বিশ্বে দীর্ঘতম সময় স্কুল বন্ধ রাখার রেকর্ড বাংলাদেশের

বাংলাদেশ

05 September, 2021, 07:10 pm
Last modified: 13 October, 2021, 10:01 pm
ইউনেসকো বলছে, গত বছরের মার্চ থেকে এ পর্যন্ত, বিশ্বে সবচেয়ে বেশি সময় যাবত বন্ধ রয়েছে বাংলাদেশের স্কুলগুলো।

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ বিশ্বে দীর্ঘতম সময় স্কুল বন্ধ রাখার রেকর্ড গড়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা –ইউনেসকো। 

সংস্থাটি বলছে, গত বছরের মার্চ থেকে এ পর্যন্ত, বিশ্বে সবচেয়ে বেশি সময় যাবত বন্ধ রয়েছে বাংলাদেশের স্কুলগুলো।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে যখন বিশ্বের ৫৩ শতাংশ দেশ সম্পূর্ণরূপে স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তখন টানা ৬১ সপ্তাহ বন্ধ রাখার পরেও বাংলাদেশ সেই সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। বাংলাদেশসহ বিশ্বের ১৪ টি দেশ এখন পর্যন্ত নিজেদের স্কুলগুলো চালু করতে পারেনি।

তবে আজ রোববার বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ঘোষণা দিয়েছেন, আগামী ১২ সেপ্টেম্বর থেকে দেশের সব প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হবে।

বিকেলে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, ওইদিন থেকে শিক্ষার্থীরা স্বশরীরে ক্লাস করতে পারবে। 

মন্ত্রী জানান, পিএসসি, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ক্লাস হবে প্রতিদিন। অন্যদের সপ্তাহে একদিন ক্লাস হবে। 

দীর্ঘ এই সময় বাংলাদেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীরা।

করোনাভাইরাস মহামারির সংক্রমণ বাড়তে থাকায় বাংলাদেশের স্কুলগুলো গত বছরের ১৭ই মার্চ বন্ধ করে দেওয়া হয়। সাধারণ বর্ষপঞ্জিকার মাধ্যমে হিসাব করলে দেখা যায়, চলতি বছরের ৩০ আগস্ট পর্যন্ত টানা ৭৬ সপ্তাহ যাবত বন্ধ আছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। তবে, দেশে প্রচলিত শিক্ষা বর্ষপঞ্জিকার হিসাবে ইউনেসকোর মতে, শিক্ষাবর্ষের ৯ থেকে ১১ মাস যাবত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করে রাখা হয়েছে।
 
ইউনেসকোর ডেটাবেজ থেকে জানা যায়, ভেনিজুয়েলাতেও বাংলাদেশের মতো এতোটা সময় ধরেই স্কুল বন্ধ রয়েছে। এছাড়া, হন্ডুরাসে ৫৯ সপ্তাহ, কুয়েতে ৫৭ সপ্তাহ, পানামায় ৫৫ সপ্তাহ এবং মেক্সিকো ৫৩ সপ্তাহ ধরে বন্ধ রয়েছে স্কুল।

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে, দীর্ঘতম সময় স্কুল বন্ধ রাখার তালিকায় শ্রীলঙ্কা রয়েছে দ্বিতীয় অবস্থানে। দেশটিতে ৪৬ সপ্তাহ ধরে স্কুল বন্ধ রয়েছে এবং এ পর্যন্ত তাদের স্কুল খোলার প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়নি।
 
এদিকে, মহামারি চলাকালীন মাত্র ২৫ সপ্তাহ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রাখার পরই, ভারত গত ৪৪ সপ্তাহ ধরে স্কুলগুলো আংশিকভাবে খোলা রেখেছে।
 
এত সময় ধরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রাখার ফলে নিঃসন্দেহে বাংলাদেশী শিক্ষার্থীরা বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় শিক্ষার দিক দিয়ে কিছুটা বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।

এখন পর্যন্ত, প্রায় ৪০ মিলিয়ন শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যাদের মধ্যে ১৭.৩৪ মিলিয়নই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত। এই শিক্ষার্থীরা যথাযথ শিক্ষা গ্রহণ এবং তাদের সমবয়সীদের সঙ্গে আলাপচারিতার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছে, যা তাদের শিক্ষার অভিজ্ঞতাকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
 
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (বিআইডিএস) -এর সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. কাজী ইকবাল বলেন, যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব স্কুলগুলো পুনরায় চালু করা দরকার।
 
তিনি আরও পর্যবেক্ষণ করেছেন, স্কুলগুলোকে এই মুহূর্তে সম্পূর্ণভাবে খুলে দেওয়ার মতো অবকাঠামোগত সুযোগ নেই বাংলাদেশে। তাই আপাতত আংশিকভাবে হলেও স্কুল খুলে দেওয়াকে তিনি যুক্তিযুক্ত মনে করছেন।

তিনি বলেন, "তবে, প্রথমে আমাদের নিশ্চিত করতে হবে, সব শিক্ষক সম্পূর্ণভাবে টিকা নিয়েছেন। তারপর, ছাত্রদের তাদের জ্যেষ্ঠতার স্তর অনুযায়ী টিকা দিতে হবে।"
 
ইউনেসকো জানিয়েছে, উন্নত দেশগুলোর মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মহামারি চলাকালীন স্কুলগুলো আংশিকভাবে খোলা রেখেছে।

এছাড়া, দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর হার নিয়ে ব্রাজিল সম্পূর্ণভাবে স্কুল বন্ধ রেখেছিল মাত্র ৩৮ সপ্তাহ। এরপর আংশিকভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুনরায় চালু করা সত্ত্বেও, দেশটিতে এ বছরের জুন থেকে কোভিড-১৯ সংক্রমণ কমতে দেখা গেছে।
 
অন্যদিকে, কোভিড -১৯ সংক্রমণের হার এখনও নিয়ন্ত্রণে না আসায় বাংলাদেশ সরকার স্কুল বন্ধের সময়সীমা আরও কিছুদিন বাড়িয়েছে।

সরকারের সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামী ১২ই সেপ্টেম্বর দেশব্যাপী একযোগে প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.