১৬ বছরেও ৯৮ জনকে প্লট বুঝিয়ে দিতে পারেনি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন

বাংলাদেশ

16 August, 2022, 03:30 pm
Last modified: 16 August, 2022, 03:58 pm
অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির দাবি জানিয়েছে সুশীল সমাজ।

১৬ বছর আগে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) লেকসিটি আবাসন প্রকল্পের প্লট বরাদ্দের জন্য আবেদন করেছিলেন আবুধাবি প্রবাসী সৈয়দ মুহাম্মদ আবুল হাশেম। ২০০৬ সালে ৮ লাখ এবং ২০০৯ সালে ৭ লাখ, দুই ধাপে মোট ১৫ লাখ টাকা পরিশোধ করেও তিনি প্লট বুঝে পাননি। পরে ২০১৫ সালে সেবা সংস্থাটি জায়গা সংকুলান হচ্ছে না বলে নতুন জায়গা কেনার জন্য আরও ২ লাখ টাকা আদায় করে। 

নির্ধারিত সময়ে সকল পাওনা পরিশোধ করেও প্লট বরাদ্দ পাননি আবুল হাশেম।

ক্রয়কৃত প্লট পাওয়ার আশায় এক কর্মকর্তার কাছ থেকে আরেক কর্মকর্তার কাছে যাওয়া এখন তার নিয়মিত কাজে পরিণত হয়েছে, তবুও কোনো লাভ হচ্ছে না।

সৈয়দ মুহাম্মদ আবুল হাশেম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "আমরা যারা এখনও প্লট বুঝে পাইনি, তারা বর্তমান মেয়রের সঙ্গে দেখা করেছি। তিনি আমাদের বলেছেন, যাদের টাকা দিয়েছি, তাদের (সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীসহ) কবরে গিয়ে জিজ্ঞাস করতে!" 

"বিরক্তি নিয়ে মেয়র বলেলন, তিনি কী এখন নিজের জমি বিক্রি করে প্লট দেবেন!" 

"তাহলে আমরা কোথায় যাবো? আমরাতো কোনো ব্যক্তিকে টাকা দেয়নি। আমরা সিটি কর্পোরেশনের মতো প্রতিষ্ঠানকে টাকা দিয়েছি", যোগ করেন তিনি। 

শুধু আবুল হাশেমই নন, আবাসন প্রকল্পটির প্লট বরাদ্দের জন্য আবেদন করা ৫৪৮ জনের মধ্যে ৯৮ জনকে এখনও বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি প্লট। তাদের দায়িত্ব নিচ্ছে না কেউ। ফলে নিজেদের স্বপ্নের আবাসন নিয়ে অনিশ্চয়তা পড়েছেন প্লট বঞ্চিতরা। 
তবে, মোট ৫৪৮টির মধ্যে বাকি ৪৫০ জন সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর ২০০৩ সালে নেওয়া প্রকল্পের আওতায় পর্যায়ক্রমে নিজেদের প্লট বুঝে পেয়েছেন।

প্রতি কাঠা জমি ৬ লাখ টাকা দরে ৩ কাঠা প্লট বিক্রি করা হয়েছিল। শুরুতে ৮ লাখ টাকা পে-অর্ডারের মাধ্যমে নিয়েছিল চসিক। ২০০৯ সালে বলা হয়, আবেদনকারী বেশি হয়ে যাওয়ায় জায়গা সংকুলান হচ্ছে না। তাই গ্রাহকদের ৩ কাঠার বদলে আড়াই কাঠার প্লট দেওয়া সিদ্ধান্ত হয়। তখন আড়াই কাঠার জন্য ১৫ লাখ টাকা হিসেবে পুরো টাকা আদায় করা হয় গ্রাহকদের কাছ থেকে। এরপর আটক যায় প্রকল্পটি।

এবিএম মহিউদ্দিনের পর, ২০১৫ সালে মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন দায়িত্বে আসেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে বুঝিয়ে দেওয়া হবে বলে সার্ভিস চার্জ হিসেবে প্রতি প্লটের জন্য তিনি ২ লাখ টাকা করে আদায় করেন। মূলত নতুন করে জায়গা কেনার জন্য এই টাকা আদায় করা হয়। এরপর ২০১৭ ও ২০১৮ সালে পর্যায়ক্রমে ৪৫০ জনকে প্লট বুঝিয়ে দেওয়া হয়।

আবুল হাশেম বলেন, "এখানে দুর্নীতি হয়েছে। যারা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে লিয়াজু রক্ষা করেছে, তারা প্লট বুঝে পেয়েছে।"

"আমাদের মতো সাধারণ মানুষরা প্লট পায়নি। আমার মাধ্যমে এই প্রকল্পের খবর পেয়ে, আমার পরে আবেদন করেছেন, এমন মানুষও প্লট বরাদ্দ পেয়েছেন। কিন্তু আমরা অনেকে আগে আবেদন করেও পাইনি", যোগ করেন তিনি। 

প্লট না পাওয়া স্বাতী বড়ূয়া নামের আরেক নারী বলেন, "গত বছর আমার স্বামী মারা গেছেন। তিনি বেঁচে থাকতে প্লট কিনেছিলেন। ছেলেমেয়েদের নিয়ে খুব কষ্টে জীবনযাপন করছি। প্লট বুঝে পেতে কর্মকর্তাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছি। কিন্তু কেউ আমাদের কোনো দায়িত্ব নিচ্ছেন না।"

প্লট বঞ্চিতরা অভিযোগ করেন, ২০০৬ সালের নকশা বাতিল করে নতুন করে নকশা করা হয়। ফলে আগে যারা যে প্লট বরাদ্দ পেয়েছিল, সব নকশা মুছে দেওয়া হয়। এরপর সিরিয়াল অনুসারে প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। 

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) চট্টগ্রাম জেলার সম্পাদক অ্যাডভোকেট আখতার কবীর চৌধুরী বলেন, "সিটি কর্পোরেশন তার মূল দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ। তাদের প্লট-বাণিজ্য করতে কে বলেছে? কতিপয় ব্যক্তি সিটি কর্পোরেশনের ভাবমূর্তি কাজে লাগিয়ে এ বাণিজ্য করেছে।"

"যারা এ প্রতারণায় যুক্ত, তাদের আইনের আওতায় আনা প্রয়োজন। প্লট দিতে ব্যর্থ হলে বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দেওয়া উচিত", বলেন তিনি।

সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরীকে একাধিকবার কল দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। 

এদিকে, সিটি কর্পোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, জায়গা সংকুলান না হওয়ায় ৪৫০ জনকে প্লট বরাদ্দ দেওয়া গেছে। বঞ্চিত ৯৮ গ্রাহকের জন্য এখনও জায়গা কিনতে পারেনি সিটি কর্পোরেশন।

"তবে বিকল্প কোনো জায়গায় তাদের বরাদ্দ দেওয়া যায় কিনা, তা নিয়ে আলোচনা চলছে। এখনো এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি", যোগ করেন তিনি। 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.