ভোগ্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতা নিয়ন্ত্রণে সাপ্লাই চেইন মনিটরিং করবে সরকার

বাংলাদেশ

09 February, 2021, 12:05 pm
Last modified: 09 February, 2021, 12:11 pm
অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের বাজারে অস্থিরতা ঠেকানোর জন্য এই কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যাতে করে কোন জেলায় পণ্যের মজুদ ও সরবরাহে সংকট তৈরি হলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া যায়। 
  • সাপ্লাই চেইন মনিটরিং এ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কমিটি গঠন হচ্ছে
  • কমিটি গঠনের জন্য সারাদেশে ডিসিদের চিঠি দিচ্ছে বিটিটিসি
  • 'ডি ও' স্লিপের বাণিজ্য বন্ধ করবে কমিটি
  • কোন জেলা-উপজেলায় পণ্যের ঘাটতি থাকলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হবে

ভোজ্য তেল, চিনি, পেঁয়াজের মত নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যগুলোর দাম মাঝে মধ্যেই অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাচ্ছে। এসব পণ্যে আমদানি নির্ভরতা থাকায় আন্তর্জাতিক বাজারের দামের উঠানামা দ্রুত প্রভাব ফেলে স্থানীয় বাজারে। মাঝে মধ্যেই এটি সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। বাজার নিয়ন্ত্রণের এসব পণ্যের সরবরাহ চেইন কার্যকরভাবে মনিটরিং এর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি) সম্প্রতি দেশের সবগুলো জেলা প্রশাসক (ডিসি) বরাবর চিঠি পাঠিয়েছে। এই চিঠিতে ডিসির সভাপতিত্বে একটি করে কমিটি গঠনের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

কয়েকটি জেলার ডিসির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের বাজারে অস্থিরতা ঠেকানোর জন্য এই কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যাতে করে কোন জেলায় পণ্যের মজুদ ও সরবরাহে সংকট তৈরি হলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া যায়। 

বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান মুনসি সাহাবুদ্দিন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'কমিটির হাতে তথ্যগুলো থাকলে ব্যবসায়ীরা ইচ্ছেমত প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না। কোন ডিলার চাইলেও এক জায়গার জন্য বরাদ্দ তুলে নিয়ে অন্য জায়গায় পাঠাতে পারবে না।' 

তিনি বলেন, 'কমিটি কার্যকরী হলে মজুদ ও সরবরাহ পরিস্থিতি নিয়ে সরকারও সবসময় আপডেট থাকতে পারবে। এই তথ্যের ওপর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারবে'।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অত্যাবশ্যকীয় পণ্য বিপনন ও পরিবেশক নিয়োগ আদেশ, ২০১১ জারি হওয়ার পরপরই এই কমিটিগুলোর গঠন করে কার্যক্রম শুরুর কথা থাকলেও ৯ বছর পর এসে এটা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হলো। 

ট্যারিফ কমিশনের চিঠিতে বলা হয়েছে, কমিটি পরিবেশক কর্তৃক সংগৃহীত অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের উত্তোলন, মজুদ, সরবরাহ, বিক্রয় এবং মূল্য পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে তার একটি মূল্যায়ন তৈরি করবে। পরিবেশকরা কি পরিমাণ পণ্য বিক্রি করছে তার তার একটি প্রতিবেদন প্রতি মাসে ট্যারিফ কমিশনের মনিটরিং সেলে পাঠাবে। 

কোন উপজেলায় পণ্যের সরবরাহ ও মজুদের সমস্যা বা ঘাটতি থাকলে আন্ত:উপজেলা পণ্য স্থানান্তরের নির্দেশনা, পণ্যের সহজলভ্যতা বাড়াতে স্থানীয় অবস্থার প্রেক্ষিতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত প্রদান করতে পারবে।

প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে ইউএনও এর সভাপতিত্বেও একটি করে কমিটি গঠনের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

