সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষা সেবা পাচ্ছে না ৪০% শিক্ষার্থী: জরিপ
সরকারি উচ্চ-মাধ্যমিক বিদ্যালয় পর্যায়ে ৪০ শতাংশ শিক্ষার্থী তাদের স্কুল থেকে প্রয়োজনীয় শিক্ষা এবং এ সংক্রান্ত সেবা পাচ্ছে না। প্রত্যাশা অনুযায়ী সেবা না পেয়ে শিক্ষার্থীরা অসন্তুষ্ট। ফলে নিজেদের স্কুল থেকে শিক্ষা না পেয়ে বিকল্প হিসেবে শিক্ষার্থীদের একটা বড় অংশই কোচিং সেন্টারমুখী হতে বাধ্য হয়। চড়া মূল্যে কোচিং সেন্টার থেকে শিক্ষা কিনছে তারা। সেখানেও মান সম্পন্ন শিক্ষার অভাব রয়েছে।
শিক্ষার মান সংক্রান্ত 'সরকারি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান: চাহিদা এবং শিক্ষা প্রদানের মধ্যে শুন্যতা' শীর্ষক এক জরিপে এই তথ্য উঠে এসেছে।
গতকাল সোমবার প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। পরিকল্পনা কমিশন এ উপলক্ষ্যে রাজধানীর শেরে বাংলানগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। পরিকল্পনা কমিশনের সামাজিক বিজ্ঞান গবেষণা পরিষদের অর্থায়নে এ গবেষণা জরিপটি পরিচালনায় নেতৃত্ব দেন পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মামুন- উর-রশিদ। গবেষণার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন তিনি।
গত বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত সময়ে গণ-নুমনার ভিত্তিতে এই জরিপ কার্যক্রমটি পরিচালনা করা হয়। ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত এই ৫ শ্রেণীর ৬০১ জন ছাত্র-ছাত্রীর কাছে প্রশ্নোত্তরের ভিত্তিতে এই জরিপটি পরিচালনা করা হয়। শিক্ষকের কাছে নির্ভয়ে প্রশ্ন করতে পারা, লাইব্রেরি সুবিধা, খেলার মাঠ, ক্লাস রুমে পর্যাপ্ত সুবিধা থাকা, বই, ডায়েরি, নোটিশ-ইত্যাদি বিষয়গুলোকে শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা হিসেবে ধরা হয়েছে। বরিশাল, ঝালকাঠি ও ভোলা- এই তিন জেলায় জরিপটি পরিচালনা করা হয়।
প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে অধ্যাপক ড. মামুন- উর-রশিদ বলেন, তিন জেলায় জরিপে প্রাপ্ত এই তথ্য সারা দেশের জন্যই প্রযোজ্য। তিনি বলেন, প্রত্যাশা অনুযায়ী স্কুল থেকে সেবা না পাওয়া শিক্ষার্থীদের একটা বড় অংশই কোচিং সেন্টার অথবা প্রাইভেট পড়ে শুন্যতা পুরণ করার চেষ্টা করছে। সেখানেও মানহীন শিক্ষার শিকার হয় তারা।
প্রতিবেদনের সুপারিশ অংশে বলা হয়, উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ পর্যায়ে মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত হলে পরবর্তী পর্যায়ে সুশিক্ষায় আর কোন সমস্যা হয়না। আবার এ পর্যায়ে ঘাটতি নিয়ে শুরু হলে সারা জীবন ভুগতে হয়। মানব সম্পদ উন্নয়নেও তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। ফলে শিক্ষা ও শিখন পদ্বতি আরো উন্নত করা প্রয়োজন। শিক্ষকের কাছে নির্ভয়ে প্রশ্ন করতে পারার পরিবেশ তৈরি, শিক্ষার্থীদের অপুরণীয় প্রত্যাশা পুরণ, ক্লাস রোম শিক্ষাসহায়ক করার সুপারিশ করা হয় প্রতিবেদনে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। তিনি বলেন, শিক্ষা ও গবেষণায় বৈশ্বিক মানের তুলনায় অনেক পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। বিশেষ করে মৌলিক গবেষণার ক্ষেত্রে। গবেষণার ক্ষেত্রেও স্বাধীনতা এবং সাহস প্রয়োজন। এক্ষেত্রে অনেক ঘাটতি আছে এখনো।
মানসম্পন্ন গবেষণার কথা প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায়ই এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে থাকেন। বৈশ্বিক উন্নয়নের সঙ্গে এগিয়ে যেতে শিক্ষা এবং গবেষণায় আরও গুরুত্ব দিতে হবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পরিকল্পনা কমিশনের কার্যক্রম বিভাগের সদস্য সরকারের সচিব মোহাম্মদ জয়নুল বারী।