দাম কমানোর পরও আগের দামে বিক্রি হচ্ছে সয়াবিন তেল
- নতুন দামের সয়াবিন তেল এখনো বাজারে আসেনি
- ছোট দোকানে আগের বেশি দামে পণ্য বিক্রি হচ্ছে
- পাইকারি বাজারে পুরনো দামের সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে নতুন দামে
বিশ্ববাজারে দাম কমার পর সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ১৪ টাকা কমিয়ে বৃহস্পতিবার থেকে বাজারে নতুন দামে বিক্রির কথা থাকলেও খুচরা বাজারে অধিকাংশ স্থানেই বিক্রি হচ্ছে আগের দামে।
খুচরা বাজারে বেতলজাত সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৯০-২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
দাম কমানোর পরও ১৮৫ টাকা লিটার দরে সয়াবিন তেল কিনতে না পারায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ক্রেতারা।
তবে, খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন নতুন দাম কার্যকর হতে এবং নতুন দামের তেল বাজারে আসতে আরও এক সপ্তাহ সময় লাগতে পারে।
বিশ্ববাজারে সয়াবিনের দাম ৩২ শতাংশ কমলেও সরকার দাম কমিয়েছে লিটারে ১৪ টাকা। বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটার প্রতি ১৪ টাকা কমিয়ে ১৮৫ টাকা নির্ধারণ করে সরকার।
বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন ঘোষণা দিয়েছিল বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) থেকেই খুচরা বাজারে নতুন দামের সয়াবিন তেল পাওয়া যাবে।
তবে শুক্রবার রাজধানীর রামপুরা, মিরপুর, আগারগাঁও, নিউমার্কেট, হাতিরপুল বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ দোকানেই সয়াবিন তেল আগের দামে বিক্রি হচ্ছে।
আগারগাঁও এর তালতলা বাজারের সুলভ বাজার স্টোরের মো. সোহেল দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, বাজারে তেলের দাম কমেছে শুনেছি কিন্তু নতুন দামের তেল এখনও দোকানে আসেনি। আমাদের আগের রেটে কেনা তাই ২০০ টাকা লিটার দরেই বিক্রি করতে হচ্ছে।
এ বাজারের অন্য এক দোকানী আব্দুস সালাম টিবিএসকে বলেন, গত দুদিন আগেও তেল আগের রেটে কিনে রাখতে হয়েছে। বোতলের গায়ে রেট ১৯৯ টাকা। এখন ১৯০ করে বিক্রি করছি।
"দাম ১৮৫ টাকা করেছে, কিন্তু এতো লস দিয়ে বিক্রি করা সম্ভব না।
রামপুরা বাজারের সুপ্তি স্টোরের বেলায়েত হোসেন টিবিএসকে বলেন, গত কয়েকদিন ধরে কম্পানি দোকানে তেল দিচ্ছে না। নতুন দামের তেল দেওয়অর কথা কিন্তু এখনও দেয়নি। ১৯৯ টাকা লিটার এবং ৯৯০ টাকা ৫ লিটার দরেই বিক্রি করতে হচ্ছে। দোকানে তেলেরও সংকট।
শান্তিনগর বাজারের নারায়ণগঞ্জ স্টোরের সোবহান খান টিবিএসকে বলেন, কোম্পানি নতুন মূল্যের সয়াবিন তেল দেওয়ার কথা থাকলেও এখনও দেয়নি। গত দুই দিন আগে আগের মূল্যের তেল দিয়েছে সেটাই বিক্রি করতে হচ্ছে। আবার ভয়েও থাকতে হচ্ছে জরিমানার। তাই বোতলের গায়ে ৫ লিটারের দাম ৯৯০ টাকা লেখা থাকলেও আমরা ৯৫০-৯৬০ টাকায় বিক্রি করছি।
কাওরান বাজারের খুচরা মার্কেটের মা এন্টারপ্রাইজের মো. শরিফ টিবিএসকে বলেন, আমাদের পাইকারি মার্কেট এখানেই হওয়ায় দাম পরিবর্তন হলেই আমাদের পরিবর্তন করতে হয়। বোতলজাত সয়াবিনের গায়ে আগের রেট থাকলেও নতুন দামে কিনতে পেরেছি তাই নতুন দামেই বিক্রি করতে পারছি।
তিনি জানান, রুপচাঁদা কম্পানির তেল প্রতি লিটার ১৮৫ টাকা, ২ লিটারের বোতল ৩৭০ টাকা এবং ৫ লিটারের বোতল ৯১০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু সবগুলোর গায়ের মূল্য আগের বাড়তি দামই।
কাওরানবাজারের ফ্রেশ কম্পানির তেলের ডিলার আখি এন্টারপ্রাইজের নিজাম উদ্দিন দিপু টিবিএসকে বলেন, আমাদের এখানে অধিকাংশ তেলের কার্টুনই আগের মূল্যের কিন্তু আমরা বর্তমান মূল্যেই বাজারে দিচ্ছি। শুধুমাত্র ৫ লিটারের তেলের নতুন কার্টুন এসেছে।
তিনি জানান, ফ্রেশ কম্পানির সয়াবিন তেল পাইকারি মূল্য হচ্ছে: ৫ লিটার ৮৮০ টাকা, ২ লিটার ৩৬২ টাকা, ১ লিটার ১৮১ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া খোলা সয়াবিন প্রতি লিটার ১৬৬ টাকা এবং পাইকারি ১৬২ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
গত ৫ মে দেশে ভোজ্যতেলের দাম সরকার পুনঃনির্ধারণ করেছিল। ওই সময়ে সয়াবিনের দাম লিটার প্রতি ৩৮ টাকা বাড়ানো হয়েছিল।
এর আগে ২৬ জুন বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটার প্রতি ৬ টাকা কমিয়ে ১৯৯ টাকা নির্ধারণ করে মন্ত্রণালয়। বিশ্ববাজারে দাম কমার কারণে সয়াবিন ও পাম তেলের দাম কমে এসেছে।
বিশ্ববাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশ সম্প্রতি বোতলজাত সয়াবিন তেলের খুচরা মূল্য রেকর্ড পরিমাণ বেড়ে প্রতি লিটারে ২০৫ টাকা হয়। তবে গত মে থেকে বিশ্ববাজারে সয়াবিন ও পাম তেলের দাম ধারাবাহিকভাবে কমছে। বর্তমানে, অপরিশোধিত সয়াবিন প্রতি টন ১,৩২৪ ডলারে এবং পাম তেল প্রতি টন ৮৬৬.৭৫ ডলারে বিক্রি হচ্ছে।