রাজনীতি করার অধিকার সবার আছে কিন্তু ধ্বংস কেন: ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আইজিপি

বাংলাদেশ

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি
01 April, 2021, 06:15 pm
Last modified: 01 April, 2021, 10:33 pm
গত ২৬ থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজতে ইসলামের কর্মীদের চালানো তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত স্থাপনাগুলো পরিদর্শন করেন আইজিপি বেনজীর আহমেদ।

পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ বলেছেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এক ধরনের নৃশংসতা চালানো হয়েছে। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো জনগণের সম্পত্তি। এখানে কেনো হামলা করা হলো, সেটা আমার বোধগম্য নয়। ভূমি অফিস পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এখানে দেড়-দুইশ বছরের পুরনো রেকর্ডস রয়েছে। ফলে ভূমি অফিসের আওতায় বসবাসকারীরা আগামী অন্তত ৫০ বছর কষ্ট ভোগ করবেন।

বৃহস্পতিবার (১ এপ্রিল) বিকেল ৩টায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া সার্কিট হাউজে প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন তিনি।

গত ২৬ থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজতে ইসলামের কর্মীদের চালানো তাণ্ডবের ঘটনায় এ প্রেস ব্রিফিংয়ের আয়োজন করা হয়।

আইজিপি বলেন, কিছু লোক আমাদের দেশের মানুষকে কালেক্টিভ পানিশমেন্ট দিতে চায়। জনগণকে শিক্ষা দিতে চায়। সেই শিক্ষা দেওয়ার কারণটা কী আমাদেরকে বের করতে হবে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনে কিছু হলেই হামলা করে। কারণ হলো রেলওয়ে স্টেশন দিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মানুষ যাতায়াত করেন, সুবিধা পান।

তিনি বলেন, প্রত্যেকটি গুরুত্বপূর্ণ সরকারি অফিস-বাসভবনে হামলা করা হয়েছে। এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার নিন্দা জানানোর ভাষা আমাদের নেই। এ সমস্ত কাজে ব্যবহার করা হয় মাদরাসার কোমলমতি ছেলেদের। আমরা চাইব সবার মধ্যে শুভ বুদ্ধির উদয় হবে।

তিনি আরও বলেন, রাজনীতি করার অধিকার সবার আছে। কিন্তু ধ্বংস কেনো? দেশ আমাদের সবার। দেশের সম্পদ ধ্বংস করে রাজনীতি করবেন কীভাবে? আশা করব প্রত্যেকের শুভ বুদ্ধির উদয় হবে। আগে হুজুররা রিকশায় যেতে পারতেননা। এখন বড়হুজুরদের গাড়ি আছে। অনেকে হেলিকপ্টার হুজুর হিসেবে পরিচিত হয়েছেন। এর কারণ হলো আমাদের অর্থনীতি ভালো হয়েছে। এখন কেনো এক শ্রেণির লোকজন এসব ধ্বংস করছেন?

ধ্বংসযজ্ঞ বন্ধের আহ্বান জানিয়ে পুলিশ প্রধান বলেন, ধ্বংস করলে একপর্যায়ে ১৮ কোটি মানুষ এটাকে ভিন্নভাবে নিতে পারে। আমরা অনুরোধ করব এগুলো বন্ধ করেন। একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র যেখানে আইনের শাসন বজায় রয়েছে সেখানে আইনের শাসনের সঙ্গে এ বিষয়গুলো যায়না।

প্রেস ব্রিফিংয়ে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের মহাপরিচালক (ডিজি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) প্রধান মনিরুল ইসলাম, চট্টগ্রাম রেঞ্জ পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মো. আনোয়ার হোসেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জেলা প্রশাসক হায়াত উদ দৌলা খান ও পুলিশ সুপার মো. আনিসুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে দুপুর পৌনে ১২টা থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ক্ষতিগ্রস্ত স্থাপনাগুলো পরিদর্শন শুরু করেন আইজিপি বেনজীর আহমেদ।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ সফরের প্রতিবাদে এবং ঢাকা ও চট্টগ্রামে মাদরাসাছাত্রদের ওপর হামলার খবরে গত ২৬ মার্চ থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ব্যাপক তাণ্ডব চালায় হেফাজতে ইসলামের কর্মীরা। তারা পুলিশ সুপারের কার্যালয়, খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানা, সিভিল সার্জনের কার্যালয়, মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয়, সুর সম্রাট দি আলাউদ্দিন সঙ্গীতাঙ্গন, আলাউদ্দিন খাঁ পৌরমিলনায়তন, পৌরসভা কার্যালয়, জেলা পরিষদ কার্যালয়, শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ভাষা চত্বর, সদর উপজেলা ভূমি অফিসসহ বেশ কয়েকটি স্থাপনায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে হেফাজতকর্মীরা। এছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস ক্লাব ভবনেও হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে হেফাজতকর্মীরা। কয়েকজন সাংবাদিকও আহত হয়েছেন হেফাজতকর্মীদের হামলায়। 
 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.