সিনহা হত্যা: তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে দৃষ্টি সবার   

বাংলাদেশ

সায়ীদ আলমগীর, কক্সবাজার
06 September, 2020, 09:05 pm
Last modified: 06 September, 2020, 09:09 pm
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গঠিত কমিটির ১৩টি সুপারিশ ও ৫৮৬ পৃষ্ঠার সংযুক্তিসহ তৈরি ৮০ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন সোমবার মন্ত্রণালয়ে জমা হবে।

অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খানের মৃত্যুজনিত ঘটনা তদন্তে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গঠিত কমিটির প্রতিবেদনে দৃষ্টি নিবন্ধিত রয়েছে সবার। ১৩টি সুপারিশ ও ৫৮৬ পৃষ্ঠার সংযুক্তিসহ তৈরি ৮০ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন সোমবার (৭ সেপ্টেম্বর) নির্ধারিত দিনে মন্ত্রণালয়ে জমা হতে যাওয়ার তথ্য প্রচারের পর তাতে কি উঠে আসবে, তা জানতে উন্মুখ হয়ে আছেন সব শ্রেণি-পেশার মানুষ।

গত ৩১ জুলাই রাত ১০টার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকত আলীর গুলিতে নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা। এ ঘটনা প্রকাশের পর দেশজুড়ে নিন্দার ঝড় উঠলে ঘটনার উৎস, কারণ ও ভবিষ্যতে এমন ঘটনা যেন না ঘটে, তার সুপারিশ দেওয়ার কথা উল্লেখ করে ২ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি কমিটি গঠন করে। 

কমিটি কার্যক্রম শুরু করে ৩ আগস্ট। সাত কর্মদিবস, অর্থাৎ ১০ আগস্ট কমিটিকে প্রতিবেদন জমাদানের সময় বেঁধে দেয় মন্ত্রণালয়। এরপর প্রথমবার কমিটির সময় বাড়ানো হয় ২৩ আগস্ট পর্যন্ত।

পরে কমিটির আবেদনের প্রেক্ষিতে আবারও সময় বাড়িয়ে দেওয়া হয় ৩১ আগস্ট পর্যন্ত। এ সময়ের মধ্যে ঘটনার অন্যতম অভিযুক্ত  টেকনাফ থানার বহিষ্কৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাশের বক্তব্য গ্রহণ করতে না পারায় কমিটির মেয়াদ সর্বশেষ ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়। 

২ সেপ্টেম্বর কমিটি কক্সবাজার জেলা কারাগার ফটকে প্রদীপ কুমার দাশের বক্তব্য গ্রহণ করে। এরপরই কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি সমাপ্ত করেন এবং নির্ধারিত সময়ে তা জমা দেওয়ার ঘোষণা দেন ৫  সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায়।

এরপর থেকেই সবার দৃষ্টি তদন্ত প্রতিবেদনে নিবন্ধিত হয়ে আছে। সবার মাঝে আলোচনা একটাই, কমিটি কী কী পেয়েছে।

ওসি প্রদীপ কুমার দাশের হাতে অমানবিকভাবে নির্যাতিত সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফা খান বলেন, 'ওসি প্রদীপের বেআইনি হত্যার শিকার হয়েছে প্রায় ২ শতাধিক মানুষ। সেই সঙ্গে নিঃস্ব হয়েছে এসব মানুষের পরিবারসহ হাজারও পরিবার। চলেছে নির্বিচারে নিপীড়ন। এইসব অপকর্মের বিরুদ্ধে কলম ধরতে গিয়ে তার বাহিনীর অমানবিক নির্যাতনের শিকার হয়েছি আমি। নির্যাতনের ভয়ে অনেকে মুখ না খুলে চুপ মেরে বসেছিল। এখন আমাদের সবার দৃষ্টিটা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে হস্তান্তরকৃত প্রতিবেদনের দিকে।' 

কক্সবাজার সিভিল সোসাইটি ও চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী খোকা বলেন, 'একটি অপরাধ আরেকটি অপরাধের জন্ম দেয়। সিনহা হত্যাকাণ্ড দেশ-বিদেশে আলোড়ন তুলেছে। ঘটনার পর তদন্ত দল গঠন করা হলে সবার দৃষ্টি প্রতিবেদন আবিষ্ট হয়ে আছে। মূল বিষয় কী উঠে আসছে, তা জানতে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার দিকেই তাকিয়ে আছেন সবাই।'

শনিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে কক্সবাজার হিল ডাউন সার্কিট হাউসে এক সংক্ষিপ্ত ব্রিফিংয়ে কমিটির প্রধান চট্টগ্রাম বিভাগের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) সরকারের যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, 'কমিটি অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খানের মৃত্যুজনিত ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট ৬৮ জনের সঙ্গে কথা বলার পর তাদের বক্তব্য গ্রহণ করেছে। এইসব কথা-বক্তব্য এবং প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাই ও বিশ্লেষণ করে কমিটির সকল সদস্য সর্বসম্মতভাবে প্রতিবেদনটি চূড়ান্ত করছে। যা আগামী ৭ সেপ্টেম্বর মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হবে। সিনহার মৃত্যুর ঘটনাটি কেন ঘটেছে এবং এ ঘটনায় কারা দায়ী তা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। দায়িত্ব পাওয়ার ৩৫ দিনের মাথায় রিপোর্ট জমা হচ্ছে।'

তিনি আরও বলেন, 'ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা যেন না ঘটে, সে লক্ষ্যে ১৩টি সুপারিশ করেছে কমিটি। আমাদের কমিটির তদন্ত কার্যক্রমের পাশাপাশি এই ঘটনায় আদালতে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। এই মামলা বর্তমানে বিচারাধীন। আইনি প্রক্রিয়ায় ঘটনার তদন্ত কার্যক্রম চালাচ্ছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। এ হত্যার ঘটনার জন্য কারা দোষী তা আদালতই নির্ধারণ করবেন। দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তি দেয়ার এখতিয়ারও আদালতের। আমাদের কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন প্রয়োজন মনে করলে বিচার কাজে ব্যবহার করার এখতিয়ার আদালতের আছে।'

তিনি আরও বলেন, 'তদন্ত প্রতিবেদন সম্পূর্ণ লেখা হয়ে গেছে। তদন্তে পাওয়া তথ্য-উপাত্তে সম্মলিত এই প্রতিবেদনটি প্রায় ৮০ পৃষ্ঠা হয়েছে। এই প্রতিবেদনের সাথে ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা আর ঘটে, সেজন্য করণীয় সম্পর্কে ১৩টি সুপারিশমালাও প্রণয় করা হয়েছে। এর সঙ্গে ৫৮৬ পৃষ্ঠা সংযুক্তিসহ সবগুলোই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে জমা দেওয়া হবে।'

সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে মেজর সিনহাকে হত্যার ঘটনায় অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে। অথচ গুলি করার মতো পরিবেশ বা পরিস্থিতি সেখানে তৈরি হয়নি। ঘটনার সময় কয়েকজন পুলিশ সদস্যের আচরণ ও ব্যবহার ছিল অমানবিক।  

মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে গঠিত চার সদস্যের কমিটির অন্যরা হলেন, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রতিনিধি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর লে. কর্নেল এসএম সাজ্জাদ হোসেন, বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর প্রতিনিধি অতিরিক্ত উপ মহাপরিদর্শক জাকির হোসেন খান ও কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের প্রতিনিধি অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ শাজাহান আলী।

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.