মহামারীর মধ্যেও এসএসসির ফরম পূরণে অতিরিক্ত ফি চাপিয়ে দিচ্ছে বিদ্যালয়গুলো 

বাংলাদেশ

09 April, 2021, 02:35 pm
Last modified: 09 April, 2021, 03:11 pm
ফরম পূরণে বোর্ড নির্ধারিত ফি এর বেশি অর্থ আদায় করার কোনও সুযোগ নেই। বিভাগভেদে ফরম পূরণের ফি নির্ধারণ করে দিয়েছে মন্ত্রণালয়।

২০২১ সালের এসএসসি পরীক্ষার জন্য অনলাইনে ফরম পূরণের কার্যক্রম শুরু হয় এ মাসের শুরুতে। ফরম পূরণে বোর্ড নির্ধারিত ফি আদায়ের নির্দেশ থাকলেও অধিকাংশ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ই শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করছে। মহামারীতে চলমান সংকটের মধ্যে এই অর্থ অভিভাবকদের উপর এক বিরাট বোঝা হিসেবে চেপে বসেছে।

ফরম পূরণে বোর্ড নির্ধারিত ফি এর বেশি অর্থ আদায় করার কোনও সুযোগ নেই। বিভাগভেদে ফরম পূরণের ফি নির্ধারণ করে দিয়েছে মন্ত্রণালয়।

এর মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগের পরীক্ষার্থীদের ফরম পূরণ বাবদ মোট ফি ১ হাজার ৯৭০ টাকা এবং ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ এবং মানবিক বিভাগের পরীক্ষার্থীদের ফরম পূরণের মোট ফি ১ হাজার ৮৫০ টাকা ধরা হয়েছে। কিন্তু বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের টিউশন এবং কোচিং ফি সহযোগে ৩ থেকে ৬ হাজার টাকা আদায় করছে।

দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের সাথে কথা বলার সময় অনেক অভিভাবক এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা বলেন, গত বছরের মার্চ থেকে দেশে মহামারী শুরুর পর তারা আর্থিক সংকটে রয়েছেন এবং এখন কোনমতে খেয়েপরে বেঁচে থাকার চেষ্টা করছেন। 

অভিভাবকেরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে এ ব্যাপারে যথাযথ উদ্যোগ নেওয়ার আহবান জানান যেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো পাবলিক পরীক্ষার ফরম পূরণ চলাকালীন অতিরিক্ত অর্থ আদায় না করতে পারে।  

কালাম মিয়া নামের একজন অভিভাবক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "ঢাকার কোনাপাড়ায় অবস্থিত পারাদোগাইর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে মেয়ের এসএসসি ফরম পূরণের জন্য আমাকে ছয় হাজার টাকা দিতে হয়েছে"। 
 
"মহামারীতে আমার আয়-রোজগার প্রায় ৯০% হ্রাস পেয়েছে, আমি রীতিমত বেঁচে থাকার জন্য সংগ্রাম করছি। চলমান সংকটকালীন সময়ে বাচ্চাদের পড়াশোনার ব্যয় বহন করা আমার জন্য অত্যন্ত কষ্টকর হয়ে উঠেছে"।

তিনি আরও বলেন, "এ অবস্থায় মেয়ের ফরম পূরণের ফি আমার জন্য অতিরিক্ত একটি বোঝার শামিল। তার ওপর স্কুলটি আমার কাছ থেকে কোচিংয়ের ফিও নিয়েছে"।  
 
বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক আমিরুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে টিবিএসকে তিনি বলেন, কালামের কাছ থেকে নেয়া ছয় হাজার টাকার ভেতর নিবন্ধন ফি ছাড়াও মাসিক টিউশন ফি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
 
তিনি আরও বলেন, "আমাদের বিদ্যালয়ে ৪৯ জন শিক্ষক রয়েছেন। এর মধ্যে কেবল ১৩ জন শিক্ষক এমপিওভুক্ত। সুতরাং, এমপিও তালিকা বহির্ভূত শিক্ষকদের বেতন দেয়ার জন্য আমাদের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কিছু ফি আদায় করতে হয়"।   

