মিয়ানমারের ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টি: বাংলাদেশের অসাধারণ উদারতার প্রশংসা

বাংলাদেশ

ইউএনবি 
09 April, 2021, 08:55 pm
Last modified: 09 April, 2021, 08:59 pm
কেরি জানান, মিয়ানমারের জনগণ যা প্রত্যক্ষ করছে তা এখন বিশ্বের অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ

রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে এবং মিয়ানমারে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে সংশ্লিষ্ট সকলকে সহায়তা করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দৃঢ়প্রতিজ্ঞ বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জলবায়ু বিষয়ক বিশেষ দূত জন কেরি।

তিনি রোহিঙ্গা ইস্যুতে 'অসামান্য উদারতা' প্রদর্শনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করেছেন। একই সাথে, তিনি মনে করেন, বাংলাদেশের জন্য এটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল।

আজ শুক্রবার (৯ এপ্রিল) পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেনের সাথে বৈঠকের পর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় যৌথ সংবাদ সম্মেলনে কেরি এই মন্তব্য করেন।

এসময় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী শাহাব উদ্দিন, সাবের হোসেন চৌধুরী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এম শাহরিয়ার আলম, ভালনারেবল ফোরামের রাষ্ট্রপতির বিশেষ দূত আবুল কালাম আজাদ, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল মিলার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন ।

কেরি জানান, মিয়ানমারের জনগণ যা প্রত্যক্ষ করছে তা এখন বিশ্বের অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের প্রতি যে অবিশ্বাস্য চেতনা থেকে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে তার জন্য বাইডেন প্রশাসন অত্যন্ত কৃতজ্ঞ।

তিনি বলেন, বিশ্ব সম্প্রদায়ের সহায়তায় পদক্ষেপ নেয়া জরুরি কারণ-এটি একমাত্র বাংলাদেশের দায়িত্ব নয়।

বাইডেন প্রশাসন মিয়ানমারের জবাবদিহি নিশ্চিত করার জন্য অনেক চেষ্টা করে কিন্তু কোন ফল পায়নি।

এবিষয়ে তিনি বলেন, "আমি জানি যে আমরা খুব কঠোর লড়াই করেছি এবং মিয়ানমারকে অন্য পথে নেওয়ার চেষ্টা করেছি। আমাদের উচ্চ প্রত্যাশা ছিল। আমি নিজেও নেপিডো গিয়েছিলাম এবং জেনারেলদের সাথে দেখা করেছি।"

কেরি বলেন,  "বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের একটি দ্বীপ দিয়েছে, যাতে রোহিঙ্গারা তাদের ভবিষ্যত গোছাতে সক্ষম হয়। তবে এটি দীর্ঘমেয়াদী সমাধান নয়। এতে সমস্যার সুরাহাও হয় না।"

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন বলেন, "রোহিঙ্গারা বন ও ভূতাত্ত্বিক ব্যবস্থা ধ্বংস করছে। আমাদের প্রত্যাশা যুক্তরাষ্ট্রের কার্যকর উদ্যোগ রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে নিরাপদে ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবর্তনের জন্য সহায়তা করবে।"

বর্তমানে, কক্সবাজার ও ভাসানচরে ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ। এর আগে, বাংলাদেশ ও মিয়ানমার ২০১৭ সালের ২৩ নভেম্বর প্রত্যাবাসন চুক্তিতে স্বাক্ষর করে।

২০১৮ সালে ১৬ জানুয়ারি বাংলাদেশ ও মিয়ানমার 'ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট' সম্পর্কিত একটি নথিতে স্বাক্ষর করে যা রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের পক্ষে সহায়ক হবে বলে আশা করা হয়েছিল।

বাংলাদেশ জানায়, রোহিঙ্গারা তাদের সরকারের ওপর আস্থা রাখে না এবং তাদের মধ্যে আস্থা বাড়াতে বাংলাদেশ বেশ কয়েকটি প্রস্তাব দেয়।

রোহিঙ্গা সঙ্কটের স্থায়ী সমাধানের জন্য-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক, বহুপাক্ষিক, ত্রিপাক্ষিক এবং বিচার ব্যবস্থা- একাধিক উপায়ে চেষ্টা করছে।

বাংলাদেশ মিয়ানমারের বন্ধুত্বপূর্ণ দেশ জাপান, চীন, রাশিয়া, ভারত ও আসিয়ানভুক্ত দেশসমূহ থেকে বেসামরিক নাগরিক পর্যবেক্ষক মোতায়েনের প্রস্তাব করেছিল।

প্রসঙ্গত, শুক্রবার সকাল সাড়ে ১১টায় কেরি বিশ্বব্যাপী জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় 'আগ্রাসীভাবে' এগিয়ে যাওয়ার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রতিশ্রুতি জানাতে ঢাকায় পৌঁছান।

হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ও ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলার তাকে স্বাগত জানান।

আগামী ২২ এপ্রিল শুরু হতে যাওয়া বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানাতে তিনি চার দিনের ভারত সফর শেষে ঢাকায় এসেছেন। ৪০টি দেশের সরকার প্রধানের অংশগ্রহণে ভার্চুয়ালি এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে জলবায়ু প্রভাব বিশেষত দুর্বল জলবায়ু পরিস্থিতে বাংলাদেশের নেতৃত্বের জন্য স্বীকৃতি পাবেন।

ঢাকায় কেরি বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি এবং মূল উন্নয়ন ও আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সাথে সাক্ষাৎ করেন।

জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বাংলাদেশ অগ্রণী ভূমিকা পালন করে বলে জানায় ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম ও ভালনারেবল টুয়েন্টি গ্রুপ অব ফাইন্যান্স মিনিস্টারস-এর সভাপতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৪০ জন বিশ্বনেতাকে 'বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে' যোগ দেয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানান। জো বাইডেন কর্তৃক আয়োজিত এই ভার্চুয়াল শীর্ষ সম্মেলন জনগণের জন্য সরাসরি সম্প্রচার করা হবে।

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.