রেইনট্রি মামলার রায়টি ‘প্রভাবিত রায়’: এমজেএফ

বাংলাদেশ

টিবিএস রিপোর্ট
14 November, 2021, 02:15 pm
Last modified: 14 November, 2021, 05:07 pm
"মামলার রায় প্রদানের ক্ষেত্রে আমরা লক্ষ্য করেছি, মেরিট বাদ দিয়ে ভিকটিমের চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে এবং সমালোচনা করা হচ্ছে।’’ 

আলোচিত রেইনট্রি হোটেলে দুই শিক্ষার্থী ধর্ষণের ঘটনায় সব আসামিকে খালাস দিয়ে ঘোষণা করা রায়টি 'প্রভাবিত রায়' বলে মনে করেন মানবাধিকার কর্মী ও বেসরকারি সংস্থা মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের (এমজেএফ) নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম।

তিনি বলেন, ''নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের মামলার রায় প্রদানের ক্ষেত্রে আমরা লক্ষ্য করছি, মামলার মেরিট বাদ দিয়ে ভিকটিমের চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে এবং সমালোচনা করা হচ্ছে।'' 

"এসব মামলার ক্ষেত্রে আসামিরা নানাভাবে প্রভাব বিস্তার করে। রেইনট্রি মামলার রায় প্রদানের ক্ষেত্রেও 'প্রভাবিত রায়' ঘোষণা করা হয়েছে বলে আমার মনে হয়।"

'রেইনট্রি হোটেলে দুই শিক্ষার্থী ধর্ষণ মামলার রায়ে বিচারকের পর্যবেক্ষণ ও নির্দেশনার বিষয়ে উদ্বেগ' জানিয়ে ২০টি মানবাধিকার ও উন্নয়ন সংগঠনের জোট হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশ (এইচআরএফবি)-এর পক্ষ থেকে আয়োজিত এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে আজ এই মন্তব্য করেন শাহীন আনাম।

সংবাদ সম্মেলনে মানবাধিকার কর্মী ড. হামিদা হোসেন বলেন, "রেইনট্রি মামলার রায়ে ওই দুই শিক্ষার্থীর চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। বলা হয়েছে, তারা সেখানে গিয়ে সাঁতার কেটেছে। এটিতো কোনো অপরাধ নয়। আমিও নিয়মিত সাঁতার কাটি।"   

তিনি আরও বলেন, "জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি মামলার প্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত যেসব নির্দেশনা দিয়েছে, রেইনট্রি মামলার রায় প্রদানকারী বিচারকের উচিত ছিল সেগুলো ভালোভাবে পড়া।" 

"এরকম পর্যবেক্ষণ দিয়ে উনি (বিচারক) কার পক্ষে কথা বলেছেন, আমার বোধগম্য হয়নি। সকল বিচারককে যথাযথ প্রশিক্ষণ দেওয়া উচিত। যৌন হয়রানিমূলক অপরাধের ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ বিশেষভাবে দেওয়া উচিত", যোগ করেন হামিদা হোসেন।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) নির্বাহী পরিচালক গোলাম মনোয়ার কামাল, মানবাধিকার কর্মী রঞ্জন কর্মকার, জাকির হোসেন, আসকের পরিচালক অ্যাডভোকেট নীনা গোস্বামী প্রমুখ।  

সংবাদ সম্মেলনে এইচআরএফবি'র বিবৃতি তুলে ধরেন আসকের তামান্না হক রীতি। 


২০১৭ সালের ২৮ মার্চ রাজধানীর বনানীর রেইনট্রি হোটেলে ডেকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া দুই তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। সে বছরের ৬ মে বনানী থানায় মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগীদেরই একজন।  

মামলায় আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলে সাফাত আহমেদসহ পাঁচ আসামির সকলকেই বেকসুর খালাস দিয়ে গত বৃহস্পতিবার রায় ঘোষণা করেন ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এর বিচারক মোছা. কামরুন্নাহার। 

বাকি আসামিরা হলেন সাফাতের দুই বন্ধু নাঈম আশরাফ ওরফে এইচএম হালিম ও সাদমান সাকিফ, সাফাতের গাড়িচালক বিল্লাল হোসেন ও দেহরক্ষী রহমত আলী। 

রায় ঘোষণার সময় পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেন, ধর্ষণের ৭২ ঘণ্টার বেশি সময় পেরিয়ে গেলে পুলিশ যেন মামলা না নেয়।

দুই ভিকটিমের চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলে ট্রাইব্যুনাল বলেন, ''এই মামলার দুইজন ভিকটিম স্বেচ্ছায় হোটেলে গিয়েছেন। সেখানে গিয়ে তারা সুইমিং করেছেন। ঘটনার ৩৮ দিন পর তারা বললেন 'আমরা ধর্ষণের শিকার হয়েছি'। এই মামলাটি একটি অহেতুক মামলা। এই অহেতুক মামলায় রাষ্ট্রের অনেক সময় অপচয় হয়েছে।"

এদিকে ৭২ ঘণ্টা পর ধর্ষণ মামলা না নেওয়ার পর্যবেক্ষণ দেওয়া ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোছা. কামরুন্নাহারের ফৌজদারি বিচারিক ক্ষমতা সাময়িকভাবে প্রত্যাহার করে তাকে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগে সংযুক্ত করার জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে আজ। 

সেই সঙ্গে তাকে আজ রোববার থেকে আদালতে না বসার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন।  

 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.