বীর উত্তম সি আর দত্ত আর নেই
![](https://www.tbsnews.net/bangla/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2020/08/25/c_r_datta.jpg)
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে চার নম্বর সেক্টরের কমান্ডার মেজর জেনারেল (অব.) চিত্ত রঞ্জন দত্ত (সি. আর. দত্ত) বীর উত্তম আর নেই।
সোমবার স্থানীয় সময় রাত ১১ টা ১৫ মিনিটে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তাঁর একমাত্র ছেলে ডা. চিরঞ্জিব দত্ত রাজা গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৩ বছর। ৩ মেয়ে ও ১ ছেলে রেখে গেছেন সি. আর. দত্ত।
সি আর দত্ত বীর উত্তমের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। একই সঙ্গে শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন তারা।
হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার মিরাশি গ্রামের বাসিন্দা উপেন্দ্র চন্দ্র দত্ত এবং লাবণ্য প্রভা দত্তের সন্তান চিত্ত রঞ্জন দত্তের জন্ম হয় ১৯২৭ সালের ১ জানুয়ারি আসামের শিলংয়ে।
শিলং-এর 'লাবান গভর্নমেন্ট হাইস্কুল' এ দ্বিতীয় শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেছিলেন। পরবর্তীকালে বাবা চাকরি থেকে অবসর নিয়ে হবিগঞ্জে এসে স্থায়ী বসবাস শুরু করেন। হবিগঞ্জ গভর্নমেন্ট হাই স্কুল থেকে ১৯৪৪ সালে তিনি মাধ্যমিক পাশ করেন। পরবর্তীতে কলকাতার আশুতোষ কলেজে বিজ্ঞান শাখায় ভর্তি হয়ে ছাত্রাবাসে থাকা শুরু করেন তিনি। পরবর্তীতে খুলনার দৌলতপুর কলেজের বিজ্ঞান শাখায় ভর্তি হন। পরে এই কলেজ থেকেই বি.এস.সি পাশ করেন।
চিত্ত রঞ্জন দত্ত ১৯৫১ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। কিছুদিন পর 'সেকেন্ড লেফটেনেন্ট' পদে কমিশন পান। ১৯৬৫ সালে সৈনিক জীবনে প্রথম যুদ্ধে লড়েন তিনি। ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধে পাকিস্তানের হয়ে আসালং এ একটা কোম্পানির কমান্ডার হিসেবে যুদ্ধ করেন তিনি। এই যুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য পাকিস্তান সরকার তাকে পুরস্কৃত করে।
১০ এপ্রিল মুজিবনগর সরকার গঠিত হওয়ার পর তাজউদ্দীন আহমেদকে প্রধানমন্ত্রী মনোনীত করা হয় এবং মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি হিসেব দায়িত্ব দেয়া হয় এম.এ.জি ওসমানীকে। তিনি বাংলাদশেকে মোট ১১টি সেক্টরে ভাগ করে নেন। সিলেট জেলার পূর্বাঞ্চল এবং খোয়াই শায়স্তাগঞ্জ রেল লাইন বাদে পূর্ব ও উত্তর দিকে সিলেট ডাউকি সড়ক পর্যন্ত এলাকা নিয়ে ৪নং সেক্টর গঠন করা হয় এবং এই সেক্টরের কমান্ডার নিযুক্ত হন চিত্ত রঞ্জন দত্ত। সেক্টর কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পর সিলেটের রশীদপুরে প্রথমে ক্যাম্প বানান তিনি। চারপাশের বিস্তীর্ণ চা বাগানের আড়ালকে কাজে লাগিয়ে তিনি যুদ্ধের কৌশল নির্ধারণ করে দিতেন। পরবর্তী সময়ে তিনি যুদ্ধের আক্রমণের সুবিধার্থে রশীদপুর ছেড়ে মৌলভীবাজারে ক্যাম্প স্থাপন করেন।
মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী জীবনে চিত্ত রঞ্জন দত্ত ছিলেন বাংলাদেশ রাইফেলসের (বর্তমানে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) প্রথম মহাপরিচালক। এছাড়া ১৯৭১-এর পর থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত তাকে নানা ধরনের দায়িত্ব পালন করতে হয়।