৩৬ শতাংশ নিয়োগদাতা দক্ষ কর্মী সংকটে ভুগছেন

বাংলাদেশ

টিবিএস রিপোর্ট
05 October, 2021, 10:20 am
Last modified: 05 October, 2021, 10:22 am
দেশের ২৫ থেকে ৫৪ বছরের মানুষের মধ্যে ৮২ শতাংশই কোন না কোন চাকুরিতে রয়েছে। কিন্তু তাদের মধ্যে মাত্র ৬.৩ শতাংশ প্রফেশনালস (কোন বিশেষ বিষয়ে দক্ষ) রয়েছে।

দেশের অর্থনীতি ক্রমে কৃষিনির্ভর থেকে শিল্পনির্ভর হচ্ছে। কিন্তু শিল্পখাতে দক্ষ কর্মীর অভাব রয়েছে। ৩৬ শতাংশ নিয়োগদাতাই দক্ষ ও বিশেষজ্ঞ কর্মী সংকটে ভুগছেন। বাংলাদেশে বছরে প্রায় ২.৩৪ মিলিয়ন দক্ষ কর্মী প্রয়োজন।

সোমবার জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের এক সেমিনারে এ তথ্য জানানো হয়েছে। রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের মাল্টিপারপাস হলে স্কিল ডেভেলপমেন্ট ফর ইনক্লুসিভ গ্রোথ ইন বাংলাদেশ' শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমেদ কায়কাউস। সভাপতিত্ব করেন জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান দুলাল কৃষ্ণ সাহা।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধে বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ এর সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী (পারভেজ) তিনি বলেন, ইন্ডাস্ট্রির চাহিদা অনুয়ায়ী দক্ষ কর্মী গড়ে তুলতে হবে। সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে ৩০ মিলিয়ন দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতে চায়। বর্তমানে বছরে দেশে ১.৮৪ মিলিয়ন এবং বিদেশে .৫ মিলিয়ন দক্ষ জনশক্তির চাহিদা রয়েছে।

তিনি বলেন, বর্তমানে বছরে দেশে ২.১ মিলিয়ন মানুষ শ্রমবাজারে যোগ হচ্ছে। দেশের ২৫ থেকে ৫৪ বছরের মানুষের মধ্যে ৮২ শতাংশই কোন না কোন চাকুরিতে রয়েছে। কিন্তু তাদের মধ্যে মাত্র ৬.৩ শতাংশ প্রফেশনালস (কোন বিশেষ বিষয়ে দক্ষ) রয়েছে। ৫৩ শতাংশ টেকনিক্যাল ও মোটামুটি দক্ষ এবং ৪০.৭ শতাংশ একেবারেই অদক্ষ। সরকার ২০২৫ সালের মধ্যে ১৫০ বিলিয়ন রেমিট্যান্স আহরণ করতে চায়। কিন্তু তার জন্য প্রায় ৮ মিলিয়ন দক্ষ কর্মীর প্রয়োজন, যা বর্তমানে ২.৬ মিলিয়ন রয়েছে।

পারভেজ বলেন, বাংলাদেশে প্রায় ১৬.৯ কোটি মানুষের মধ্যে ৭০ শতাংশ মানুষ কর্মক্ষম। বেকারত্বের হার ১২.৩ শতাংশ। ২০৩০ সালের মধ্যে ১৮-৩৫ বছর বয়সী জনসংখ্যার পরিমাণ দাঁড়াবে ৬ কোটিতে। এ বিপুল যুব জনগোষ্ঠীকে দক্ষতা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দেশ ও বিদেশের শ্রমবাজারের চাহিদার উপযোগী করে গড়ে তোলা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে বিভিন্ন পলিসি প্রণয়নে সরকারকে সহযোগিতার জন্য ব্যবসায়ীদেরও আহ্বান জানান তিনি।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. আহমদ কায়কাউস বলেন, সরকারের রূপকল্প ২০২১, টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জন, ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হওয়া এবং ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দক্ষ জনবল গড়ে তোলার বিকল্প নেই। দক্ষ জনবল তৈরির মাধ্যমে বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন সহজতর হবে। 