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গফুরগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থীর অভিভাবক টিবিএসকে বলেন, তিনি একজন দরিদ্র কৃষক এবং সন্তানের নিবন্ধনের জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্দেশিত চার হাজার টাকার ব্যবস্থা করতে গিয়ে তাকে অন্যের কাছ থেকে ধার নিতে হয়েছে।

এই স্কুলের প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেনের মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোন সাড়া পাওয়া যায়নি। 

এ প্রসঙ্গে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. মনজুর আহমেদ টিবিএসকে বলেন, কোভিড-১৯ মহামারীতে মূলত মধ্যবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষেরাই সবচেয়ে বেশী সংকটে পড়েছেন। 

তিনি বলেন, নিবন্ধনের নামে অতিরিক্ত ফি নেয়া বন্ধ করা উচিত। দরিদ্র শিক্ষার্থীদের ফরম পূরণের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সহায়তা প্রদানের পরামর্শ দেন তিনি।  

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক টিবিএসকে বলেন, এমপিও তালিকাভুক্ত যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোন অতিথি শিক্ষক নেই, তাদের জন্য শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ফি নেয়ার কোনপ্রকার সুযোগ নেই।  

তিনি বলেন, "আমরা প্রতিষ্ঠানগুলোকে শিক্ষার্থীদের উপর অতিরিক্ত ফি-র বোঝা না চাপানোর নির্দেশ দিয়েছি।" 

এদিকে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) সম্প্রতি প্রকাশ করে, ২০১৮ সালের (২১.৬%) তুলনায় দেশে দারিদ্রসীমার নিচে বাস করা জনসংখ্যা ২০২০ সালে (৪২%) প্রায় দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। 

চলতি বছর প্রায় ২০ লাখ পরীক্ষার্থীর এসএসসি পরীক্ষায় নিবন্ধনের কথা রয়েছে। এদের বেশিরভাগই গ্রামীণ অঞ্চল থেকে পরীক্ষায় অংশ নেবে।  
 

কবে অনুষ্ঠিত হবে এসএসসি পরীক্ষা

সম্প্রতি করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ায় চলতি ২০২১ শিক্ষাবর্ষের এসএসসি পরীক্ষার আয়োজন নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। 
 
এর আগে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ঘোষণা দিয়েছিল, পাঠ্যসূচি কাটছাঁট করে এসএসসি পরীক্ষা জুনে গ্রহণ করা হবে।সংক্ষিপ্ত পাঠ্যক্রমে এসএসসি শিক্ষার্থীদের ৬০ দিনের জন্য ক্লাস করতে হবে এবং আনুষঙ্গিক প্রস্তুতি নেয়ার জন্য তারা ১৫ দিনের মত সময় পাবেন। 

সাধারণত প্রতিবছর ফেব্রুয়ারির শুরুতে এসএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। 

কিন্তু করোনার কারণে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। কয়েক দফা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি বাড়িয়ে আগামী ২৩ মে খোলার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। সেক্ষেত্রে সংক্ষিপ্ত পাঠ্যক্রমে দুই মাস ক্লাসের পর এসএসসি শিক্ষার্থীদের নির্বাচনী পরীক্ষা অক্টোবরের আগে গ্রহণের সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।

মহামারীর কারণে গত বছর সরকার প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) এবং জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষাও নেয়নি। 

এই দুটি শ্রেণির শিক্ষার্থীদের স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তীর্ণ করা হয়; অন্যদিকে গত বছরের এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের জেএসসি এবং এসএসসি ফলাফলের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করা হয়। 

প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তরের সকল শিক্ষার্থীকেই অটোপাস প্রক্রিয়ায় পরবর্তী শ্রেণিতে পদোন্নতি দেয়া হয়।  
 
 

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.