৮ পুরুষ প্রার্থীকে হারিয়ে দিলেন খোদেসতা রীনা
কক্সবাজারের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে ইতিহাস গড়লেন রামু উপজেলার দক্ষিণ মিঠাছড়ির নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান খোদেসতা বেগম রীনা। সদ্যসমাপ্ত দ্বিতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী ৮ পুরুষ প্রার্থীকে পেছনে ফেলে সরাসরি ভোটযুদ্ধে চেয়ারম্যান হিসেবে জয়ী হয়েছেন রীনা।
আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীক নিয়ে বেসরকারিভাবে তিনি বিজয়ী হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন ইউনিয়নের রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা গৌর চন্দ্র দে।
গৌর চন্দ্র দে জানান, দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউনিয়নের ১৬ হাজার ১২৮ জন ভোটারের মধ্যে ১৩ হাজার ২৯২ জন ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। এর মধ্যে ২৯০টি ভোট বাতিল হয়। নৌকা প্রতীক নিয়ে খোদেসতা বেগম রীনা ৫ হাজার ৯১৫ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন।
ভোটযুদ্ধে রীনা বর্তমান চেয়ারম্যান মুহাম্মদ ইউনুছসহ ৮ পুরুষ প্রার্থীকে পরাজিত করেছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মো. ইউনুছ (টেবিল ফ্যান প্রতীকে) পেয়েছেন ৩ হাজার ৪৩৫ ভোট।
কক্সবাজার পৌরসভার প্যানেল মেয়র ও নারী কাউন্সিলর এবং মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী শাহিনা আকতার পাখি বলেন, 'কক্সবাজারেও নারীরা স্বতন্ত্র নেতৃত্বে এগোচ্ছে। খোদেসতা বেগম রীনা তারই উদাহরণ। আমরা সংরক্ষিত আসনে নির্বাচন করে জিতেছিলাম। কিন্তু রীনা আপু স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান পদে লড়াই করে বিজয়ী হয়েছেন। ওনার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বর্তমান ও সাবেক দুই চেয়ারম্যানসহ সবদিকে যোগ্য ৮ পুরুষ প্রার্থী।'
কক্সবাজারের নারী সাংসদ ও জেলা মহিলা আওয়ামী লীগ সভাপতি কানিজ ফাতেমা আহমেদ বলেন, 'খোদেসতা বেগম রীনা কক্সবাজারের জন্য ইতিহাস। এর আগে সরাসরি স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান পদে ভোটে কোনো নারী প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কিংবা জয়ের ইতিহাস নেই।'
তিনি আরও বলেন, 'দানে উদারহস্ত রীনাকে ব্যালট বিপ্লব ঘটিয়ে বিজয়ী করেছেন ইউনিয়নের সর্বস্তরের ভোটাররা। এটি গৌরবের।'
খোদেসতা বেগম রীনা বলেন, 'বাবা ও স্বামীর পরিবারের ঐতিহ্যগতভাবেই রাজনীতি ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত থাকা। অসহায় মানুষের সহায় হওয়ার শিক্ষা নিয়েই বাবার বাড়িতে বড় হয়েছি। স্বামীর বাড়ি এসেও একই কর্মকান্ডের সাথে সময় গেছে। মানুষের জন্য কাজ করা নিত্যদিনের রুটিন হিসেবে গণ্য। এ কাজে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনাদর্শই অনুকরণীয় আমার। তাই নৌকার কর্মী হিসেবে নীরবে কাজ করেছি। দলীকর্মী হিসেবে সাধারণ মানুষের কণ্ঠস্বর হয়ে পথ চলছি। কিন্তু কখনও ভাবিনি প্রকাশ্যে নির্বাচনে এসে জনমানুষের জন্য এভাবে দায়িত্ব কাঁধে নেব।
'দলীয় সিদ্ধান্তে নৌকা নিয়ে নির্বাচনী মাঠে দৌড়েছি। একজন নারী হয়েও আটজন প্রতিদ্বন্দ্বী পুরুষ প্রার্থীর সাথে লড়েছি, তাদের পেছনে ফেলে বিজয়ী হয়েছি। এটি আমার জীবনের বড় অভিজ্ঞতা হয়ে থাকবে।'
খোদেসতা রীনা তার দলের নেতাকর্মীসহ ইউনিয়নবাসীর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
খোদেসতা বেগম রীনা দক্ষিণ মিঠাইছড়ি ইউনিয়ন মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক। তার স্বামীও একাধিবার চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন। রীনার বাবা পিটিআই-এর সাবেক সুপারিন্টেন্ডেট এ. এফ. এম শামশুদ্দিন আহমেদ।
রীনা ১৯৮২ সালে চট্টগ্রামের পটিয়ার হাবিলাসদ্বীপ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, পটিয়ার হুলাইন সালেহ নূর ডিগ্রি কলেজ থেকে ১৯৮৪ সালে এইচএসসি এবং ১৯৯৪ সালে কক্সবাজার সরকারি কলেজ থেকে স্নাতক পাস করেন।