৩৬ বছরেও শুরু হয়নি অস্ট্রেলিয়ায় চ্যান্সেরি ভবনের নির্মাণ কাজ

বাংলাদেশ

18 March, 2021, 01:10 pm
Last modified: 18 March, 2021, 01:12 pm
আগামী বছরের আগস্টের মধ্যে ভবনটি নির্মাণের কাজ শুরু করতে না পারলে জমির বরাদ্দ আবারও বাতিল হয়ে যাবে।

আড়াই হাজার বর্গমিটার আয়তনের একটি ভবন নির্মাণে কত বছর সময় ব্যয় করা যৌক্তিক? এ ধরনের নির্মাণ কাজে সাধারণত তিন বছরের সময়সীমা দেওয়া থাকে। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা আর ভূমির স্বল্পতার কারণে ভবনের কাজ শেষ হতে পাঁচ বছরও লেগে যায়।

তবে জমির বরাদ্দ পাওয়ার ৩৬ বছরেও অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশের নিজস্ব চ্যান্সেরি ভবন নির্মাণের কাজ শুরুই হয়নি। ১৯৮৫ সালে জমি পাওয়ার পর ১৯৯৯ সালে একবার ভবন নির্মাণের উদ্বোধন করা হলেও কাজ শুরু না হওয়ায় অস্ট্রেলিয়ার সরকার বরাদ্দ বাতিল করে।

২০১১ সালে আবারও ১০ কোটি টাকার বেশি ব্যয়ে জমি কেনা হলেও এখনো ভবন নির্মাণের কাজ কাগজেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। আগামী বছরের মধ্যে কাজ শুরু না হলে আবারও জমি হাতছাড়া হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এ বাস্তবতার মধ্যেই চলতি বছরের শুরুতে ১৪৬.৮৭ কোটি টাকা ব্যয় ধরে 'অস্ট্রেলিয়ার ক্যানবেরায় বাংলাদেশ চ্যান্সেরি ভবন নির্মাণ' শীর্ষক প্রকল্পের প্রস্তাবনা পরিকল্পনা কমিশনে পাঠায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

এ প্রস্তাবের ওপর দুই দফায় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভার আয়োজন করে কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগ।

পিইসি সভার কার্যবিবরণীতে বলা হয়েছে, স্বাধীন বাংলাদেশকে প্রথম দিকে স্বীকৃতি দেওয়া দেশের তালিকায় অস্ট্রেলিয়া চতুর্থ। গত দশকে দেশটির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য কয়েক গুণ বেড়েছে। এ সময়ে দেশটিতে বাংলাদেশি ডায়াসপোরার সংখ্যা বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি। বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের কাছে অস্ট্রেলিয়া এখন উচ্চশিক্ষার আদর্শ গন্তব্য। এ সব কিছু বিবেচনায় দেশটিতে আগামী চার বছরে বাণিজ্যের পরিমাণ দ্বিগুণ বাড়বে।

এতে আরও বলা হয়, ক্যানবেরায় বর্তমানে ১ হাজার ৫৯০ বর্গমিটার আয়তনের একটি ভাড়া বাড়ি থেকে বাংলাদেশের হাইকমিশনের কাজ চলছে। এ ফ্ল্যাটের আকার প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। তা ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে হাইকমিশনের কাজের পরিধি বেড়েছে।

এতে আরও বলা হয়, আটজন কূটনীতিকের মধ্যে দুজনের আলাদা কক্ষ না থাকায় তাদেরকে অন্য স্টাফদের সঙ্গে বসে কাজ করতে হচ্ছে। তা ছাড়া অফিস ভাড়ার পাশাপাশি বিভিন্ন জাতীয় দিবস আয়োজনের ভেন্যু ভাড়া বাবদ বিপুল পরিমাণে অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ভবিষ্যতে সাহায্য ও বাণিজ্যের বৃত্ত থেকে বের হয়ে দেশটি বাংলাদেশের নির্ভরযোগ্য অংশীদারে রূপান্তরিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। বিষয়টি বিবেচনায় আগামী চার যুগের চাহিদা সামনে রেখে কমপক্ষে ১০ জন কূটনীতিক, ১২ জন প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং পাঁচজন চালকের জন্য স্পেস রাখা প্রয়োজন। এ চাহিদা পূরণে প্রকল্পটির প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।