তিনি বলেন, করোনা মহামারির কারণে দীর্ঘ সময় ধরে যুবসমাজের একটি অংশ প্রশিক্ষণের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছে। অনেক অংশ কাজ হারিয়েছে। অস্বাভাবিক এ সময়ে পেশার ক্ষেত্রেও বৈচিত্র্য তৈরি হয়েছে। করোনাকালীন মানুষ ব্যাপকভাবে ডিজিটাল প্লাটফর্ম-নির্ভর হয়েছে। বাংলাদেশে এই বিষয়টি অভাবনীয় আশার সঞ্চার করেছে। ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে আয়ের পরিমাণ বেড়েছে। ফলে বিশেষ করে করোনা-পরবর্তী সময়ে সামাজিক ও পেশাগত পরিবর্তনগুলো বিবেচনায় নিয়ে পরিকল্পনা প্রণয়ন করা জরুরী হয়ে পড়েছে। এ লক্ষ্যে দক্ষতা উন্নয়নে প্রচলিত প্রশিক্ষণ কোর্সের কার্যকারিতা বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি আধুনিক ও আগামীর প্রযুক্তির চিন্তা মাথায় রেখে স্ট্যান্ডার্ড ও প্রশিক্ষণ কারিকুলাম প্রণয়ন করা প্রয়োজন।

মুখ্য আলোচক অধ্যাপক মো. হাবিবুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে প্রতি বছর শ্রমবাজারে প্রায় ২২ লাখ যুব যুক্ত হচ্ছে। তাই ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের সুযোগ কাজে লাগানোর এখনই প্রকৃত সময়। কর্মক্ষম জনবলকে দক্ষ মানবসম্পদে রূপান্তরের মাধ্যমে একদিকে উৎপাদনশীলতা যেমন বৃদ্ধি পাবে, অন্যদিকে দক্ষ জনবল বিদেশে প্রেরণের মাধ্যমে প্রচুর পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে।

সভাপতির বক্তব্যে দুলাল কৃষ্ণ সাহা বলেন, কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীকে শ্রমবাজারের চাহিদা অনুযায়ী দক্ষ করে গড়ে তোলা অতীব প্রয়োজন। দেশীয় ও আর্ন্তজাতিক শ্রমবাজারের চাহিদা অনুযায়ী দক্ষ মানবসম্পদে রূপান্তরের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর দিক নির্দেশনায় জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কাজ করছে। তবে দেশের দক্ষতা উন্নয়নের চিত্রটি খুব আশাপ্রদ নয়। ইন্ডাস্ট্রি এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সংযোগ হয়নি। এটা কাগজে কলমেই রয়েছে। এখনো ইন্ডাস্ট্রি এক্সপার্টকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতে দেয়া হচ্ছে না। শ্রমশক্তি জরিপ ২০১৬-২০১৭ অনুযায়ী, শ্রমশক্তির ৮৫.১ শতাংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে রয়েছে। এর মধ্যে ৩৯.৯% এর কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই। অন্য দিকে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর ২৯.৮% কোন ধরনের শিক্ষা, শ্রম বা প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পৃক্ত নয়। তাই বৃহৎ অনানুষ্ঠানিক খাতের পাশাপাশি বিপুল সংখ্যক স্বল্প শিক্ষিত শ্রমজীবি মানুষকে দক্ষ করে তোলা আমাদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তিনি বলেন, আমাদের দক্ষ প্রশিক্ষক প্রয়োজন। এর সংকট রয়েছে। 

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্ডাস্ট্রিয়াল এন্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. আহমেদ সায়েম   বলেন, ন্যাশনাল কোয়ালিফিকেশন ফ্রেমওয়ার্ক প্রয়োজন। কোন সেক্টরে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে, কোন সেক্টরে কত লোক প্রয়োজন, তা আগে নিরূপণ করতে হবে। সে অনুযায়ী কারিকুলাম ডেভলপ করতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সাহাদাত হোসেন সিদ্দিকিও অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।   

 
 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.