেওয়ার পরামর্শ দেই। আমাদের শিক্ষার্থীরা খুব আগ্রহের সাথে ক্ষুদে ডাক্তার হয় ও সহপাঠীদের সেবা দেয়।'

ক্ষুদে ডাক্তারদের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হবে

সিডিসি, ডিজিএইচএসের সাবেক পরিচালক ও ক্ষুদে ডাক্তার কর্মসূচির রূপকার অধ্যাপক বে-নজির আহমেদ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, ক্ষুদে ডাক্তার কর্মসূচির মাধ্যমে শিশুদের ম্যানেজমেন্ট ক্যাপাসিটি বাড়ে। শিশুদের মধ্যে টিমে কাজ করার দক্ষতা তৈরি হয়, তাদের মধ্যে লিডারশিপ গড়ে ওঠে। মানুষের জন্য কাজ করার ইচ্ছে তৈরি হচ্ছে। অনেক ক্ষুদে ডাক্তার এখন সত্যিকার ডাক্তার হতে মেডিকেলে পড়ছে।

''ক্ষুদে ডাক্তারদের প্রমোট করলে তারা ভবিষ্যতে ভালো মানুষ হয়ে সমাজ উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে। এ কার্যক্রমের আওতায় অ্যাডোলেসেন্ট হেলথকে আনতে হবে। তাহলে কৈশরকালীন পরিচ্ছন্নতা বিষয়ে সচেতন করা ও ফলিক এসিড বিতরণ করা যাবে তাদের মাধ্যমে। 

এ কার্যক্রমের বিরাট সম্ভাবনা আছে, এতে আরো গুরুত্ব দিলে মাদকাসক্তির ঝুঁকি থেকেও যুব সমাজকে রক্ষা করা যাবে,' বলেন অধ্যাপক বে-নজির। 

 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.