উদ্যোগ শুরু ৩৬ বছর আগে

বাংলাদেশের চ্যান্সেরি ভবন নির্মাণ করতে সরকারের আবেদনের প্রেক্ষিতে ১৯৮৫ সালে ১১০ কাঠা জমি বরাদ্দ দেয় অস্ট্রেলিয়ার সরকার। ১৯৯৯ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ভবন নির্মাণের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনও ঘোষণা করেন। তবে ২০০৪ সাল পর্যন্ত মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু না হওয়ায় অস্ট্রেলিয়া সরকার জমির এ বরাদ্দ বাতিল করে।

২০১১ সালে আবারও চ্যান্সেরি ভবন নির্মাণের লক্ষ্যে অস্ট্রেলিয়ার কাছে জমি চায় সরকার। আবেদনের প্রেক্ষিতে ১০ কোটি টাকার বেশি মূল্য পরিশোধ সাপেক্ষে ৭৪ কাঠা জমি বরাদ্দ দেয় অস্ট্রেলিয়া সরকার। আগের জমি থেকে ভারতকে ৩৭ কাঠা জমি বরাদ্দ দেওয়ায় বাংলাদেশের প্লটের আকার দুই-তৃতীয়াংশে নেমে আসে।

ছোট পরিসরে হবে চ্যান্সেরি ভবন

বিলম্বের খেসারত হিসেবে বরাদ্দ পাওয়া ৩৭ কাঠা জমি চলে যাওয়ায় চ্যান্সেরি নির্মাণ করতে বাংলাদেশের জন্য বরাদ্দ জমির পরিমাণ ৪ হাজার ৯৬৫ বর্গমিটারে নেমে এসেছে। একই এলাকায় ১২ হাজার ২২১ বর্গমিটার জমিতে পাকিস্তানের হাইকমিশন স্থাপন করা হয়েছে। তা ছাড়া ভারত, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়াসহ অনেক দেশের চ্যান্সেরি ভবনের চেয়ে বাংলাদেশের জন্য বরাদ্দ দেয়া জমির পরিমাণ কম।

এ বাস্তবতা বিবেচনায় বরাদ্দ পাওয়া জমিতে শুধু চ্যান্সেরি ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দেশটিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনারসহ অন্যান্য কূটনীতিকের বাসস্থানের ব্যবস্থা অন্যত্র করা হবে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা দুই দফায় দেশটি সফর করে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে প্রকল্প দলিলে বলা হয়েছে।

কাজ শুরুতে বিলম্ব হলে আবারও বাতিল হবে জমির বরাদ্দ

আগামী বছরের আগস্টের মধ্যে ভবনটি নির্মাণের কাজ শুরু করতে না পারলে এক ধরনের বিরল প্রজাপতি রক্ষার লক্ষ্যে জমির বরাদ্দ আবারও বাতিল হবে বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

তারা বলেছেন, দ্বিতীয় দফায় জমি বরাদ্দ পাওয়ার পর ভবন নির্মাণ শুরুর বাধ্যবাধকতা হিসেবে 'এনভায়রনমেন্টাল অ্যাসেসমেন্ট সার্ভে' পরিচালনা করে অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাস। এ সমীক্ষায় এলাকাটিকে 'গোল্ডেন সান মথ' নামে এক ধরনের বিরল প্রজাপতির প্রজনন স্থান হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

অস্ট্রেলিয়ার পরিবেশ সংক্রান্ত আদালতে দীর্ঘ পর্যালোচনার পর ২০১৭ সালের আগস্টে পরবর্তী পাঁচ বছরের মধ্যে কাজ শুরু করার শর্তে ভবন নির্মাণের অনুমতি দেওয়া হয়। এ হিসাবে আগামী বছরের আগস্টেই কাজ শুরু করতে হবে।

অস্ট্রেলিয়ায় বাড়বে বাণিজ্য

অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য, বিশেষ করে রপ্তানি আয় আগামী কয়েক বছরে ব্যাপক হারে বাড়বে বলে আশা করছে সরকার।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, ২০১০ সালের ১ বিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলার থেকে বেড়ে বর্তমানে দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ২.৭ বিলিয়ন ডলারে উঠেছে। ২০৩০ সালে এর পরিমাণ দাঁড়াবে ৭ বিলিয়নে। এ হিসাবে ১০ বছরে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বাড়বে ২.৫৯ গুণ।

তবে এ সময়ে অস্ট্রেলিয়ায় রপ্তানি আয় তিন গুণ বেড়ে দাঁড়াবে ৩.৫ বিলিয়নে। বাংলাদেশ থেকে শিক্ষার্থী গমনের সংখ্যা বছরে ৬ হাজার থেকে বেড়ে দাঁড়াবে ১৫ হাজারে। আর ডায়াসপোরার সংখ্যা ২৮ হাজার থেকে সাত গুণ বেড়ে দাঁড়াবে দুই লাখে।

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.