হোটেল-রেস্টুরেন্টের গ্রেডিং কার্যক্রমে গতি নেই

বাংলাদেশ

21 February, 2021, 01:45 pm
Last modified: 21 February, 2021, 01:49 pm
রাজধানীতে ২০১৯ সালের শুরুতেই ৫৭টি হোটেল-রেস্টুরেন্টকে তাদের মান অনুযায়ী গ্রেডিং প্রদান করার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (বিএফএসএ) গ্রেডিং কার্যক্রম শুরু করে।

ঢাকার সব হোটেল-রেস্টুরেন্টকে গ্রেডিংয়ের আওতায় আনার কথা থাকলেও কার্যক্রম শুরুর পর দুই বছর পেরিয়ে গেছে। অথচ এ কাজে এখন আর খুব একটা গতি নেই। নামমাত্র কিছু অভিযানের মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে তদারকির কার্যক্রম।

রাজধানীতে ২০১৯ সালের শুরুতেই ৫৭টি হোটেল-রেস্টুরেন্টকে তাদের মান অনুযায়ী গ্রেডিং প্রদান করার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (বিএফএসএ) গ্রেডিং কার্যক্রম শুরু করে। যেন গ্রেড দেখেই ভোক্তারা বুঝতে পারেন, কোন হোটেলের পরিবেশ-খাবারের মান কেমন।

বিএফএসএ'র একজন কর্মকর্তা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'গ্রেডিং কার্যক্রম পরিচালনা ও মনিটরিং করার জন্য যে লোকবল দরকার, সে পরিমাণ লোকবল নেই। যার কারণে দুই বছর পেরিয়ে গেলেও তা বিস্তৃত হয়নি। পদক্ষেপটি নিয়ে শুরুতে ভোক্তাদের মধ্যে যে পরিমাণ উচ্ছ্বাস ছিল, সেটাও ধীরে ধীরে ফিকে হয়ে গিয়েছে।'

বিএফএসএ মোট চার ক্যাটাগরিতে গ্রেডিং করে থাকে। সবচেয়ে ভালো মানের রেস্টুরেন্টকে এ প্লাস, এর চেয়ে কম ভালোকে এ, সাধারণ মানের হোটেলকে বি গ্রেড ধরা হয়। আর যেগুলো একেবারে খারাপ মানের, সেগুলোকে এক মাসের নোটিশ প্রদান করে সি গ্রেড প্রদান করা হয়।

বিএফএসএ কর্তৃক এখন পর্যন্ত গ্রেড প্রদান করা হোটেল-রেস্টুরেন্টের সংখ্যা মাত্র ৮৭। এরমধ্যে ১৯টি এ প্লাস, ৫৫টি এ, ৯টি বি ও ৪টি হোটেলকে সি গ্রেডের আওতায় আনা হয়েছে। আরও নতুন ১৫টি হোটেল-রেস্তোরাঁকে গ্রেডিং প্রদান করার কার্যক্রম চলমান।

বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সভাপতি রুহুল আমিন খন্দকার টিবিএসকে জানান, তাদের এক হিসেবে দেশে হোটেল-রেস্তোরাঁর সংখ্যা প্রায় ৬০ হাজার। এরমধ্যে ঢাকায় ১০ হাজারের কাছাকাছি।

এদিকে যে রেস্টুরেন্টগুলোকে গ্রেড প্রদান করা হয়েছে সেগুলো লোকবল সংকটে নিয়মিত নজরদারি করা যাচ্ছে না বলে টিবিএসকে জানিয়েছেন বিএফএসএ'র প্রধান কার্যালয়ের মনিটরিং অফিসার মোহাম্মদ ইমরান হোসেন মোল্লা।

তিনি বলেন, 'গ্রেডিং প্রদান করা রেস্টুরেন্টগুলোকে যেভাবে নজরদারি করা উচিত, সেভাবে করা হচ্ছে না। যদিও প্রতিনিয়তই মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে এসব হোটেলে নজরদারি করার কথা। আর আইন না মানলে জরিমানা করতে হবে। তাও ঠিকঠাকভাবে হচ্ছে না।'

'খাদ্য নিরাপত্তা আইন ২০১৩'-এর অধীনে ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে খাদ্যে ভেজাল রোধ ও মান নিয়ন্ত্রণে গড়ে তোলা হয় 'নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ'। সংস্থাটির ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা ও খাদ্য নিরাপত্তা আইন অনুযায়ী অপরাধীদের শাস্তি দেওয়ার এখতিয়ার রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত জুলাই থেকে ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত শুধু রাজধানীতে মাত্র ৬০টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়েছে; এ সময় ৭৩টি প্রতিষ্ঠানকে নানা অভিযোগে ৮৭ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়, আর দুজনকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

এদিকে প্রতিষ্ঠার পর থেকে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ গত ৫ বছরে ৬৪ জেলায় ১২০টি মামলা দায়ের করেছে। আর প্রতিষ্ঠানটি এখন পর্যন্ত মোট ২৬১টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেছে।

সরেজমিনে যা দেখা গেল

রাজধানীর প্রেস ক্লাবের উল্টোদিকে অবস্থিত ক্যাফে বৈশাখি রেস্তোরাঁ। এটি এ গ্রেডের। শুক্রবার দুপুরে গিয়ে দেখা গেল, তিনজন পাচকের মধ্যে একজনের গায়ে ঠিকঠাক পোশাক রয়েছে। বাকিরা সাধারণ পোশাক পরিধান করে রান্নার কাজ করছেন। আর রান্না করা খাবারগুলো ঢাকনা ছাড়াই বিভিন্ন পাত্রে রাখা হয়েছে। যার ওপর মাছি ঘুরছিল। আর যে তিনজন খাবার পরিবেশন করছিলেন, তারা নির্দিষ্ট পোশাক পরিধান করলেও কারও মুখে মাস্ক, হাতে গ্লাভস ছিল না।

