সাম্প্রদায়িক হামলা ও মাদক-অস্ত্র মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামিরা ছাত্রলীগের কমিটিতে

বাংলাদেশ

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি
03 November, 2021, 04:40 pm
Last modified: 03 November, 2021, 06:08 pm
২০১৬ সালের অক্টোবরে নাসিরনগরের আলোচিত সাম্প্রদায়িক হামলার মামলার আসামি ফারদিন তাহের রাহুল পেয়েছেন উপ-ত্রাণ ও দুর্যোগ বিষয়ক সম্পাদক পদ।

মেয়াদ শেষ হওয়ার প্রায় ৩৩ মাস পর গঠন করা ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে ঠাঁই পেয়েছেন সাম্প্রদায়িক হামলা মামলা, মাদক ও অস্ত্র মামলার আসামিরাও। বিষয়টি নিয়ে জেলাজুড়ে চলছে তুমুল সমালোচনা। অভিযোগ উঠেছে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে আসামিদের পদ দেওয়া হয়েছে।

অভিযোগ উঠেছে, কমিটিতে বিভিন্ন মামলার আসামি, বিবাহিত ও অছাত্রদের পদ দেওয়া হয়েছে। ২০১৬ সালের অক্টোবরে নাসিরনগরের আলোচিত সাম্প্রদায়িক হামলার মামলার আসামি  ফারদিন তাহের রাহুল পেয়েছেন উপ-ত্রাণ ও দুর্যোগ বিষয়ক সম্পাদক পদ। মামলায় গ্রেপ্তারও হয়েছিলেন রাহুল। পরবর্তীতে জামিনে কারামুক্ত হয়ে বিদেশে পাড়ি জমান তিনি। গত মাস দুয়েক আগে দেশে ফিরেন তিনি। 

কমিটিতে সহ-সভাপতি পদ পাওয়া উবায়দুর রহমান বাবু ও সহ-সভাপতি আসিফুল ইসলাম অন্তু গত বছরের ১১ এপ্রিল আখাউড়া থানা পুলিশের হাতে মাদকসহ গ্রেপ্তার হন। একই বছরের ৩১ আগস্ট ওই মাদক মামলার দাখিলকৃত চার্জশিটেও তাদের নাম রয়েছে।

এছাড়া, ২০১৮ সালের জুন মাসে অস্ত্র ও গুলিসহ গ্রেপ্তার হওয়া রবিউল আলমকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদ দেওয়া হয়েছে। বিবাহিত মেহেদী মিশু পেয়েছেন পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক পদ। ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনের চা বিক্রেতা সাইফুল ইসলাম উজ্জল পেয়েছেন উপ-অর্থ বিষয়ক সম্পাদক।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রবিউল হোসেন রুবেল বলেন, 'পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রকাশ হওয়ার পর কিছু অভিযোগ আমরা জানতে পেরেছি। তাদের বিষয়ে কেন্দ্রীয় কমিটিকে জানানো হবে। কেন্দ্র থেকে তাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে'। 

২০১৮ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনের পর ১১ ফেব্রুয়ারি রবিউল হোসেন রুবেলকে সভাপতি ও শাহাদাৎ হোসেন শোভনকে সাধারণ সম্পাদক করে ৭ সদস্য বিশিষ্ট আংশিক কমিটি অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। এক বছর মেয়াদী ওই কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার প্রায় ৩৩ মাস পর গত ৩০ অক্টোবর ৩৪৯ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।

এই কমিটি ঘোষণায় ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রের নিয়মও মানা হয়নি। ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রের ১০'র 'ক' ধারায় বলা আছে, জেলা কমিটি ১৫১ সদস্যের নির্বাহী সাংসদ গঠিত হবে। সেখানে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ছাত্রলীগের কমিটি হয়েছে ৩৪৯ সদস্য বিশিষ্ট।

কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ চৌধুরী বলেন, "বিষয়টি আমার জানা নেই। তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"

ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি রাকিব হোসেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "জেলা কমিটিতে পদপ্রত্যাশীদের নাম কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে পাঠায় জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। কেন্দ্রীয় কমিটি কেবল সেটার অনুমোদন দিয়ে থাকে, যার কারণে কারো বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে সেটা যাচাই করার সুযোগ থাকে না। 

তিনি বলেন, "যেহেতু কয়েকজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে, কেউ লিখিত আকারে কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে জমা দিলে, সেটা খতিয়ে দেখা হবে। ছাত্রলীগের কমিটিতে কোনো অভিযুক্ত ব্যক্তির আসার সুযোগ নেই, সেটা খতিয়ে দেখা হবে।"

ব্রাক্ষণবাড়িয়া থেকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে সহ-সভাপতি পদ পাওয়া ইফতেখার আহমেদ সজীব দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "দীর্ঘদিন ধরেই ব্রাক্ষণবাড়িয়া জেলার পূর্ণাঙ্গ কমিটি নেই। অনেক আগে কেন্দ্রের কাছে কমিটি জমা দেওয়া হয়েছে, সেখানে কোনো অভিযুক্ত পদ পেলে কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ ব্যবস্থা নেবে।"

 

 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.