১৮ পাহাড় কেটে তৈরী সড়ককে এখন নিজেরাই ‍‘ঝুঁকিপূর্ণ’ বলছে সিডিএ 

বাংলাদেশ

11 June, 2021, 10:10 am
Last modified: 11 June, 2021, 10:13 am
৬ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের জন্য ১৮টি পাহাড় কাটা হয়েছে। সিডিএ কে ২৬ ডিগ্রি কোণ করে পাহাড় কাটতে বললেও তারা ৯০ ডিগ্রি কোণে পাহাড় কেটেছে। ফলে যে কোন সময় ভূমিধসের আশঙ্কা রয়েছে।

নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে ১৮টি পাহাড় কেটে তৈরী চট্টগ্রামের বায়েজিদ-ফৌজদারহাট লিংক রোডকে এবার নিজেরাই 'ঝুঁকিপূর্ণ' ঘোষণা করেছে সড়কটির নির্মাণকারী সংস্থা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। আগামী তিন মাসের জন্য এই সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে সংস্থাটি। 

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফৌজদারহাট অংশ থেকে নগরীর বায়েজিদ পর্যন্ত প্রায় ছয় কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই সড়কটি নির্মাণে প্রায় ১৮টি পাহাড় কাটা হয়। পাহাড়গুলো খাড়াভাবে কাটায় সেগুলো ধসে বড় বিপর্যয়ের শঙ্কা তৈরি হয়েছে। রোববার (৬ জুন) চট্টগ্রামে ভারি বৃষ্টির পর ওই সড়কের কয়েকটি স্থানে সংলগ্ন পাহাড়ের অংশবিশেষ ধসে পড়ে। এ কারণে যান চলাচল বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় সিডিএ। এ অবস্থায় প্রকৃতিবিনাশী এই প্রকল্প নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন চট্টগ্রামের সচেতন মহল। 

সিডিএ'র প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, ‌"সড়কটি এখনো আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়নি। তারপরেও গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে এই সড়কে যান চলাচল শুরু হয়। কিন্তু সড়কের পাশের ১৮ টি পাহাড়ের মধ্যে কয়েকটি পাহাড় এখনো ঝুঁকিপূর্ণ। সেগুলো মূলত বালির পাহাড়। ভাড়ী বর্ষণে দুর্ঘটনার শঙ্কায় সড়কটিতে যান চলাচল বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।" 

যে আশঙ্কা করা হয়েছিল আগেই 

সিডিএ সড়কটি নির্মাণের কাজ শুরু করেছিল পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে পরিবেশের কী ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হবে তাও নিরূপণ করেনি সিডিএ। পরে পরিবেশ অধিদপ্তর তাদের বিরুদ্ধে হিল কাটিং ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে দুই দফায় ১০ কোটি ৩৮ লাখ ২৯ হাজার ৫৫৩ টাকা জরিমানা করে।  

২০২০ সালে প্রকল্প স্থান সফর করে পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রফিক আহমেদ জানান, ৬ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের জন্য ১৮টি পাহাড় কাটা হয়েছে। সিডিএ কে ২৬ ডিগ্রি কোণ করে পাহাড় কাটতে বললেও তারা ৯০ ডিগ্রি কোণে পাহাড় কেটেছে। ফলে যে কোন সময় ভূমিধসের আশঙ্কা রয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিডিএ'র প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, "ইতোমধ্যেই রাস্তার দুইপাশে থাকা এসব পাহাড় আবার নতুন করে কেটে 'ঝুঁকি কমানোর' প্রস্তাব দিয়েছে সিডিএ।"  

পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগরের উপ-পরিচালক মিয়া মাহমুদুল হক বলেন, "যে শঙ্কার কথা আমরা কয়েক বছর আগে বলেছি, সেটা তারা আজ বলছে। সিডিএ আবারো পাহাড় কাটার জন্য আবেদন করেছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের পরামর্শে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটিও করেছে তারা। কিন্তু তাদের সে কমিটি এখনও প্রতিবেদন জমা দেয়নি।"

পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের সহসভাপতি প্রকৌশলী সুভাষ বড়ুয়া বলেন, "এ প্রকল্পের ক্ষেত্রে সিডিএ টেকনিক্যাল বিশেষজ্ঞ, পরিবেশ বিশেষজ্ঞ এমনকি সাধারণ মানুষ, কারও কথা শোনেনি। ১৮টি পাহাড় কেটেছে, সেটাও পরিকল্পিতভাবে কাটেনি। এখন আবার নিজেরাই প্রকল্পটি ঝুঁকিপূর্ণ বলছে। মূলত পুরোনো কথা নতুন করে বলে আবারো বরাদ্দ পাওয়ার সুযোগ তৈরী করা হচ্ছে। সিডিএ'র বর্তমান এই পর্ষদ দিয়ে আমরা কোনো অবস্থায় চট্টগ্রামকে বাসযোগ্য পরিকল্পিত নগর গড়ে তুলতে পারবো না।"  

 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.