সব সূচকেই বাড়ছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ 

বাংলাদেশ

টিবিএস রিপোর্ট
16 March, 2021, 09:35 am
Last modified: 16 March, 2021, 09:48 am
গত বছরের ডিসেম্বর মাস থেকে দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হার ১০% এর নিচে নামতে থাকে। ফেব্রুয়ারি মাসে সংক্রমণ হার ২% এর নিচে নেমে এসেছিলো। কিন্তু মার্চ মাসের শুরু থেকে সংক্রমণ হার ফের বাড়তে শুরু করে।

নতুন রোগী শনাক্ত, মৃত্যু ও সংক্রমণ হার- এই তিন সূচকেই দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে। গত তিন মাসের মধ্যে একদিনে সবচেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে সোমবার। এ দিন দুই মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা গেছেন। ৮১ দিনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংক্রমণের হারও ছিল সোমবারে। গত কয়েকদিন ধরেই সংক্রমণের সব সূচক উর্ধ্বমুখী। এখন কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি না মানলে সামনে বড় বিপদের আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এরইমধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে রাজধানীর এবং দেশের সব বিভাগীয় হাসপাতালকে সব ধরনের প্রস্তুতির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আইসিইউ বেড রেডি রাখতে বলা হয়েছে। তবে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে সরকারের পক্ষ থেকে ডিসি-এসপিদের নির্দেশনা দেয়া হলেও দুই একটি জায়গা ছাড়া এর প্রতিপালন খুব একটা দেখা যাচ্ছেনা। 

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ডা. এম মুশতাক হোসেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'সংক্রমণের ধরন দেখে মনে হচ্ছে আমরা সেকেন্ড ওয়েভের দিকে যাচ্ছি। আমাদের দেশে সংক্রমণ সব সময় স্লো বার্নিং ছিলো। কিন্তু এবার সংক্রমণের কার্ভটা জাম্প করে কিনা তা নিয়ে ভয় হচ্ছে। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকার নভেম্বরের মত তৎপর না হলে বিপদ আছে'।

ডা. এম মুশতাক হোসেন বলেন, 'সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে এখন মানুষকে মাস্ক পরতে বাধ্য করতে হবে ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া দ্রুত অধিক সংখ্যক মানুষকে ভ্যাকসিনেটেড করতে হবে তা না হলে মৃত্যু কমানো যাবেনা। এখনো বাংলাদেশ ৩% মানুষকে ভ্যাকসিনেটেড করতে পারেনি'। 

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে যা গত নয় সপ্তাহের মধ্যে সর্বোচ্চ। সংক্রমণ বাড়তে থাকায় পরীক্ষার তুলনায় দৈনিক শনাক্তের হারও ২৭ ডিসেম্বরের পর প্রথমবারের মত ৯ শতাংশ পেরিয়ে গেছে। গত একদিনে পরীক্ষার তুলনায় শনাক্তের হার ৯ দশমিক ৪৮ শতাংশ ছিল বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

এছাড়া সোমবার কোভিড-১৯ শনাক্ত হয়েছে আরও ১ হাজার ৭৭৩ জনের শরীরে। এই সংখ্যাও গত তিন মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। এ নিয়ে দেশে মোট শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৫ লাখ ৫৯ হাজার ১৬৮ জনে। 

গত বছরের ডিসেম্বর মাস থেকে দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হার ১০% এর নিচে নামতে থাকে। ফেব্রুয়ারি মাসে সংক্রমণ হার ২% এর নিচে নেমে এসেছিলো। কিন্তু মার্চ মাসের শুরু থেকে সংক্রমণ হার ফের বাড়তে শুরু করে। বর্তমাসে সংক্রমণ হার দ্রুত বাড়ছে। রোববার সংক্রমণ হার ছিল ৭.১৫%, সোমবার তা বেড়ে ৯.৪৮% এ দাঁড়ায়।

