সবজি উৎপাদনে দেশসেরা যশোর
শাক-সবজি উৎপাদনে হেক্টর প্রতি গড় ফলনে সর্বোচ্চ ও দেশের সবজির চাহিদা পূরণে বিশেষ অবদান রাখায় জেলা পর্যায়ে প্রথম হয়েছে যশোর। যৌথভাবে দ্বিতীয় রংপুর, জামালপুর এবং তৃতীয় পাবনা জেলা। সম্প্রতি রাজধানীতে শেষ হওয়া জাতীয় কৃষি মেলা শেষে এই স্বীকৃতি দিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়।
যশোর জেলায় সারা বছর সবজির আবাদ হয়ে থাকে। বছরে ৩২ হাজার হেক্টর জমিতে চাষিরা বিভিন্ন ধরনের সবজির আবাদ করে থাকেন। যা থেকে উৎপাদন হয় প্রায় আট লাখ টন সবজি। এসব সবজি জেলার চাহিদা মিটিয়ে রাজধানীসহ সারাদেশে পাঠানো হয়।
যশোর আঞ্চলিক কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে জেলায় ২৮ হাজার ৬৩৫ হেক্টর জমিতে সবজির আবাদ হয়; উৎপাদন হয় চার লাখ ৯৬ হাজার ৫১০ টন। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে আবাদ হয় ২৭ হাজার ১৮২ হেক্টর জমিতে; উৎপাদন হয় পাঁচ লাখ ১৪ হাজার ১৫৯ টন। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সবজির আবাদ হয়েছিল ২৯ হাজার ৭৪০ হেক্টর; উৎপাদন হয়েছিল ছয় লাখ ২ হাজার ১১৮ টন। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে আবাদ করা হয় ৩০ হাজার ১৭৫ হেক্টর; উৎপাদন হয় ছয় লাখ ৬৬ হাজার ২৬৫ টন। এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আবাদ করা হয়েছিল ৩২ হাজার ৪৭০ হেক্টর জমি; যা থেকে সবজি উৎপাদন হয়েছিল আট লাখ সাত হাজার ৭৪১ টন।
যশোর জেলায় মোট ৩৩ ধরনের সবজি উৎপাদন হয়ে থাকে। এর মধ্যে বেগুন হেক্টর প্রতি উৎপাদন হয় ৩৩ দশমিক ৯৮ টন, পটল ২৩ দশমিক ৩৭ টন, বাঁধাকপি ৪৪ দশমিক ৯৮ টন, ফুলকপি ৩১ দশমিক ৭৮ টন, ওলকপি ৩৪ দশমিক ৯৫ টন, মূলা ৩৪ দশমিক ৫৩ টন, টমেটো ৩৪ দশমিক ৫৬ টন, শিম ১৫ দশমিক ৬৪ টন।
দেশের অন্যতম বৃহৎ সবজির বাজার যশোরের বারীনগর। ডিসেম্বর মাস হচ্ছে সবজির মৌসুম। এসময় হাটে বিপুল পরিমাণ সবজি ওঠে। যা ট্রাকযোগে যায় ঢাকাসহ সারা দেশে। চলতি মৌসুমে চাষিরা সবজির দাম ভালো পেয়েছেন। তবে মৌসুমের শুরুর দিকে দাম ভাল থাকলেও বর্তমানে কিছুটা কম।
সদর উপজেলার এনায়েতপুর গ্রামের মফিজুর রহমান জানান, এবার তিনি মুলা, শিম ও টমেটো আবাদ করেছেন। প্রথমে দাম ভালো পেলেও বর্তমানে সেই দাম নেই।
মথুরাপুর গ্রামের ওহিদুল ইসলাম জানান, এবার কুমড়ার আবাদ করে ভালো ফলন পাওয়া গেছে। যা বিক্রি হয়েছে লাভজনক দামে।
রহমতপুর এলাকার কৃষক মতিয়ার রহমান বলেন, চলমি মৌসুমে আমি ৫ বিঘা জমিতে বেগুন ও শিম চাষ করেছিলাম। ফলন ভালো হয়েছে। আমরা সারা বছর সবজির আবাদ করি।
৩০ টাকা কেজি দরে বেগুন বিক্রি করেছেন রসুলপুরের মুন্সি রহমত। কিন্তু গত বুধবার (৮ জানুয়ারি) কোনোভাবেই ১৫ টাকার বেশি দাম দিতে চায়নি পাইকাররা।
তিনি জানান, বেগুনের জন্যে সার আর কীটনাশকেই বেশি খরচ হয়ে যায়। গাছ থাকলেও ফলন এখন একটু কম। প্রথমদিকে আবহাওয়া ভালো থাকায় ফলন ভালো হয়। সে সময় দামও ভালো পেয়েছেন তারা।
ঢাকার ব্যাপারি মোহাম্মদ হাসান জানান, এক মাস আগেও সবজির ব্যাপক চাহিদা ছিল। যশোর জেলায় আগাম সবজির আবাদ বেশি হওয়ায় আমরা এখান থেকে তা ট্রাকযোগে ঢাকায় নিয়ে যাই। তবে বর্তমানে ঢাকায় এ অঞ্চলের সবজির চাহিদা কম। কারণ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকা ও চট্টগ্রামে সবজির সরবরাহ করা হয়।
এদিকে বারীনগর বাজারে মুলা ৬ টাকা কেজি, বেগুন ১৫ টাকা, পটল ৪০ টাকা, শিম ১৬ টাকা, ফুলকপি ২৫ টাকা, বাঁধাকপি ১০ টাকা পিস দরে বিক্রি হচ্ছে।
যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, যশোর জেলায় এবার শীতকালীন মৌসুমে সবজি চাষ হয়েছে ১৪ হাজার ৯৬০ হেক্টর জমিতে। বছরে দু’বার সবজি আবাদ হয়ে থাকে। এরমধ্যে যশোর সদরে দুই হাজার ৩১৫ হেক্টর, শার্শায় এক হাজার ৬৯৫ হেক্টর, ঝিকরগাছায় দুই হাজার ১০ হেক্টর, চৌগাছায় চার হাজার ২৫০ হেক্টর, কেশবপুরে এক হাজার ১০ হেক্টর, মণিরামপুরে দুই হাজার ২৫০ হেক্টর, অভয়নগরে ৫৫০ হেক্টর ও বাঘারপাড়ায় ৮৮০ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ হচ্ছে।
এ বিষয়ে যশোর আঞ্চলিক কৃষি অফিসের উপ-পরিচালক এমদাদ হোসেন বলেন, যশোরে সারাবছর সবজির আবাদ হয়ে থাকে। জেলাটি গড়ে ৮ হাজার টণেরও বেশি সবজি উৎপাদন করে। প্রতি হেক্টরে গড়ে ২৩ থেকে ২৫ মেট্রিক টন করে সবজি উৎপাদন হয়। সম্প্রতি কৃষি বিভাগ সবজি উৎপাদনে যশোরকে প্রথম ঘোষণা করেছে। আমরা প্রথম হওয়ায় আনন্দবোধ করছি। সেই সঙ্গে ধন্যবাদ দিচ্ছি সবজি চাষিদের। যারা আগাম সবজির আবাদ করেছেন তারা লাভবান হয়েছেন।