সরকারের মজুদ ঘাটতির সুযোগ নিয়েছে মিলের মালিকরা

বাংলাদেশ

টিবিএস রিপোর্ট
27 January, 2021, 12:45 pm
Last modified: 27 January, 2021, 12:53 pm
ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষকরা। ১৯৭২- ২০২০ সালের মধ্যে প্রতি বছর ধানের বাজার মূল্য ৪-৫ শতাংশ বাড়লেও প্রকৃত মূল্য প্রতি বছর হ্রাস পেয়েছে গড়ে ২-৩ শতাংশ হারে। ২০০৯- ২০২০ সময়কালে প্রতি কেজি ধান চাষের ব্যয় প্রায় ৩ শতাংশ হারে বাড়লেও কৃষকের নিট মুনাফা কমেছে ৮ শতাংশ হারে। 

অপর্যাপ্ত মজুদ, ধান চাল সংগ্রহ করতে না পারা এবং যথাসময়ে আমদানির ব্যর্থতার কারণে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি সরকার। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে বড় চালকল মালিক ও পাইকারী ব্যবসায়ীরা চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। 

মঙ্গলবার বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি) মিলনায়তনে চাল, আলু ও পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধির কারণ উদঘাটনের জন্য তৈরি গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। সাম্প্রতিক সময়ে পণ্য তিনটির বাজার অস্থিতিশীল হওয়ায় বিএআরসি গবেষণাটি পরিচালনা করে।  

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্যবসায়ীরা সব সময় মনে করে সরকারের মজুদ সংক্রান্ত তথ্যে সবসময় ৩০ শতাংশ বাড়িয়ে বলা হয়। এর মধ্যে বোরোর ভালো ফলন হলেও আমন চালের উৎপাদন ১৫ লাখ টন কম হয়েছে। ধান, চাল সংগ্রহ করতে না পেরে সরকারের মজুদ কমে যায়। এ সুযোগেই ব্যবসায়ীরা চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।   

কৃষি মন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, 'সরকারিভাবে ধান চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়া ও সরকারি খাদ্য গুদামে পর্যাপ্ত মজুদ না থাকায় মিলের মালিক ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা তার সুযোগ নিয়ে বাজারের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। ভবিষ্যতে যাতে এমনটা না হয় সেজন্য আগামী বোরো মৌসুমে ধান চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।'   

ভবিষ্যতে যাতে এধরণের পরিস্থিতির মুখোমুখি না হতে হয় সেজন্য বেশকিছু পরামর্শ দেওয়া হয়েছে গবেষণায়। বলা হয়েছে, প্রতি মাসে সরকারের গুদামে অন্তত সাড়ে ১২ লাখ টন চালের মজুদ নিশ্চিত করতে হবে। ন্যূনতম ২৫ লাখ টন এবং মোট উৎপাদনের প্রায় ১০ শতাংশ চাল সংগ্রহের সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। চাল সংগ্রহের জন্য উৎপাদন ব্যয়ের ওপর কমপক্ষে ২০ শতাংশ মুনাফা বিবেচনা করে ধান ও চালের সংগ্রহ মূল্য নির্ধারণ করা হয়। 

এছাড়া চাল উৎপাদনে ব্যয় কমানোর কৌশল, নিবিড় বাজার নিরীক্ষণ, ধান প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পের নিয়ন্ত্রণ এবং সময় মতো সরকারি হস্তক্ষেপ বাজারের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার জন্য সহায়ক হবে বলেও তুলে ধরা হয়।   

গবেষক দলের কো-অর্ডিনেটর ও ইউজিভির উপাচার্য অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, অপ্রতুল মজুদ ও সরকারের দুর্বল হস্তক্ষেপের কারণে চালের বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে।  

গবেষণায় উঠে আসে, মিলের মালিকরা সরকারের সঙ্গে চালের বৃদ্ধির যে হিসেব করেছে সেখানে উপজাত থেকে আসা আয়ের তথ্য গোপন করে। ২০১৭-১৯ সালের মধ্যে প্রতি কেজি চাল প্রক্রিয়াজাত করে ৪.৬-৯.৫ টাকা মুনাফা করেছে। যা ২০১৮-২০ সালে ছিল ৪.৭-৮.২ টাকা। এই আয় বাদ দিলে মিলারদের লোকসান হয়, কিন্তু আয় বিবেচনায় ধরলে তাদের ভালো লাভ থাকে।   

অন্যদিকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষকরা। ১৯৭২- ২০২০ সালের মধ্যে প্রতি বছর ধানের বাজার মূল্য ৪-৫ শতাংশ বাড়লেও প্রকৃত মূল্য প্রতি বছর হ্রাস পেয়েছে গড়ে ২-৩ শতাংশ হারে। ২০০৯- ২০২০ সময়কালে প্রতি কেজি ধান চাষের ব্যয় প্রায় ৩ শতাংশ হারে বাড়লেও কৃষকের নিট মুনাফা কমেছে ৮ শতাংশ হারে। তিনটি গবেষণায় চাল, আলু ও পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির কারণ তুলে ধরা হয়েছে।   

ভবিষ্যতে মূল্য বৃদ্ধির আশায় কৃষক ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে আলুর মজুদ ও হিমাগার থেকে কম সরবরাহ, হিমাগারে মজুদকৃত আলুর রশিদ বারবার বিক্রি, আলু রপ্তানি ও প্রকৃত অবস্থা সম্বন্ধে তথ্যের অভাবে সরকার কোন পদক্ষেপ নিতে পারেনি। ভারতের ওপর আমদানি নির্ভরতা ও দেশীয় অসাধু বাণিজ্য সিন্ডিকেট পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির কারণ বলে জানা গেছে।  

গবেষণায় ভবিষ্যতে এই অবস্থা থেকে উত্তরণে কয়েকটি পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। প্রথমেই কৃষি পণ্যের দাম নির্ধারণে জন্য একটি দাম নির্ধারণী কমিশন গঠনের কথা বলা হয়। এছাড়া উৎপাদন মৌসুম ও অন্যান্য সময়ে বেশ কিছু কৃষি পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দিয়ে তা বাস্তবায়ন করা, সরকারের সময়োপযোগী ও কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়। 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.