সংক্রমণ পরিস্থিতি মোকাবেলায় হাসপাতালগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে জানান ডিজিএইচএসের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম।

তিনি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'সংক্রমণ প্রতিরোধে জনসচেতনতা জরুরি। মাস্ক না পরা, স্বাস্থ্যবিধি না মানার এ প্রবণতা বিপদজনক। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর রোগী সামলানোর জন্য হাসপাতাল প্রস্তুত রেখেছে কিন্তু মানুষকে মাস্ক পরতে বাধ্য করার বা ধর্মীয় অনুষ্ঠান, বিনোদন কেন্দ্রে জমায়েত বন্ধের ক্ষমতা আমাদের নেই'। ভিড় না করা, মাস্ক পরার জন্য মানুষকে সচেতন করতে মিডিয়ার প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী কিছু কিছু এলাকার সিভিল সার্জন স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সংক্রমণ প্রতিরোধে কাজ শুরু করেছে।

চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. শেখ ফজলে রাব্বি টিবিএসকে বলেন, সংক্রমণ রোধে সোমবার প্রশাসনের সহায়তায় ছয়টি টিম চট্টগ্রামের বিনোদনকেন্দ্র গুলোতে অভিযান পরিচালনা করেছে। মানুষকে মাস্ক পরতে উৎসাহিত করতে কাজ করছেন তারা।

এছাড়া কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালের বেড বাড়ানো, নতুন আইসিইউ বেড স্থাপন, হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যালুনার ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রাইভেট হাসপাতালগুলোর সঙ্গেও রোগী ভর্তির বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে বলে জানান ডা. শেখ ফজলে রাব্বি। 

কোভিড-১৯ সংক্রমণ বৃদ্ধির ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

সোমবার সচিবালয়ের এক ব্রিফিং তিনি বলেন, 'দেশে কভিড-১৯ সংক্রমণের হার ২ শতাংশের নিচে আছে, তবে এখন এ হার আবারও বাড়ছে এবং আগামী কিছুদিনের মধ্যেই তা ৬ শতাংশ ছাড়াতে পারে এমন প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে'। 

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, 'মাস্ক না পড়েই জনসাধারণ ছুটি কাটাতে ভ্রমণে যাচ্ছে, বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছেন যেন দেশে কোভিড-১৯ আর নেই। এটি সংক্রমণ বৃদ্ধির কারণ হতে পারে'। 

জাহিদ মালেক বলেন, মাস্ক পড়া বাধ্যতামূলক করার জন্য ভ্রাম্যমাণ আদালতকে পরামর্শ দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। পাশাপাশি প্রত্যেক হাসপাতালে করোনাভাইরাস ইউনিট প্রস্তুত রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। 

তিনি আরও বলেন, দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পুনরায় খোলার ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে, মহামারির পরিস্থিতির অবনতি হলে পুনরায় খোলার সিদ্ধান্ত পুনঃবিবেচনা করা হবে।

অন্যান্য দেশেও করোনার সংক্রমণ বাড়ছে।

আমাদের পাশ্ববর্তী দেশ ভারতে সোমবার ২৬,২৯১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে, যা গত ৮৫ দিনের মধ্যে সর্বোচ্চ শনাক্ত। দেশটিতে মোট শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক কোটি ১৩ লাখ ৮৫ হাজার ৩৩৯ জনে । 

গত চব্বিশ ঘন্টায় করোনায় মারা গেছেন আরও ১১৮ জন। করোনায় আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত দেশটিতে মৃত্যুবরণ করেছেন এক লাখ ৫৮ হাজার ৭২৫ জন। 

ডা. এম মুশতাক হোসেন বলেন, 'অর্থনীতির স্বার্থে শুধু বাংলাদেশ নয়, অন্যান্য দেশেও সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু মানুষ স্বাস্থ্যবিধি না মানায় ও বিভিন্ন দেশে করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্টের কারণে সবখানেই সংক্রমণ বাড়ছে'।
 
 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.