মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু 

বাংলাদেশ

টিবিএস রিপোর্ট
16 November, 2020, 08:30 pm
Last modified: 16 November, 2020, 08:33 pm
১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০২৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে নির্মাণ কাজ শেষ হলে মাতারবাড়ী বন্দরের টার্মিনালে ভিড়তে পারবে ১৮.৫ মিটার গভীরতার জাহাজ। 

কক্সবাজারের মহেশখালীতে নির্মান হতে যাওয়া মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সোমবার (১৬ নভেম্বর) বিকেলে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এসএম আবুল কালাম আজাদ এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়ছেন। 

১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০২৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে নির্মাণ কাজ শেষ হলে মাতারবাড়ী বন্দরের টার্মিনালে ভিড়তে পারবে ১৮.৫ মিটার গভীরতার জাহাজ। 

সোমবার বিকেলে চট্টগ্রাম বন্দর ভবন চত্বরে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন মাতারবাড়ী পোর্ট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের প্রজেক্ট ডিরেক্টর ও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্ল্যানিং এন্ড অ্যাডমিন) জাফর আলম এবং প্রজেক্টের জাপানি কনসালটেন্ট নিপ্পন কোয়েই (Nippon Koei) এর টিম লিডার হোতানি। 

জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) অর্থায়নে মহেশখালীর মাতারবাড়ী ও ধলঘাট এলাকায় বন্দরটি নির্মিত হচ্ছে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এসএম আবুল কালাম আজাদ বলেন, দেশের মোট বৈদেশিক বাণিজ্যের ৯২ ভাগ চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে সম্পন্ন হয়। যে গতিতে ব্যবসার প্রবৃদ্ধি বাড়ছে তাতে চট্টগ্রাম বন্দর তার সক্ষমতার শেষ পর্যায়ে এসে গেছে। তাই সরকার ২০১৪ সালে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। গত ২৩ সেপ্টেম্বর পরামর্শক সংস্থার সাথে চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পর আজ ১৬ নভেম্বর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এই প্রকল্প উন্নয়নের কাজ শুরু হলো। এ বন্দরের কল্যাণে ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত যে অর্থনৈতিক বেল্ট গড়ে উঠছে- তা আরো বেগবান হবে। 

বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্ল্যানিং এন্ড অ্যাডমিন) জাফর আলম বলেন, করোনার এই দুঃসময়ে অন্যান্য উন্নয়ন প্রকল্পে পরামর্শকরা কাজ না করে ফিরে গেছে। কিন্তু এই প্রকল্পে কনসালটেন্টরা ঝুঁকি নিয়েও কাজ করছেন। আমরা আশা করছি, ২০২৫ সালে নির্ধারিত সময়ের আরো ৬ মাস আগে বন্দরের কাজ শেষ হবে। 

তিনি আরো বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরে চীন থেকে জাহাজ এসে পণ্য খালাস করতে যে সময় লাগে মাতারবাড়ী বন্দরে সেই সময় ৩ দিন কমে আসবে। চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ে দ্বিগুন ড্রাফটের জাহাজ ভিড়ার সক্ষমতা থাকায় এই বন্দরে ৮ থেকে ১০ হাজার কন্টেইনারবাহী জাহাজ ভিড়তে পারবে। এতে পণ্য পরিবহনের ব্যয় যেমন কমায় ব্যবসায়ীরা উপকৃত হবেন। প্রাথমিকভাবে ৮ লাখ কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করার লক্ষ্যে নকশা করা হচ্ছে। পরে জেটি বাড়লে সক্ষমতা বাড়বে।

উপস্থিত সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে জাফর আলম বলেন, মাতারবাড়ী পোর্ট চট্টগ্রাম বন্দরের সীমার মধ্যে। তাই নতুন এ বন্দরটি চট্টগ্রাম বন্দরের অধীনে পরিচালিত হবে। একটি বন্দরের অধীনে অনেক টার্মিনাল বন্দর থাকতে পারে। 

জাপানি পরামর্শক দলনেতা হোতানি বলেন, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দর উন্নয়ন প্রকল্পে প্রথম ধাপে ডিজাইন, সিভিল ওয়ার্ক হবে। দ্বিতীয় ধাপে হ্যান্ডলিং ইক্যুইপমেন্ট সংগ্রহ করা হবে। ভূমিকম্পের বিষয়টি মাথায় রেখে সর্বাধুনিক জাপানি প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে এ প্রকল্পে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিপ্পন কোয়েই এর পক্ষ থেকে প্রকল্পের যাবতীয় নকশা ব্যয় নির্ধারণ, টেন্ডার ডকুমেন্টস তৈরি এবং অবকাঠামোগত নির্মাণের বিষয়গুলো মনিটর ও তদারকি করা হবে। পরবর্তী সময়ে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ইক্যুইপমেন্ট সংগ্রহ থেকে শুরু করে বন্দর চালু করে দেওয়ার বিষয়টি সমন্বয় করবে।

বন্দর চালু হওয়ার এক বছর পর্যন্ত পরামর্শক প্রতিষ্ঠান প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগীতা দেবে। এজন্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠানটিকে ২৩৪ কোটি টাকা দেওয়া হবে। আর ওরিয়েন্টাল কনসালটেন্ট  গ্লোবাল কোম্পানি প্রকল্পের (বন্দর সংযোগ সড়ক অংশ) সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের কার্যক্রম-সংক্রান্ত পরামর্শ দেবে। এজন্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠানটিকে ৪৬৬ কোটি টাকা দেওয়া হবে।

এসময় বন্দর সচিব মো. ওমর ফারুক, পরিচালক ট্রাফিক এনামুল করিম সহ বন্দর কর্তৃপক্ষের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং জাপানি পরামর্শক টিমের অন্যান্য সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। 
 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.