তিনটি ল্যাবে করা হবে মাঙ্কিপক্সের টেস্ট

বাংলাদেশ

05 August, 2022, 09:25 am
Last modified: 05 August, 2022, 10:00 am
"এটি খুব সংবেদনশীল বিষয়, মানুষ মনে করে যে একটি বিশেষ গোষ্ঠীর মানুষ এর জন্য দায়ী। সে ধরনের অপপ্রচার যেন না হয়। এ রোগ যে কারো হতে পারে।"

মাঙ্কিপক্সের সংক্রমণ মোকাবেলায় এরইমধ্যে পোর্ট অব এন্ট্রিতে (প্রবেশদ্বারে) সতর্কতা জারি করেছে বাংলাদেশ। সন্দেহজনক (সাসপেক্টেড) কেস পাওয়া গেলে কোথায় স্যাম্পল টেস্ট করা হবে, কোথায় চিকিৎসা দেয়া হবে, রিস্ক কমিউনিকেশনের বিষয়ে প্রস্তুতি এবং প্রতিক্রিয়া পরিকল্পনার (রেসপন্স প্লান) খসড়া তৈরি করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। পরিকল্পনা অনুযায়ী দেশের তিনটি ল্যাবে সাসপেক্টেড মাঙ্কিপক্সের রোগীদের স্যাম্পল টেস্ট করা হবে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

ল্যাব তিনটি হলো- ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন অ্যান্ড রেফারেল সেন্টার, ইনস্টিটিউট অব এপিডেমিওলজি ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড রিসার্চ (আইইডিসিআর) এবং ইনস্টিটিউট অব পাবলিক হেলথ- তিনটিই ঢাকায় অবস্থিত।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডাঃ নাজমুল ইসলাম বলেন, "মাক্সিপক্স অ্যাড্রেস করার জন্য ক্লিনিক্যাল গাইডলাইন, ল্যাবরেটরি গাইডলাইন তৈরি এবং কোন কোন ল্যাবে স্যাম্পল পাঠানো হবে তা ঠিক করার খসড়া কাজ শেষ। স্ট্র্যাটেজি ও অ্যাকশন প্ল্যান কী হবে তাও ঠিক করা হয়েছে। এখন শুধু অনুমোদন বাকি।"  

"কেসের সংখ্যা যদি অনেক বেড়ে যায় তখন বিভাগীয় পর্যায়ে টেস্ট করা হবে। আমরা সতর্ক থাকতে চাই যাতে বিপদে না পড়ি", বলেন তিনি।

সূত্র বলছে, এখন শুধু আইইডিসিআর এর কাছে মাঙ্কিপক্সের স্যাম্পল টেস্টের রিএজেন্ট আছে। সেখানেই শুধু স্যাম্পল টেস্ট করা হচ্ছে।

গত ২২ মে মাঙ্কিপক্সের বিষয়ে পোর্ট অব এন্ট্রিতে সতর্কতা জারি করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সেখানে সাসপেক্টেড কেস পেলে তাদের স্যাম্পল টেস্ট করা হচ্ছে। মাঙ্কিপক্স নয়- নিশ্চিত হওয়ার পর তাদের ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। তবে এ সংখ্যা এখনো দুই অংকের সংখ্যায়ও পৌঁছায়নি বলে জানিয়েছে্ন ডাঃ নাজমুল ইসলাম।

তিনি বলেন, "দেশে যদি মাঙ্কিপক্সের কেস পাওয়া যায় তাহলে তাকে মহাখালীর সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হবে। আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি যাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ কঠিন না হয়ে পড়ে।"

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ল্যাবরেটরি মেডিসিন অ্যান্ড রেফারেল সেন্টারের ভাইরোলজি বিভাগের প্রধান ডাঃ আরিফা আকরাম টিবিএসকে বলেন, স্যাম্পল কিভাবে সংগ্রহ করা হবে সেসব নিয়ে বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে মিটিং হয়েছে।

পোর্ট অব এন্ট্রির বাইরে কোন হাসপাতালে মাঙ্কিপক্সের সাসপেক্টেড কেস দেখা গেলে সেখান থেকে স্যাম্পল সংগ্রহ করা হবে বলে জানান তিনি।

ইনস্টিটিউট অফ এপিডেমিওলজি ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড রিসার্চ (আইইডিসিআর) -এর উপদেষ্টা ডাঃ এম মুশতাক হোসেন বলেন, "পোর্ট অব এন্ট্রিতে সতর্কতা, ল্যাবরেটরি ও হাসপাতাল ঠিক করার পাশাপাশি মানুষকে মাক্সিপক্সের বিষয়ে সতর্ক রাখতে হবে। এটি খুব সংবেদনশীল বিষয়, মানুষ মনে করে যে একটি বিশেষ গোষ্ঠীর মানুষ এর জন্য দায়ী। সে ধরনের অপপ্রচার যেন না হয়। এ রোগ যে কারো হতে পারে। রিস্ক কমিউনিকেশনের ওপর জোর দিতে হবে।"

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, মে মাসে প্রাদুর্ভাবের পর থেকে শনাক্তকৃত মাঙ্কিপক্স আক্রান্তের ৯৮ শতাংশই ছিল সমকামী, উভকামী এবং যেসব পুরুষ অন্য পুরুষদের সাথে যৌন সম্পর্ক করেছেন তারা।

ডাঃ এম মুশতাক হোসেন বলেন, "বাংলাদেশে সমকামিতা স্বীকৃত নয় বলে ঝুঁকিটা আরো বেশি। কারো মধ্যে মাঙ্কিপক্স শনাক্ত হলে তাকে সমকামী ভাবা হবে। তাদেরকে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করা হবে। অথচ মাঙ্কিপক্স রোগীদের ব্যবহৃত কাপড়, বিছানা ব্যবহার করেও অনেকে আক্রান্ত হচ্ছে। বাচ্চাদেরও হচ্ছে।"

মুশতাক হোসেন আরও বলেন, "মাঙ্কিপক্সের সংক্রমণ থেকে সতর্ক থাকতে সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে। ক্লোজ কন্ট্যাক্টে এ রোগ ছড়ায় তাই যতটা সম্ভব শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে চলতে হবে।"

পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতসহ ৮০টি দেশে ছড়িয়েছে মাঙ্কিপক্স। ভারতে একজন মারাও গেছে। মাঙ্কিপক্স নিয়ে সতর্কতা জারি করেছে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকার। সরকারি নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে, সমস্ত জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও মেডিক্যাল কলেজগুলোকে পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকতে হবে। সব হাসপাতালের মাইক্রো বায়োলজি বিভাগকেও প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সেখানে।  
 
 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.