চামড়া বিক্রি করে লোকসানে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা

বাংলাদেশ

টিবিএস রিপোর্ট
12 July, 2022, 09:45 am
Last modified: 12 July, 2022, 09:58 am
পোস্তায় রাতে ছোট গরুর চামড়া বিক্রি হয়েছে ২০০ টাকায়।  

চামড়ার বাজারে অস্থিরতায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। তাদের দাবি, ট্যানারি মালিক ও কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণে তারা দাম কম পেয়েছেন। তারা বলছেন, সাধারণ মানুষের কাছ থেকে তারা যে দামে চামড়া কিনেছেন, আড়তদারদের কাছে এর চেয়ে কম দামে বিক্রি করতে হয়েছে।

সোমবার বিকেল থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত পুরান ঢাকার পোস্তা এলাকায় গিয়ে অন্তত ১০ জন মৌসুমি ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। তবে বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয় তারা নির্ধারিত দামেই চামড়া কিনেছেন।

ঈদের দ্বিতীয় দিন সকাল থেকে রাজধানীর সবচেয়ে বড় কাঁচা চামড়ার বাজার খ্যাত পোস্তায় ছিলো না কাঁচা চামড়ার রমরমা বাণিজ্য। টুকটাক যতটুকু বিক্রি হয়েছে সেখানে চাহিদা ছিলো বড় গরুর চামড়ার। রাতে ছোট গরুর চামড়া বিক্রি হয়েছে ২০০ টাকা করে।

সোমবার বিকাল থেকে বড় আকারের গরুর চামড়া বিক্রি হয়েছে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা। আর ছোট গরুর চামড়া বিক্রি হয়েছে ২০০ টাকা করে।

মৌসুমি ব্যবসায়ীরা ক্ষোভ নিয়ে বলেন, তারা এবার তেমন লাভ করতে পারে নি। যে দামে চামড়া কিনেছে অনেক সময় কেনা দামেই বিক্রি করতে হয়েছে।

জুরাইন এলাকা থেকে সন্ধ্যায় পুরান ঢাকার পোস্তায় গরুর ৫টি চামড়া আনেন আমির হামজা। ৮০০ টাকা করে ৩টি বড় আকারের চামড়া বিক্রি করতে পারলেও ছোট ২টি চামড়া বিক্রি করেছেন ২০০ টাকায়। 

মোহম্মদ জাহাঙ্গীর ২০টি গরুর চামড়া বিক্রি করতে পোস্তায় আসেন। ১৬টি বড় আকারের চামড়া ৮০০ টাকা করে বিক্রি করেছেন। আর ৪টি ছোট চামড়া বিক্রি করেছেন ২০০ টাকা করে।

রাত ৯টার দিকে নাজিম উদ্দিন রোড এলাকা থেকে মোহম্মদ বিল্লাল ৯ পিস চামড়া পোস্তায় এনে ৪৫০ টাকা করে বিক্রি করেন। টিবিএসকে বিল্লাল বলেন, '৫০০ টাকা করে কেনা চামড়ার এখানে এসে দাম পেলাম না।' 

মৌসুমি ব্যবসায়ী মোহম্মদ ইমরান বলেন, '১৫০ পিস চামড়া সংগ্রহ করেছি। ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা করে চামড়া কিনেছি কিন্তু পোস্তার আড়তে এসে বিক্রি করেছি গড়ে ৭০০ টাকা করে। আমাদের তেমন লাভ হয়নি। আমাদের শ্রমের খরচ, গাড়িভাড়া দিয়ে নিয়ে এসেও দাম পেলাম না। আমার প্রশ্ন, ঈদের আগেও পোস্তায় ১৩০০ থেকে ১৫০০ টাকায় চামড়া কেনা হয়েছে, তাহলে এখন কেন ৭০০ টাকা হবে।'

ইমরান এ্যান্ড ব্রাদার্স আড়তের মালিক মোহাম্মদ ইমরান বলেন, 'আমরা চামড়া সংগ্রহ করার জন্য জনবল নিয়ে তৈরী ছিলাম, তারা অলস বসে রয়েছে। আগে ঈদের দ্বিতীয় দিন রাত ১০টার পরও ট্রাক ভরে চামড়া আসতো পোস্তায়। এখানে জ্যাম লেগে যেত ট্রাকের।' তিনি জানান ১০০০ হাজার পিস চামড়া তারা সংগ্রহ করেছেন। 

বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আফতাব খান বলেন, 'পোস্তায় প্রায় এক লাখ চামড়া ঢুকেছে, সেগুলো লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করা হয়েছে। গত বছর আমাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক লাখ ৫০ হাজার, সেটা পূরণ হয়েছিল। আমাদের সদস্য আছে ২৩৭ জন, এবার গরম থাকায় আমরা নির্দেশনা দিয়েছিলাম রাজধানীর বাইরের চামড়া যেন সেখানেই লবণ দিয়ে রাখা হয়। তাই কিছুটা কম চামড়া পোস্তায় এসেছে।

নারায়ণগঞ্জ, কেরানিগঞ্জ, হাজারিবাগ ও হেমায়েতপুরেও চামড়া সংরক্ষণ করা হয়েছে। আমাদের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে। আমরা এখানে ৪০০ থেকে ১০০০ টাকা করে চামড়া কিনেছি। এ চামড়া সরকার নির্ধারিত দামেই কেনা হয়েছে। কারণ লবণ ছাড়া চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয় নি। তাই অনুমানের উপর ভিত্তি করে চামড়া কিনতে হয়।'

পোস্তায় কেনা হয়নি ছাগলের চামড়া

আব্দুর রহমান ৩০০ পিস চামড়া নিয়ে এসে পোস্তায় আড়তে আড়তে ঘুরেও বিক্রি করতে পারে নি।

এ বিষয়ে আফতাব খান বলেন,  'আগে ২০টি ট্যানারি ছাগলের চামড়া কিনতো, এখন কিনে ২টি। তাই চাহিদা কম থাকায় ঢাকার ৫০ শতাংশ চামড়া নষ্ট হয়েছে।'

উল্লেখ্য, এ বছর লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া ঢাকায় ৪৭-৫২ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৪০-৪৪ টাকা, খাসির চামড়া সারাদেশে ১৮-২০ টাকা এবং বকরির চামড়া ১২-১৪ টাকা দরে নির্ধারণ করা হয়।

গতবছর কোরবানীর সময় ঢাকায় গরুর চামড়ার দর ৪০-৪৫ টাকা, ঢাকার বাইরে ৩৩-৩৭ টাকা, খাসি ১৫-১৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। 

 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.