শিক্ষার্থীদের চুল কেটে দেওয়ার ঘটনায় পদত্যাগ করলেন সেই শিক্ষিকা 

বাংলাদেশ

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি
29 September, 2021, 11:00 am
Last modified: 29 September, 2021, 12:44 pm
মঙ্গলবার রাতে এ ঘটনায় জড়িত শিক্ষিকা ফারহানা ইয়াসমিন বাতেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান পদ, সহকারী প্রক্টর ও প্রক্টরিয়াল বোর্ডের সদস্য পদ থেকে লিখিতভাবে পদত্যাগ করেন।
অভিযুক্ত শিক্ষিকা ফারহানা ইয়াসমিন বাতেন

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে অবস্থিত রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের (রবি) ১৬ শিক্ষার্থীর মাথার চুল কেটে দেয়ার ঘটনায় জড়িত শিক্ষিকা ফারহানা ইয়াসমিন বাতেন তার উপর অর্পিত ৩টি পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। এদিকে, আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

মঙ্গলবার রাতে রবি পরিচালনা বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, তিনি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান পদ, সহকারী প্রক্টর ও প্রক্টরিয়াল বোর্ডের সদস্য পদ থেকে লিখিতভাবে পদত্যাগ করেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করে রবি'র অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত ভিসি ও ট্রেজারার আব্দুল লতিফ বুধবার সকালে জানান, ফারহানা ইয়াসমিন ৩টি পদ থেকে স্থায়ীভাবে পদত্যাগ করে পত্র জমা দিয়েছেন। ঘটনার বিষয়ে ৫ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী ৭দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "শিক্ষার্থীরা দাবি করছে, শিক্ষিকা ফারহানা ইয়াসমিন বাতেনকে স্থায়ীভাবে অপসারণ করতে হবে। এটি তো তাৎক্ষণিক করা সম্ভব নয়, তদন্তের প্রয়োজন আছে। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত ভিসি না থাকায় এখনই এটা করাও যাচ্ছে না। শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতি সম্মান রেখেই শিক্ষিকা ফারহানাকে তার পদগুলো থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে, আশা করছি শিক্ষার্থীরা বিষয়টি অনুধাবন করবেন"।

এদিকে, ওই শিক্ষিকাকে চাকরি থেকে স্থায়ীভাবে পদত্যাগ বা অপসারণের দাবিতে শিক্ষার্থীরা তাদের আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। এ দাবিতে বুধবার রবি ক্যাম্পাস-১ এ আমরণ অনশন কর্মসূচি শুরুর ঘোষণা দিয়েছেন তারা। তবে সকাল পৌনে ১১টায় এ সংবাদ লেখা পর্যন্ত কোন কর্মসূচি শুরু হয়নি।


আরও পড়ুন- রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৬ শিক্ষার্থীর চুল কাটার ঘটনায় বৈঠক, একজনের আত্মহত্যার চেষ্টা

গত রবিবার রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের প্রথম বর্ষের রাষ্ট্রবিজ্ঞান পরিচিতি বিষয়ের ফাইনাল পরীক্ষার হলে ঢোকার সময় ওই বিভাগের চেয়ারম্যান ও সহকারী প্রক্টর ফারহানা ইয়াসমিন বাতেন চুল বড় রাখার অপরাধে কাচি দিয়ে ১৬ জন শিক্ষার্থীর মাথার সামনের অংশের চুল কেটে দেন।

ঘটনাটি শিক্ষার্থীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করলে বিষয়টি ভাইরাল হয়। এরপর শিক্ষিকা ফারহানা ইয়াসমিন বাতেন ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী নাজমুল হাসান তুহিনকে তার চেম্বারে ডেকে নিয়ে গালিগালাজ করেন ও রবি থেকে তাকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের হুমকি দেন।

এতে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ে শিক্ষার্থী তুহিন সোমবার রাতে দ্বারিয়াপুরের শাহ মখদুম ছাত্রাবাসের নিজ কক্ষে অতিরিক্ত ঘুমের বড়ি সেবন করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। রাতেই সহপাঠীরা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে শাহজাদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে এনায়েতপুর খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে নিয়ে যায়। এখনও সে ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

এ ঘটনার পর শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে সোমবার গভীর রাত পর্যন্ত এবং মঙ্গলবার সকালে রবি ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেন। এতে রবি ক্যাম্পাস উত্তাল হয়ে ওঠে। এরপর বিষয়টির সমাধাকল্পে শিক্ষার্থী ও শিক্ষক উভয়ের সাথে বৈঠকের উদ্যোগ নেন রবি প্রশাসন। সাড়ে ৩ ঘন্টা আলাদা বৈঠক শেষে অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত ভিসি আব্দুল লতিফ গণমাধ্যমকে জানান ঘটনার তদন্তে (আজ) কমিটি গঠন করা হবে। এ অবস্থায় মঙ্গলবার রাতেই রবি পরিচালনা বোর্ডের সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক শিক্ষিকা ফারহানা ইয়াসমিন বাতেন তার উপর অর্পিত ৩টি পদ থেকে পদত্যাগ করেন। 

 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.