নিরাপত্তা নিশ্চিতের আগ পর্যন্ত বিআরটি প্রকল্পের কাজ বন্ধ থাকবে: মেয়র আতিকুল

বিআরটি (বাস র্যাপিড ট্রানজিট)-৩ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ স্থগিত করেছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম।
মঙ্গলবার সকালে উত্তরার জসিমউদ্দিন সড়কের ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে ডিএনসিসি মেয়র এ ঘোষণা দেন।
সোমবার উত্তরার জসিমউদ্দিন রোডে ১৫০ টন ওজনের গার্ডার চাপায় নিহত হন ২ শিশুসহ ৫ জন। নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত এ প্রকল্পের কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন মেয়র আতিকুল।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বিআরটি এর প্রকল্পে ন্যূনতম নিরাপত্তা ব্যবস্থার অভাব রয়েছে।
"ফলে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে, বাড়ছে জনদুর্ভোগ। উন্নয়ন কাজ এভাবে চলতে দেওয়া যাবে না। সবার আগে নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে," যোগ করেন তিনি।
"বিআরটি এবং মেট্রো রেলের মতো বেশ কিছু উন্নয়ন প্রকল্প বর্তমানে ঢাকায় চলমান রয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) ডিএনসিসির সাথে সব প্রকল্প পরিচালকদের (পিডি) বৈঠকে যোগ দিতে বলা হয়েছে," বলেন তিনি।
যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হলেই উন্নয়ন কাজ পুনরায় শুরু করতে পারবে তারা, যোগ করেন মেয়র।
তিনি বলেন, "প্রয়োজনে শুক্র ও শনিবার রাস্তা (যেগুলোতে উন্নয়নকাজ কাজ চলছে) বন্ধ রাখা যেতে পারে। এ ধরনের দুর্ঘটনা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।"
গতকালের ঘটনার বিআরটি-৩ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের চীনা ঠিকাদারের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
সোমবার মধ্যরাতে উত্তরা পশ্চিম থানায় নিহত ফাহিমা আক্তার ও ঝর্না আক্তারের ভাই আফরান মন্ডল বাবু চায়না গ্যাঝুবা গ্রুপ করপোরেশনের (সিজিজিসি) বিরুদ্ধে অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগে এ মামলা করেন। মামলায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে বলে জানান উত্তরা পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মোহসীন।
তিনি বলেন, "মামলায় ক্রেন অপারেটরকেও আসামি করা হয়েছে। আমরা ইতিমধ্যে তদন্ত শুরু করেছি। অভিযুক্তদের আটকের চেষ্টা চলছে।"
সোমবার (১৫ আগস্ট) উত্তরার জসীমউদ্দিন এলাকায় চলন্ত প্রাইভেট কারের ওপর গার্ডার পড়ে দুই শিশুসহ পাঁচজন নিহত হয়।
ঘটনার পরপরই হৃদয় (২৬) ও রিয়া মনি (২১) নামে দুজনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়; এরা নবদম্পতি। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন হৃদয়ের বাবা মো. রুবেল মিয়া (৫০), নববধূ রিয়ার মা ফাহিমা (৪৫), ফাহিমার বোন ঝর্ণা (২৮) এবং তার দুই শিশুসন্তান জান্নাত (৬) ও জাকারিয়া (২)।
গাজীপুর থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিশেষায়িত বাসের জন্য পৃথক লেন তৈরির প্রকল্পটি তিনটি সরকারি সংস্থা- সড়ক ও জনপথ বিভাগ (আরএইচডি), বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ দ্বারা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। তিনটি সংস্থার কাজের সমন্বয়ের দায়িত্বে রয়েছেন তিন প্রকল্প পরিচালক।
পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ২০১২ সালের শেষের দিকে শুরু হওয়া প্রকল্পের কাজ ২০১৬ সালের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ১০ বছরে কাজের এক তৃতীয়াংশও শেষ হয়নি। ইতোমধ্যে, প্রকল্প সমাপ্তির মেয়াদ এবং ব্যয় উভয়ই দ্বিগুণ হয়েছে।
ধীরগতির কারণে, প্রকল্পের সংশোধিত ব্যয় ২০৩৯.৮৪৮৯ কোটি টাকা থেকে ১০৯ শতাংশ বেড়ে ৪২৬৮.৩২ কোটি টাকা হয়েছে। এডিবিসহ তিনটি দাতা সংস্থা প্রকল্পটির জন্য ২ হাজার ৮৪২ কোটি ৫১ লাখ টাকা ঋণ দিচ্ছে।