ফিলিং স্টেশনগুলো কেন পরিমাণে কম তেল দিচ্ছে?

বাংলাদেশ

10 August, 2022, 08:45 pm
Last modified: 11 August, 2022, 11:16 am
প্রয়োজনের তুলনায় বেশি পাম্প অনুমোদন দেওয়ায় অসম প্রতিযোগিতা তৈরি হয়েছে। ফলে লাভ করতে পরিমাণে তেল কম দেওয়ার অসৎ পন্থা বেছে নেয় প্রতিষ্ঠানগুলো।

গত দুই দিনে চট্টগ্রামে বিভিন্ন ফিলিং স্টেশনে অভিযান চালিয়ে অনিয়মের দায়ে ১১ প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করেছে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত।

গ্রাহকদের পরিমাণে তেল কম দেওয়া, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকায় এসব প্রতিষ্ঠানকে মোট ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এ ছাড়া, একটি পেট্রোল পাম্প সাময়িক বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরিমাণে তেল কম দেওয়ার পেছনে অসম প্রতিযোগিতা, কম কমিশনকে দায়ী করছেন ফিলিং স্টেশন মালিকদের সংগঠনের নেতারা।

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) সর্বশেষ তথ্যমতে, ফিলিং স্টেশন মালিকরা প্রতি লিটার ডিজেল বিক্রি করে ২.৮৩ টাকা, অকটেন ৪.৯২ টাকা ও পেট্রোলের বিপরীতে ৪.৭৮ টাকা কমিশন পায়। এই কমিশন দিয়ে ডিলার বা এজেন্টদের ইভোপরেশন অপারেশন, হ্যান্ডেলিং লস-সহ অন্যান্য খরচ বহন করে মুনাফা করতে হয়। বিপণন কোম্পানি থেকে পরিবহন করে ফিলিং স্টেশনে আনার সময় তেল উড়ে যাওয়া, লোড-আনলোডের সময় লস, গ্রাহকের গাড়িতে প্রদানের সময় লস-সহ প্রতিষ্ঠান পরিচালনার ব্যয় অন্তর্ভুক্ত। এই সামান্য কমিশন দিয়ে ফিলিং স্টেশনগুলোর পরিচালনা ব্যয় মেটানো কঠিন বলে দাবি ফিলিং স্টেশন মালিকদের।  

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম ডিলারস ডিস্ট্রিবিউটরস এজেন্টস অ্যান্ড পেট্রোল পাম্প ওনার্স অ্যাসেসিয়েশনের হিসেব অনুযায়ী, সারাদেশে মোট ৪ হাজার ৭৯৬টি ফিলিং স্টেশন রয়েছে। চট্টগ্রাম বিভাগে রয়েছে ২৩২টি। আর চট্টগ্রাম জেলায় রয়েছে ১৮৬টি পেট্রোল পাম্প। একটি পেট্রোল পাম্প চালু করতে জেলা প্রশাসন, বিপণন সংস্থা, বিস্ফোরক অধিদপ্তর, বিপিসি, জ্বালানি মন্ত্রণালয়, সিটি করপোরেশনের অনুমোদন প্রয়োজন হয়। প্রয়োজনের তুলনায় বেশি পাম্প অনুমোদন দেওয়ায় অসম প্রতিযোগিতা তৈরি হয়েছে। ফলে লাভ করতে পরিমাণে তেল কম দেওয়ার অসৎ পন্থা বেছে নেয় প্রতিষ্ঠানগুলো।

সংগঠনটির সভাপতি নাজমুল হক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "একটি পেট্রোল পাম্পের বিদ্যুৎ ব্যয়, কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন, পরিচালনা ব্যয় রয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে একটি প্রতিষ্ঠানকে মুনাফার মুখ দেখতে হলে দৈনিক ৮- ১০ হাজার লিটার তেল বিক্রি করতে হবে। অথচ যেখানে দুটি ফিলিং স্টেশন প্রয়োজন, সেখানে ১০টির অনুমোদন দিয়েছে রাখা হয়েছে। এত বেশি পেট্রোল পাম্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে যে, এ পরিমাণ তেল বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না।"

তিনি আরো বলেন, "তাই বলে অল্প লাভ হওয়ায় যে পরিমাপে তেল কম দিতে হবে- তা কোনভাবেই সমর্থন করি না। কিন্তু সমস্যার মূলে হাত দিতে হবে। আমাদের ফিলিং স্টেশন মালিকরা বলছেন, প্রশাসনকে ম্যানেজ করলে সমস্যা হয় না। যারা ম্যানেজ করেন না, তাদের জরিমানা করা হয়। এসব বিষয়ের সমাধান করতে ২০১৩ সালে একটি মনিটরিং কমিটি গঠন করা হয়েছিল। সেখানে বিপিসি, ভোক্তা অধিদপ্তর, বিএসটিআইয়ের প্রতিনিধিদের পাশাপাশি আমাদের সমিতি থেকেও প্রতিনিধি ছিলেন। কিন্তু এই মনিটরিং কমিটি একবারও পরিদর্শনে যায়নি। হঠাৎ করে অভিযান চালিয়ে এটি বন্ধ করা যাবে না। নিয়মিত মনিটরিং করতে হবে।"

সংগঠনটির চট্টগ্রাম বিভাগের সভাপতি এহসানুর রহমান চৌধুরী দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "এখানে কেউ সাধু না। বিপণন কোম্পানিও যে আমাদের পরিমাপে কম দেয়, সেখানে দেখার কেউ নেই। প্রশাসনকে বলব, সেখানেও অভিযান চালান। এ ছাড়া যারা রাস্তায় রাস্তায় ডিজেল, অকটেন, পেট্রোল বিক্রি করছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। যে অল্প কমিশন দেয়, তা দিয়ে ব্যাংক লোন পরিশোধের পর আর কিছু থাকে না।"

এ বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের সহকারী পরিচালক মো. আনিছুর রহমান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "তারা অভিযোগ দিলে অবশ্যই অভিযান চালানো হবে। আমাদের অধিদপ্তর শুধু জ্বালানি তেল নিয়ে নয়, সবকিছু নিয়ে কাজ করে। অভিযোগ ও তথ্য এলে আমরা কাজ করব।" 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.