ভ্যাকসিন গ্রহণের পরও সংক্রমিত হতে পারেন যে কারণে

বাংলাদেশ

26 February, 2021, 02:25 pm
Last modified: 26 February, 2021, 02:29 pm
ভ্যাকসিন নেয়ার পর শরীরে পর্যাপ্ত অ্যান্টিবডি তৈরি হতে ২১ দিন সময় লাগে। ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ নেয়ার ২১ দিনের মধ্যে কোনো ব্যক্তির ১০০% আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে বলে জানান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান।

ভ্যাকসিন নেওয়ার ১১ দিন পর প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব মো. মোহসীন। বর্তমানে তিনি রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন তিনি।

১০ ফেব্রুয়ারি কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন নিয়েছেন চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা বিভাগের পরিচালক এস এম গোলাম কিবরিয়া। ভ্যাকসিন নেয়ার ৬ দিন পর করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন তিনি।  

মো. মোহসীন ও গোলাম কিবরিয়ার মত কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ দেয়ার পর আরো কয়েকজন স্বাস্থ্যকর্মী ও চিকিৎসকের কোভিড-১৯ পজেটিভ হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। ভ্যাকসিন নেয়ার পর করোনাভাইরোস আক্রান্ত হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয় বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। কোন ভ্যাকসিন শতভাগ সুরক্ষা দিচ্ছেনা। আবার ভ্যাকসিন নেয়ার ২১ দিনের মধ্যে পর্যাপ্ত অ্যান্টিবডি তৈরি না হওয়ায় যে কেউ কোভিড-১৯ পজেটিভ হতে পারে। তাই ভ্যাকসিন নেয়ার পরেও সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।

প্রখ্যাত ভাইরোলজিস্ট এবং করোনাভাইরাস প্রতিরোধ বিষয়ক জাতীয় টেকনিক্যাল এডভাইজরি কমিটির সদস্য অধ্যাপক নজরুল ইসলাম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ নেয়ার পর যারা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে তারা মূলত ভাইরাসের ইনকিউবেশন পিরিয়ড এর মধ্যে ভ্যাকসিন নিয়েছিলো। ভ্যাকসিন নেয়ার সময় তাদের শরীরে ভাইরাসে সুপ্ত অবস্থায় ছিলো, পরে লক্ষণ প্রকাশ পেয়েছে। এছাড়া ভ্যাকসিন নেয়ার পর মাস্ক না পরে, স্বাস্থ্যবিধি না মানার কারণেও অনেকে আক্রান্ত হতে পারে।

ভ্যাকসিন নেয়ার পর শরীরে পর্যাপ্ত অ্যান্টিবডি তৈরি হতে ২১ দিন সময় লাগে। ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ নেয়ার ২১ দিনের মধ্যে কোনো ব্যক্তির ১০০% আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে বলে জানান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান।

দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে তিনি বলেন, বাংলাদেশে এখন যে ভ্যাকসিন দেয়া হচ্ছে তা গড়ে ১০০ জনের মধ্যে ৭০ জনকে সংক্রমণ থেকে নিরাপত্তা দেবে। বাকী ৩০% মানুষের কিন্তু কোভিড পজেটিভ হওয়ার ঝুঁকি থাকবে। বাংলাদেশে প্রতিদিন দুই লাখ মানুষকে ভ্যাকসিন দেয়া হচ্ছে এর মধ্যে কয়েকশো মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া অস্বাভাবিক নয়। এজন্য ভ্যাকসিন নেয়ার পর স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। ভ্যাকসিন নেয়ার পর মাস্ক না পরার কারণে মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে।

সাম্প্রতিক এক গবেষণায় জানা গেছে, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিনের একটি ডোজ দুই মাসের জন্য ৭৬ শতাংশ পর্যন্ত সুরক্ষা দিতে পারে।

গতকাল বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে জনগণকে ভ্যাকসিন নেওয়ার পরও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং মাস্ক পরার জন্য বলেন।

তিনি বলেন, "কারোরই এটা মনে করা উচিত না যে ভ্যাকসিন নেওয়ার পর সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে আপনাদের অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।"

শুধু বাংলাদেশ নয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভ্যাকসিন নেয়ার পর করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে অনেকেই। 

সিএনএন এর অধিভুক্ত কেজিটিভির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ১৪ ডিসেম্বর সান ডিয়েগোর একটি হাসপাতালের ইমার্জেন্সি রুমের একজন নার্সকে ফাইজারের ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছিলো। এর একসপ্তাহ পর পরীক্ষা করে দেখা যায় তিনি করোনাভাইরাস পজিটিভ।

ইসরায়েল টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রায় ১ মিলিয়ন ইজরায়েলিকে গত ১ জানুয়ারি ফাইজারের টিকা দেওয়া হয়। তবে ভ্যাকসিন দেওয়ার একদিন পরই ২৪০ জনের দেহে কোভিড-১৯ পজিটিভ ধরা পড়ে।

ভ্যাকসিন নেওয়ার পরও নিয়মিত মাস্ক পরা এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়ে সবাইকে সতর্ক করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ড. অ্যান্থনি ফাউচি।

কেনো ভ্যাকসিন নিতে হবে?

যদি ভ্যাকসিন নেয়ার পরও কোভিড-১৯ পজেটিভ হয় তাহলে ভ্যাকসিন কেনো নিবো?- এ প্রশ্ন উঠছে এখন।

এ বিষয়ে অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান বলেন, কোন ভ্যাকসিন শতভাগ নিশ্চয়তা দিচ্ছেনা। দুই ডোজ ভ্যাকসিন নেয়ার পর হয়তো ম্যাক্সিমাম প্রটেকশন পাওয়া যাবে। তারপরও সবাইকে ভ্যাকসিন নিতে হবে। কারণ ভ্যাকসিন নিলে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে আইসিইউতে যাওয়ার হার কমবে, অরগান ড্যামেজ হবে না, মৃত্যু কমবে, আক্রান্ত হলেও সংক্রমণ কম ছড়াবে। এসব কারণে সবাইকে ভ্যাকসিন নিতে হবে। আরো অন্তত দুই বছর এই ভ্যাকসিন নিয়ে সুরক্ষিত থাকতে হবে। এরইরমধ্যে দীর্ঘমেয়াদে শতভাগ প্রটেকশন দিবে এমন ভ্যাকসিন চলে আসবে।

তিনি বলেন, ভ্যাকসিন নেয়ার ড্রামাটিক ফল আমরা দেখতে পাচ্ছি। ভ্যাকসিনেশন শুরুর পর পর ইনফেকশন রেট ও ডেথ রেট নিচের দিকে নেমে যাচ্ছে। যদিও এটা নিয়ে এখনো গবেষণা হয়নি। সরকারের অ্যান্টিবডি টাইটার টেস্ট এখন ওপেন করে দেয়া উচিৎ। এতে করে মানুষ ২০০ টাকা দিয়ে টাইটার মেপে দেখতো তার শরীরে কতখানি অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে। তাহলে মানুষ বুঝতো তার শরীরে ভ্যাকসিন কাজ করেছে। তাহলে মানুষের উপলব্ধিতে পরিবর্তন আসবে।

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.