প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজার তানভীর আহেমেদ টিবিএসকে বলেন, 'আমরাও চাই নিয়ম মেনে রেস্তোরাঁ পরিচালনা করতে। কারণ এই খাবার তো আমরাও খাই। কিন্তু সব সময় শতভাগ নিয়ম মেনে চলতে পারি না। আরেকটা বিষয়, আশেপাশে যা দেখি, তাতে মনে হয় আইন সবার জন্য সমান নয়। আইনের যথাযথ প্রয়োগ করতে হবে। তবে গ্রেডিং কার্যক্রম যখন শুরু হয়েছিল, তখন যেমন তৎপরতা ছিল, এখন আর ততটা নেই।'

বাইতুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেটের বিপরীতে অবস্থিত খানা বাসমতি রেস্টুরেন্টটিও 'এ' গ্রেড পাওয়া। প্রতিষ্ঠানটির ভেতর গিয়ে দেখা যায়, একটি মনিটর লাগানো রয়েছে ভোক্তাদের বসার স্থানের ওপরে। সেখানে সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে রান্নাঘরের চিত্র দেখা যাচ্ছে।

চারজন পাচকের দুজন ঠিকঠাক পোশাক পরিহিত অবস্থায় থাকলেও বাকি দুজন সাধারণ পোশাকে ছিলেন। কার হাতে গ্লাভস ও মুখে মাস্ক ছিল না। রান্না করা খাবারগুলো ঢাকনা দিয়ে ঢাকাও ছিল না। আর ওয়েটাররা ড্রেস পরিধান করলেও তাদের মুখে মাস্ক ও হাতে গ্লাভস ছিল না।

প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজার কায়সার হাবিব টিবিএসকে বলেন, 'আজ তো শুক্রবার। নামাজ পড়া শেষেই অনেকে খেতে চলে এসেছেন। তাড়াহুড়োর কারণে ওয়েটাররা পোশাক ও সুরক্ষা সামগ্রী পরিধান করার সুযোগ পাননি। যদিও এমনটা খুব একটা ঘটে না। আমরা নিয়ম মেনে ব্যবসা পরিচালনা করার চেষ্টা করি। আমাদের খাবারের সুনাম রয়েছে।'

তবে 'এ' প্লাস পাওয়া পল্টনের কস্তুরি রেস্টুরেন্ট, হান্ডি, দৈনিক বাংলার মোড়ের 'এ' গ্রেড পাওয়া ফুড ল্যাব রেস্টুরেন্ট অ্যান্ড ক্যাফেসহ কয়েকটি হোটেলে-রেস্তোরাঁতে বেশ পরিচ্ছন্ন পরিবেশে রান্না ও খাবার পরিবেশন করতে দেখা গেছে।

সার্বিক বিষয়ে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মো. কাউয়্যুম সরকার টিবিএসকে বলেন, 'হোটেল রেস্টুরেন্টগুলোর গ্রেডিং প্রদান করার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। অনেকদিন ধরেই বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানকে যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। তাদেরকে একসঙ্গে গ্রেডিং প্রদান করা হবে। আবার গ্রেড পাওয়া অনেক প্রতিষ্ঠানের মান কমে গেছে। তাদের গ্রেডের অবনমন হবে।'

তিনি বলেন, 'তবে এর আগে রোস্তোরাঁ বিধিমালা নামে একটি আইন প্রণয়নের কাজ করছে বিএফএসএ। এই আইন দ্রুত সময়ের মধ্যেই প্রণয়ন করা হবে, যেন সবাইকেই এই আইনের আওতায় আনা যায়। যারা গ্রেডে থাকবে আর যারা বাইরে থাকবে সবাইকেই এর আওতায় আনা হবে।'

লিখিত অভিযোগ কম, ফেসবুকে বেশি

এদিকে ভোক্তরা চাইলে যেসব হোটেল-রেস্টুরেন্ট নিয়ম মানছে না, তাদের বিরুদ্ধে বিএফএসএ'তে লিখিত ও প্রতিষ্ঠানটির ফেসবুক পেজে গিয়ে অভিযোগ জানাতে পারবেন।

ইমরান হোসেন মোল্লা টিবিএসকে বলেন, 'আমরা লিখিত অভিযোগ কম পাই। সবচেয়ে বেশি অভিযোগ পাই আমাদের প্রতিষ্ঠানের ফেসবুক পেজে। লিখিত অভিযোগ দেওয়ার প্রক্রিয়াটা অনেক দীর্ঘ। এ কারণে লিখিত অভিযোগ কম আসে।'

তবে গত এক বছরে লিখিত ও ফেসবুকে পেজে কয়টি অভিযোগ জমা পড়েছে, সেই সংখ্যা টিবিএসকে জানাতে পারেনি বিএফএসএ কর্তৃপক্ষ।

অ্যাপসের মাধ্যমে মনিটরিং

হোটেল-রেস্টুরেন্টের মনিটরিং কার্যক্রম দেখভাল করার জন্য ২০১৯ সালের মধ্যে ৬৪টি জেলায় নজর অ্যাপস নামে একটি অ্যাপ পাইলটিং করার কথা ছিল নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের। সেই কার্যক্রমও থমকে আছে। বর্তমানে মাত্র ৫টি হোটেল-রোস্তারাঁয় নজর অ্যাপস চলমান।

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.