বিয়ের ৩ দিন আগে অ্যাসিড ঝলসে দিল হবুবধূর মুখ
গতকাল (শুক্রবার) ছিল তৈয়বার (২০) বিয়ের দিন। বিয়ের জন্য কেনা হয়েছিল শাড়ী-গহনা। উঠোনে বাঁধা হচ্ছিল প্যান্ডেল। কিন্তু দুর্বৃত্তের ছুঁড়ে মারা অ্যাসিডে ঝলসে যাওয়া মুখ নিয়ে এখন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে কাতরাচ্ছেন তৈয়বা।
কক্সবাজারের রামু উপজেলার গর্জনিয়া ইউনিয়নের মাঝিরকাটা গ্রামে সোমবার রাতে এ ঘটনা ঘটে। তৈয়বাকে প্রথমে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে নিয়ে আসা হয়। তৈয়বার পরিবারের দাবি, পূর্ব বিরোধের জেরে গ্রামের কিছু যুবক পরিকল্পিতভাবে তৈয়বাকে অ্যাসিড নিক্ষেপ করেছে।
শুক্রবার সকালে চমেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে গিয়ে দেখা যায় ফুপিয়ে কাঁদছে তৈয়বা। পাশে বসা মা নুরাসা বেগমের চোখ দিয়েও অঝোরে অশ্রু ঝরছে । মাথায় হাত দিয়ে নির্বাক বসে আছেন তৈয়বার বাবা মোজাফফর আহমদ। তৈয়বার পরিবারের কান্নায় ভারি হয়ে উঠেছে পুরো বার্ন ইউনিটের পরিবেশ।
চমেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের চিকিৎসক ডা. আনজুমান নিগাদ উর্মি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "অ্যাসিডে তৈয়বার শরীরের প্রায় ৭ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ডান চোখ ও মুখের একপাশ ঝলসে গেছে। আশঙ্কা করছি চোখেও আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন তিনি। আমাদের চক্ষু বিশেষজ্ঞরা তাকে দেখেছেন। আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তার চোখের ক্ষতির বিষয়টি বলতে পারবো।'
কান্নাজড়িত কন্ঠে নুরাসা বেগম বলেন, "সোমবার আমার বড় মেয়ে তৈয়বার সাথে পাশের গ্রামের নুরুল আমিনের বিয়ের কথা পাকা হয়। মঙ্গলবার আকদ ও শুক্রবার বিয়ের দিন ঠিক হয়। এ জন্য রাতে বাজার থেকে বিয়ের শাড়ী ও গহনা কেনা হয়েছিল। কিন্তু রাতে প্রাকৃতিক ডাকে সারা দিতে বাইরে গেলে কয়েকজন যুবক আমার মেয়ের মুখ অ্যাসিড মেরে ঝলসে দিয়েছে। এখন তাকে কে বিয়ে করবে?"
"বুধবার জামাই (হবু বর নুরুল আমিন) হাসপাতালে আসছিল, সে শুধু কেঁদেই গেছে ..। পরের ছেলে আমি তাকে কি জবাব দেব," বলেন নুরাসা বেগম।
বাবা মোজাফফর আহমদ বলেন, "কিছুদিন আগে আমার ছেলে আজিজ মৌলার সঙ্গে প্রতিবেশী বাদশা মিয়ার ছেলে নুরুল আবছারের ঝগড়া হয়। এ ঘটনার জের ধরে নুরুল আবছারসহ কয়েকজন যুবক রাতের আঁধারে আমার মেয়ের এই সর্বনাশ করেছে।"
এ সময় কথা হয় ভিকটিম তৈয়বা বেগমের সঙ্গেও। তিনি বলেন, "মা, আমার ছোটবোনসহ রাতে বাইরে গিয়েছিলাম। মা বাড়িতে ঢোকার পরপরই চারজন যুবক আমাকে জাপটে ধরে। আমি নুরুল আবছারকে চিনতে পেরেছিলাম। এ সময় সে আমার মুখে পানি জাতীয় কিছু ঢেলে দেয়। প্রচণ্ড জ্বলুনি নিয়ে যখন ঘরে প্রবেশ করি তখন সব শেষ।"
"আমার জীবন তো শেষ, আমি চাই যারা আমার এ ক্ষতি করেছে তাদের ফাঁসি হোক। যেন আর কোনো নারীর সঙ্গে এমনটা করার সাহস না পায় কোনো দানব," বলেন তৈয়বা।
হাসপাতালে উপস্থিত ছিলেন তৈয়বার হবু শ্বাশুড়ি খুরশিদা বেগমও। তিনি বলেন, "খুব শখ করে ছেলের বউ হিসেবে তৈয়বাকে ঘরে তুলতে চেয়েছি। কিন্তু দুষ্কৃতকারীরা আমার স্বপ্ন ধ্বংস করে দিয়েছে। আমরা নিয়মিত তৈয়বার খোঁজ-খবর রাখছি। তৈয়বা যতদিন পর্যন্ত সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছে না, ততদিন আমার ছেলেকে বিয়ে করাব না।"
রামু থানার ওসি আনোয়ারুল হোসেন বলেন, "এ ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে অ্যাসিড অপরাধ দমন আইনে মামলা করেন তৈয়বার বাবা মোজাফফর আহমদ। মামলায় মাঝিরকাটা গ্রামের নুরুল আবছার ও তার ভাই ফরিদ আলমকে আসামি করা হয়েছে।
পুলিশ ওই রাতেই অভিযান চালিয়ে নুরুল আবছারকে (৩২) গ্রেপ্তার করে। পরদিন তাকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। অপর আসামি ফরিদ আলমকে ধরতে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে।"