শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না খুললে শিক্ষা ঘাটতি পুষিয়ে নেওয়া কঠিন হবে: বিশেষজ্ঞ মত

বাংলাদেশ

16 March, 2021, 01:55 pm
Last modified: 16 March, 2021, 02:20 pm
সংক্রমণের হার আবারও বাড়তে শুরু করায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এখনই খুলে দেওয়া উচিৎ নয় এমনটাই মত স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের। অন্যদিকে শিক্ষাবিদরা বলছেন, আরও দেরি হলে শিক্ষা ঘাটতি পুষিয়ে নেওয়া বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।

সাম্প্রতিক সময়ে করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার বৃদ্ধির কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পুনরায় খোলা আবারও স্থগিত করা হলে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ঘাটতি পুষিয়ে নেওয়া আরও কঠিন হয়ে উঠবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন শিক্ষাবিদরা। 

মহামারির কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের যে শিক্ষা ঘাটতি তৈরি হয়েছে তা পূরণে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন শিখন পদ্ধতি চালুর প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার। তবে, সরকার আবারও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পুনরায় খোলা স্থগিত করলে এ উদ্যোগ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। 

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. মনজুর আহমেদ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আরও কিছুদিন বন্ধ থাকলে শিক্ষা ঘাটতি আরও প্রকট হবে। 

"শিক্ষার্থীদের ইতোমধ্যেই বড়সড় শিখন ঘাটতি তৈরি হয়েছে। বেশিরভাগই গত বছর অনলাইন ক্লাসে অংশগ্রহণ করতে পারেনি। এবছরেরও তিন মাস পেরিয়ে গেছে। একারণে শিক্ষা ঘাটতি পুষিয়ে নেওয়া বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়াবে,"

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার জন্য সরকারকে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করতে হবে। এবিষয়ে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে বলে জানান তিনি।

"অন্যথায়, জাতি বড়সড় ক্ষতির সম্মুখীন হবে," বলেন তিনি।

বিগত দুই মাস ধরে করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার ৫ শতাংশের নিচে থাকলেও গত সপ্তাহ থেকে সংক্রমণ হার বাড়ছে। গত সোমবার সংক্রমণের হার ছিল ৯ দশমিক ৪৮ শতাংশ যা বিগত ৮১ দিনে সর্বোচ্চ। 

সংক্রমণের বর্তমান হারকে বিপদ সংকেত বলে উল্লেখ করেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক। 

পরিস্থিতির উন্নতি না হলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত কঠিন হবে বলে জানান তিনি। 

"৩০ মার্চ থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার ব্যাপারটি আমরা পুনঃবিবেচনা করব। আমাদের শিক্ষার্থীদের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে ফেলবে এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেব না আমরা," বলেন তিনি।

স্কুল কলেজগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিল বলে জানান তিনি। "আবারও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া পিছিয়ে গেলে তারা কিছু সমস্যার সম্মুখীন হবেন," বলেন তিনি। 

সংক্রমণের হার আবারও বাড়তে শুরু করায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এখনই খুলে দেওয়া উচিৎ নয় এমনটাই মত স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের।

তারা জানান, যদিও ৩০ মার্চ থেকে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু না হলে শিক্ষা ঘাটতি পুষিয়ে নেওয়া ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার ব্যাপারে সরকারের পরিকল্পনা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। 

প্রখ্যাত ভাইরোলজিস্ট ও বঙ্গবন্ধু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, সংক্রমণের হার ৫ শতাংশের বেশি থাকায় এখনই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া বিবেচক সিদ্ধান্ত হবে না। 

"স্কুল খুলে দিলে সংক্রমণের হার আরও বাড়বে কিনা তা বলা কঠিন, তবে এটি তো নিশ্চিত শিক্ষার্থীরা ও তাদের পরিবার আক্রান্ত হবে," বলেন কোভিড-১৯ জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির এ সদস্য।  

এর আগে গত ১২ মার্চ শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, "আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। সংক্রমণ বাড়তে থাকলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পুনরায় খুলে দেওয়া আবারও পেছাতে পারে।"

শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও সংশ্লিষ্টদের নিরাপত্তাই নিশ্চিত করাই অগ্রাধিকার পাবে বলে জানান তিনি।

পেছাল এসএসসি ও এইচএসসি

প্রতি বছর সাধারণত ১ ফেব্রুয়ারি এসএসসি ও ১ এপ্রিল এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হয়। তবে গত বছর মহামারির কারণে এইচএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় অনলাইন মাধ্যমেই ক্লাস পরিচালনা করেছে, যদিও অনেক জরিপে উঠে এসেছে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই ক্লাসে অংশ নেয়নি। 

এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য সংক্ষিপ্ত সিলেবাসও প্রণয়ন করেছে মন্ত্রণালয়। সিলেবাস অনুযায়ী, ৬০ দিন ক্লাস অনুষ্ঠিত হওয়ার পর এসএসসি ও ৮০ দিন ক্লাসের পর এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়া হবে। 

এবছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা সাধারণ সময়ানুযায়ী অনুষ্ঠিত হবে না। 

আগামী মে মাসে ক্লাস শুরু হলে এসএসসি পরীক্ষা হবে সেপ্টেম্বরে এবং এইচএসসি পরীক্ষা হবে অক্টোবরে।

প্রত্যেক শ্রেণির জন্য সংক্ষিপ্ত সিলেবাস 

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিতে আরও দেরি হলে প্রত্যেক শ্রেণির জন্য সংক্ষিপ্ত সিলেবাস প্রণয়নের কথা ভাবছে সরকার। 

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান নারায়ণ চন্দ্র সাহা জানান, এব্যাপারে শিক্ষা বোর্ড এখনো মন্ত্রণালয়ের কোনো নির্দেশনা পায়নি।

"শিক্ষা মন্ত্রণালয় আমাদের নির্দেশনা দিলেই সিলেবাস সংক্ষেপের কাজ শুরু করব আমরা।" বলেন তিনি।  

আবারও সংকটে বেসরকারি স্কুলগুলো

দেশজুড়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষকই মহামারির কারণে আর্থিক সংকটে জর্জরিত। অনেক স্কুলই ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে।

বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব মিজানুর রহমান সরকার দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, আগামী মে বা জুন মাসে পুনরায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা হলে কিন্ডারগার্টেনগুলো কোনো শিক্ষার্থীই পাবে না। 

"আমরা জানি না আমরা কীভাবে বেঁচে থাকব। কোনো আর্থিক সহায়তা না পেলে কোভিড-১৯ মহামারির সংকট শেষেও আমরা পুনরায় কিন্ডারগার্টেনগুলো খুলতে পারব না।" বলেন তিনি।  

গত বছরের ১৬ মার্চ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিবেচনায় দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। তারপর থেকে এবছরের ৩০ মার্চ পর্যন্ত একাধিকবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের মেয়াদ বেড়েছে। 

মহামারির কারণে এইচএসসি ছাড়াও প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিএসসি) পরীক্ষা ও জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও সমমানের পরীক্ষাও অনুষ্ঠিত হয়নি গত বছর। 

পিএসসি ও জেএসসি পরীক্ষার্থীদের অটোপাস দেওয়া হয়, অন্যদিকে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের তাদের জেএসসি ও এসএসসি'র ফলাফলের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করা হয়। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষার্থীকে সরাসরি পরবর্তী শ্রেণিতে উন্নীত করা হয়।  

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.