চিকিৎসা নিতে খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়ার আবেদন খারিজ করল সরকার

বাংলাদেশ

টিবিএস রিপোর্ট
09 May, 2021, 04:10 pm
Last modified: 09 May, 2021, 10:03 pm
তাকে দেশেই চিকিৎসা নিতে হবে।

সাজাপ্রাপ্ত আসামি হওয়ায় আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত অনুযায়ী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া চিকিৎসা নিতে বিদেশ যেতে পারবেন না বলে এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।

আজ (রোববার) তিনি এসব তথ্য জানান।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'আইন অনুযায়ী বেগম জিয়ার বিদেশ যাওয়ার আবেদন মঞ্জুর করতে পারছি না।'

'তিনি [খালেদা জিয়া] আদালত কর্তৃক দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে জেলে আছেন। প্রধানমন্ত্রী তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে ৪০১ এর ১ ফৌজদারি আইন অনুযায়ী তার দণ্ডদেশ স্থগিত করে তার সুবিধামতো চিকিৎসা নেয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন,' বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

তিনি বলেন, 'বর্তমানে খালেদা জিয়া এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এরমধ্যে তার ছোট ভাই বিদেশে যাওয়ার জন্য আবেদন করেছিলেন। আমরা সেটা আইনমন্ত্রণায়ের মতামতের জন্য সেখানে পাঠিয়েছিলাম।'

'আবেদনের প্রেক্ষিতে আইন মন্ত্রণালয় থেকে মত এসেছে। তারা স্পষ্ট জানিয়েছে ৪০১ ধারায় সাজা স্থগিত করে যে চিকিৎসা সুযোগ দেয়া হয়েছে এটা দ্বিতীয়বার করা সম্ভব না। মানে তার সাজা আবার মওকুফ করে বিদেশ পাঠানোর কোনো সুযোগ নেই,' বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

তিনি আরও বলেন, 'আমরা তাকে এখন সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেব। তিনি বাসায় থেকে সব ধরনের চিকিৎসা নিতে পারবেন।'

এর আগে, চিকিৎসার জন্য বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়ার অনুমতির বিষয়ে তার পরিবারের করা আবেদনটির ওপর আইন মন্ত্রণালয় মতামত দিয়ে আজ (রোববার) সকালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠায়।

বলে রাখা ভালো, গত ৫ মে রাতে খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের ধানমন্ডির বাসায় আবেদনপত্র নিয়ে যান। আইনগত বিষয়ে জানার জন্য সেটি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো আবেদনপত্রটি ৬ মে আইনমন্ত্রীর বনানীর বাসভবনে নিয়ে যান সচিব মো. গোলাম সারওয়ার।

খালেদা জিয়ার বোন সেলিমা ইসলাম জানিয়েছিলেন, সরকারের অনুমতি পেলে মেডিক্যাল বোর্ডের পরামর্শ অনুযায়ী খালেদা জিয়াকে চার্টার্ড বিমান বা এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে প্রথমে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হবে। সিঙ্গাপুর থেকে যুক্তরাজ্য বা সৌদি আরবে নেওয়া হতে পারে। খালেদা জিয়া ও তার পরিবারের প্রথম পছন্দ যুক্তরাজ্য। এ ব্যাপারে দুই দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক যোগাযোগ অব্যাহত আছে।

উল্লেখ্য, গত ১১ এপ্রিল খালেদা জিয়ার শরীরে প্রথমবারের মতো করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। ২৪ এপ্রিল দ্বিতীয় দফায় খালেদা জিয়ার নমুনা পরীক্ষার প্রতিবেদন করোনা পজিটিভ আসে। ২৭ এপ্রিল রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয় খালেদা জিয়াকে। হাসপাতালে থাকা অবস্থায় গত ৩ মে শ্বাসকষ্ট অনুভব করলে চিকিৎসকরা তাকে সিসিইউতে স্থানান্তর করেন। সেখানে তাকে অক্সিজেন সাপোর্ট এবং ইনসুলিন দেওয়া হচ্ছে। 

এভারকেয়ার হাসপাতালের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ শাহাবুদ্দিন তালুকদারের তত্ত্বাবধানে ১০ সদস্যের মেডিকেল বোর্ডের অধীনে চিকিৎসাধীন আছেন খালেদা জিয়া।

দুটি দুর্নীতি মামলায় ১৭ বছরের কারাদণ্ড পাওয়া খালেদা জিয়া ২৫ মাস কারাগারে কাটানোর পর গত বছরের ২৫ মার্চ বিশেষ ব্যবস্থায় ছাড়া পান। এরপর তার কারাদণ্ড স্থগিতের মেয়াদ দুই দফা বাড়ানো হয়।

পেনাল কোডের সেকশন ৪০১-এর অধীনে গত বছর তার কারাদণ্ড স্থগিত করা হয়েছিল। তিনি বিদেশ যেতে পারবেন না এবং দেশেই তাকে চিকিৎসা নিতে হবে- এ দুটি শর্তে সে সময়ে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ২০১৬ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে ৫ বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত। এরপর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায়ও তাকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তার বিরুদ্ধে আরও ৩৪টি মামলা রয়েছে।

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.