মৃতদের কবর দেওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তা

বাংলাদেশ

লক্ষ্মীপুর সংবাদদাতা
03 September, 2020, 06:05 pm
Last modified: 03 September, 2020, 06:12 pm
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর-রামগতি আঞ্চলিক সড়কের পাশে আশ্রয় নেওয়া প্রায় দুই হাজার পরিবারের অন্তত দশ হাজার বাসিন্দার জন্য কবর সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে।

পরিবারের কোনো সদস্যের মৃত্যু হলে কবর দেওয়া নিয়ে সবসময় দুঃচিন্তায় ভুগতে হচ্ছে প্রায় দুই হাজার পরিবারের অন্তত দশ হাজার বাসিন্দাকে। পরিজনকে হারিয়ে শোকের পরিবর্তে উল্টো কবর দেওয়ার দুর্ভাবনা পোহাতে হয় তাদের।

কখনো কখনো জানাজার পরও কবরের জায়গার অভাবে কয়েক ঘণ্টা ধরে লাশ পাহারা দেন স্বজনরা।

লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর-রামগতি আঞ্চলিক সড়কের পাশে আশ্রয় নেওয়া ওই পারিবারগুলোতে কবর সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে। সড়কের পাশে আশ্রিতারা সবাই নদীতে সহায় সম্পত্তি হারিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার সরেজমিনে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।

এ সড়কের ভবানীগঞ্জ থেকে তোরাবগঞ্জ এলাকা পর্যন্ত ৮ কিলোমিটার এলাকায়, সড়কের পাশে অন্তত দশ হাজার নদীভাঙা মানুষ বসবাস করছেন।

চর ভুতা গ্রামের মোঃ আবদুল্লাহ বলেন, রাস্তার পাশে বসবাস করা রিকশাচালক মোঃ আবুল কাশেম গত মাসে মারা যান। জানাজার ৩ ঘণ্টা পরও তার মৃতদেহ দাফন করা যায়নি কবরের অভাবে।

আবদুল্লাহ আরো জানান, পরে তিনি নিজের বাড়ির বাগানে ওই রিকশাচালকের লাশ দাফনের অনুমতি দিয়েছেন। রিকশাচালক কাশেম নদী ভাঙ্গনে সব হারিয়ে রাস্তার পাশে এসে বসতি গড়েছিলেন। 

রাস্তার পাশের আরেক বাসিন্দা মোঃ রিয়াজ জানান, দুই মাস আগে তার বাবা মোঃ দুলাল মারা যাওয়ার পর শোকের পরিবর্তে উল্টো তারা কবরের চিন্তায় বেহাল হয়ে পড়েছিলেন। পরে এক বাড়ির বাগানে মাটি দিয়েছেন। 

আরেক বাসিন্দা আবুল বাশার জানান, তার বয়স্ক বাবা মনু মিয়া মারা যাওয়ার পর লাশ নিয়ে কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করে, অবশেষে রাস্তার পাশেই কবর দিয়েছেন।

স্থানীয়রা জানান, লক্ষ্মীপুরে মেঘনা নদীর ভয়াবহ ভাঙ্গনে রামগতি এবং কমলনগর উপজেলার প্রায় অর্ধেক অংশ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। নতুন করে আরও বহু এলাকায় নদী ভাঙ্গছে। নদীতে ভিটে মাটি হারানো অন্তত দুই হাজার পরিবারের দশ হাজার  অসহায় মানুষ রামগতি-লক্ষ্মীপুর আঞ্চলিক সড়কের পাশে ঘর তুলে কোনোমতে আশ্রয় নিয়েছেন। এইসব পরিবারের কেউ মারা গেলে কবর দেওয়ার জন্য কোনো কবরস্থান নেই। তাই তারা যেখানে-সেখানে লাশ দাফন করছেন।

স্থানীয় যুবক মোঃ মাহফুজুর রহমান ও আবদুর রহমান জানান, সমস্যাটি প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধি কেউ না দেখার কারণে তারা ৪০ যুবক মিলে ভূমিহীন গণকবর ও সমাজ সেবা সংস্থা নাম দিয়ে একটি সংগঠন তৈরি করেছেন। তারা মাসিক ১০০ টাকা চাঁদা দিয়ে প্রায় লক্ষাধিক টাকা সংগ্রহ করেছেন কবরের জমি কেনার জন্য। কিন্ত কাঙ্ক্ষিত জমির মূল্য অন্তত দশ লক্ষ টাকা।

নদীভাঙ্গা মানুষের কবর সমস্যা সমাধান বিষয়ে জানতে চাইলে ইসলামি ফাউন্ডেশনের উপপরিচালক ও লক্ষ্মীপুর জেলা কর্মকর্তা আশেকুর রহমান জানান, গণকবর প্রতিষ্ঠার বিষয়ে তাদের কোনো কার্যক্রম নেই।

অন্যদিকে, ভবানীগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মোঃ মানিক মিয়া জানান,  জমি সংগ্রহের ব্যাপারে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হবে। 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.