চবিতে যৌন নিপীড়নের নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রলীগ নেতা আজিমই ভিডিও করেন

বাংলাদেশ

টিবিএস রিপোর্ট
23 July, 2022, 03:10 pm
Last modified: 23 July, 2022, 03:57 pm
পুরো ঘটনায় নেতৃত্ব দেন মো. আজিম যিনি ছাত্রলীগের কর্মী, জড়িত বাকিরাও ছাত্রলীগের কর্মী। 

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) ছাত্রীকে যৌন নিপীড়ন ও হেনস্তা করে সে ঘটনা মুঠোফোনে ধারণ করে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতা চবি মো. আজিম (২৩)। 

এ সময় আরও পাঁচ ছাত্রলীগ কর্মী আজিমকে সহযোগীতা করেছে। জড়িতদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নন এমন ছাত্রলীগ কর্মীও ছিলেন। 

দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন র‍্যাব -৭ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এম এ ইউসুফ। 

তিনি বলেন, 'অভিযুক্ত ছয়জন থেকে চারজনকে শুক্রবার রাতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি দুইজনকে গ্রেপ্তারের অভিযান চলছে। পুরো ঘটনায় নেতৃত্ব দেন মো. আজিম যিনি ছাত্রলীগের কর্মী, বাকিরাও ছাত্রলীগের কর্মী। 

তাদের কাছ থেকে ঘটনায় ব্যবহৃত ২টি মোটরসাইকেল ও ভিডিও ধারণ করেছে এমন ৩টি মোবাইল উদ্ধার করা হয়েছে।'

'ভিডিও ধারণের পুরো কাজটি করেন মো. আজিম নিজে। ভিডিও ধারণের ক্ষেত্রে তিনটি মোবাইল ব্যবহার করা হয়। পরে ভিডিও ধারণের পর আজিম হুমকি দেয়, তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক না করলে ভিডিও ভাইরাল করে দেবে। ছাত্রী ও তার বন্ধু প্রায় এক ঘণ্টা ধরে নির্যাতনকারীদের হাতে জিম্মি ছিল', বলেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল এম এ ইউসুফ।

র‍্যাব-৭, চট্টগ্রাম এর সিনিয়র সহকারি পরিচালক মোহাম্মদ নূরুল আবছার দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রথমে আজিমের অবস্থান শনাক্ত করে র‍্যাব। শুক্রবার রাতে (২২ জুলাই) রাউজানে আজিমের ফুপুর বাড়ি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। 

পরে তার দেওয়া স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে বাকি পাঁচ জনের নাম জানা যায়। এর পরপরই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও আশাপাশের এলাকায় অভিযান চালিয়ে শাওন, বাবু, মাসুদ রানাকে গ্রেফতার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তারা ঘটনার কথা স্বীকার করেছে। 

লেফটেন্যান্ট কর্নেল এম এ ইউসুফ বলেন, 'এই চক্রটি মূলত আজিম পরিচালনা করতো। সে স্থানীয় হওয়ায় ছাত্রলীগের রাজনীতি ও প্রশাসনে প্রভাব বিস্তার করেছিলো। তার নেতৃত্বেই বহিরাগতরা ক্যাম্পাসে অনুপ্রবেশের মাধ্যমে এই ঘটনা ঘটিয়েছে।

এ ঘটনায় ব্যবহৃত ২টি মোটরসাইকেল আমরা জব্দ করেছি। সে দুটি বহিরাগত শাওন ও সাইফুলের। মূলত বিশ্ববিদ্যালয়ে সিসিটিভি ক্যামেরায় ধারণ হওয়া ফুটেজ দেখে এই দুটি মোটর সাইকেল শনাক্ত করা হয়।'

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন—চবির ইতিহাস বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. আজিম, নৃবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নুরুল আক্তার ওরফে বাবু, হাটহাজারী সরকারি কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. মাসুদ রানা এবং একই কলেজের আরেক শিক্ষার্থী নূর হোসেন শাওন। এছাড়া সাইফুল নামের দুইজন এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত।

গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে আজিম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেলের অনুসারী। রুবেল চট্টগ্রামের ছাত্র রাজনীতিতে চট্টগ্রাম-৯ আসনের সংসদ সদস্য এবং শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

অপরদিকে, বাকিরা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রদীপ চক্রবর্তী দুর্জয়ের অনুসারী। চট্টগ্রামের ছাত্র রাজনীতিতে দুর্জয় নগর আওয়ামী লীগের আ জ ম নাছিরের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। মূলত চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনগুলো নেতাকর্মীরা এই দুই নেতার দুই উপদলে বিভক্ত হয়ে পরিচালিত হয়ে থাকে। 

চবি ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেল ও ছাত্রলীগের বগি ভিত্তিক সংগঠন ভি-এক্স গ্রুপের প্রদীপ চক্রবর্তী দুর্জয় বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে নিশ্চিত করেছেন যে, ঘটনায় জড়িত আজিম ও বাবু ছাত্রলীগের কর্মী ও তাদের অনুসারী। তবে বহিরাগতদের ছাত্রলীগ কর্মী বলতে রাজি নন তারা।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ কর্মীদের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের যৌন হয়রানি ও হেনস্তার ঘটনা এবারই প্রথম নয়। এর আগে গত বছরের ২১ সেপ্টেম্বর ক্যাম্পাসের ভেতরেই ছাত্রলীগের চার কর্মীর বিরুদ্ধে দুই ছাত্রীকে হেনস্তার অভিযোগ উঠে।

গত জুন ও এপ্রিল মাসে শাটল ট্রেনে বহিরাগত কয়েকজন দুই ছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। ছাত্রলীগ কর্মী-বহিরাগতদের হাতে শিক্ষার্থীরা  বারংবার যৌন নিপীড়ন ও হেনস্তার শিকার হলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। 

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীন আখতার টিবিএসকে বলেন, 'যৌন হয়রানি ও বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণের ঘটনায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) যেসব ছাত্র জড়িত তাদের আজীবন বহিষ্কার করা হবে।'

রোববার (১৭ জুলাই) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রীতিলতা হল সংলগ্ন এলাকায় ৫ জন দুর্বৃত্তের হাতে যৌন নিপীড়ন ও হেনস্তার শিকার হন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী। ওই ছাত্রী তার বন্ধুসহ প্রীতিলতা হলে ফিরছিলেন। ঘটনার সময় শাওন ও সাইফুল নামের দুই বহিরাগত প্রথমে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে দেখতে পায়। পরে তারা কল দিয়ে অন্যদের ডেকে নেন ও ভুক্তভোগী ছাত্রীকে মারধর করতে থাকে। 

ওই সময় তার সাথে থাকা তার বন্ধু বাধা দিলে তাকে মারধর করা হয়। এরপর ওই ছাত্রীকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করা হয়। পরে তাদের কাছে থাকা মোবাইল ফোন ছিনতাই করে নিয়ে যায়।

এ ঘটনায় অজ্ঞাতনামা পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে হাটহাজারী থানায়। ভুক্তভোগী ছাত্রী নিজে বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলাটি করেন। মামলায় অজ্ঞাত ৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.