অত্যাবশ্যকীয় পণ্য বিপণন ও পরিবেশক নিয়োগ আদেশ, ২০১১ এর অনুচ্ছেদ ১৫ অনুযায়ী জেলা এবং  অনুচ্ছেদ ১৭ অনুযায়ী উপজেলায় কমিটি করার পরামর্শ দেয়া হয়। এসব কমিটির কার্যক্রম আবার কেন্দ্রীয়ভাবে মনিটরিং করবে বাণিজ্য সচিবের নেতৃত্বাধীন জাতীয় কমিটি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশ্ববাজারে বর্তমানে কিছু অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে স্থানীয় বাজারেও মূল্য বাড়ছে। তবে কোন কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের মূল্য অত্যধিক বৃদ্ধি পেলে বা দেশীয় উৎপাদন ব্যহত হলে বা বাজারে পণ্যের কৃত্রিম সংকট তৈরি হলে এবং তা যথাযথভাবে মোকাবেলা করতে না পারলে বাজার অস্থিতিশীল হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।

এসব পরিস্থিতি মোকাবেলার প্রস্তুতি হিসেবে জাতীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের পণ্য বিপণন মনিটরিং কমিটিসমূহের কার্যক্রম গতিশীল করার জন্য সার্বক্ষণিক নজরদারি বাড়ানো হচ্ছে। সামনে রমজান মাস থাকায় কমিটি গঠন ও এর কার্যক্রমকে চালু করার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

পেঁয়াজ, ভোজ্য তেল ও চালের বাজারের অস্থিরতার প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি দেওয়া হয়। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য পরিস্থিতি নিয়ে যাতে কোন মহল অস্থিরতা সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, মাঠ প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসমূহকে বিশেষভাবে সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেয়া হয় এই চিঠিতে। 

এর প্রেক্ষিতেই বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সারাদেশের নিত্যপণ্যের বাজারে মনিটরিং জোরদারে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ট্যারিফ কমিশনকে উদ্যোগ নিতে বলেছে।

উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির কারণে দেশের বাজারেও হু হু করে বাড়ছে ভোজ্য তেলের দাম। প্রায় ৯ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ১৪০ টাকা দামে প্রতি লিটার সয়াবিন তেল কিনতে হচ্ছে ভোক্তাকে। ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) এর বাজার বিশ্লেষণের তথ্য বলছে, এক মাসের ব্যবধানে খোলা সয়াবিনের দাম প্রায় ২৪ শতাংশ এবং এক লিটারের বোতলের দাম ২৮.৫৭ শতাংশ বেড়েছে।  একই সঙ্গে বেড়েছে চিনির দাম। প্রতি কেজি চিনি ৭০ টাকা থেকে বেড়ে সর্বোচ্চ ৭৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আমদানি ও অভ্যন্তরীন বাণিজ্য (আইআইটি) অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব এ.এইচ.এম সফিকুজ্জামান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'কিছু সমস্যা ছিল যে কারণে কমিটিগুলো এতদিন করা হয়নি। কিন্তু এখন আমরা বাজার ব্যবস্থায় স্থিতিশীলতা আনার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগের পাশাপাশি কমিটিগুলোর গঠন ও এর কার্যক্রম শুরু করবো।'

এছাড়া সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রমজান এলেই প্রতি বছর বেশ কিছু ভোগ্যপণ্যের দামে অস্থিরতা তৈরি হয়। এর একটি বড় কারণ থাকে ডি ও (ডেলিভারী অর্ডার) স্লিপ নিয়ে বাণিজ্য। সারাদেশে অনেক মৌসুমি ব্যবসায়ী আছে যারা রমজানের আগে মিল থেকে ডেলিভারী অর্ডার নিয়ে পণ্য সংগ্রহ করে না। অন্য ব্যবসায়ীর কাছে বাড়তি দামে পুনরায় স্লিপ বিক্রি করে দেয়। এভাবে হাতবদলে পণ্যের দামও বেড়ে যায়।  

অথচ অত্যাবশ্যকীয় পণ্য বিপনন ও পরিবেশক নিয়োগ আদেশ, ২০১১ তে ডি ও প্রথা বাতিল করে এস ও (সাপ্লাই অর্ডার) চালু করা হয়েছে। যেখানে ১৫ দিনের মধ্যে পণ্যের ডেলিভারী নেওয়ার বিধান রয়েছে। কিন্তু এখনো সেই স্লিপ বাণিজ্য বন্ধ হয়নি। ডি ও স্লিপ হাতবদল বন্ধে মনিটরিং করবে এসব কমিটি।

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.