বিভিন্ন জেলার মজুদকৃত ভ্যাকসিন শেষের দিকে
সরকারের কাছে এখন মাত্র সাত লাখ ডোজ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন মজুদ আছে। দেশের বিভিন্ন জেলায় আগামী দুই-তিনদিনের মধ্যে ভ্যাকসিন দেয়া বন্ধ হয়ে যাবে। এখন পর্যন্ত অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন জোগার করতে পারেনি সরকার। ফার্স্ট ডোজ নেয়া প্রায় ১৫ লাখ মানুষকে সেকেন্ড ডোজ দেয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, ১ কোটি ২ লাখ ডোজ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিনের মধ্যে ৯৫ লাখ ডোজ দেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ নিয়েছেন ৫৮ লাখের বেশি মানুষ আর দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ৩৫ লাখের বেশি মানুষ।
ভ্যাকসিন সংকটের কারণে ২৬ এপ্রিল থেকে ফার্স্ট দেওয়া বন্ধ রয়েছে। এখন ভ্যাকসিন সেন্টারগুলোতে যারা মেসেজ নিয়ে যাচ্ছে তাদেরই শুধু দ্বিতীয় ডোজ ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে।
দেশের সবচেয়ে বড় টিকাদান কেন্দ্র বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) এ মাসের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত ভ্যাকসিন মজুদ আছে বলে জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শরফুদ্দিন আহমেদ।
ডা. শরফুদ্দিন আহমেদ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "ভ্যাকসিনের নতুন চালান না আসলে আমাদের সেন্টারে প্রথম ডোজ নেওয়া প্রায় ৮ হাজার মানুষ দ্বিতীয় ডোজ পাবেন না। তবে প্রথম ডোজ নেওয়ার ১২ সপ্তাহ পরও সেকেন্ড ডোজ দেয়া যাবে, ওই সময়ের মধ্যে ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে বলে আশা করা যাচ্ছে।"
বিএসএমএমইউ এর মত একই অবস্থা দেশের অন্যান্য টিকাদান কেন্দ্রগুলোর। এরইমধ্যে ভ্যাকসিন না পাওয়া নিয়ে চট্টগ্রামে বিক্ষোভের ঘটনাও ঘটেছে।
চট্টগ্রামে শুধু এসএমএস পাওয়া ব্যক্তিদের কেন্দ্রে যাওয়ার অনুরোধ
চট্টগ্রামে করোনা ভ্যাকসিনের মজুদ সংকটের কারণে শুধুমাত্র এসএমএস পাওয়া টিকা গ্রহীতাদের কেন্দ্রে যাওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. শেখ ফজলে রাব্বি। সোমবার সকালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় তিনি এ অনুরোধ জানান। রোববার চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন কেন্দ্র টিকা না পেয়ে বিক্ষোভের ঘটনায় আজ তিনি এ ঘোষণা দিলেন।
সিভিল সার্জন কার্যালয়, চট্টগ্রাম- এর ফেসবুক পেজে আপলোড করা ওই ভিডিও বার্তায় সিভিল সার্জন বলেন, "আমাদের কাছে যে ভ্যাকসিন আছে তা দিয়ে ঈদ পর্যন্ত কার্যক্রম চালিয়ে যাবো। আপনারা জানেন, যে পরিমাণ আমরা প্রথম ডোজ দিয়েছি, তার ৭০ শতাংশ দ্বিতীয় ডোজ হিসেবে সরবরাহ করা হয়েছে এবং এই নীতিমালা সারা দেশের জন্য প্রযোজ্য। সে হিসেবে যারা প্রথম ডোজ দিয়েছেন, তাদের মধ্যে প্রায় ১৬ লাখ মানুষ এই মুহুর্তে দ্বিতীয় ডোজ পাচ্ছেন না।"
শুধুমাত্র এসএমএস পাওয়া ব্যক্তিদের কেন্দ্রে যাওয়ার অনুরোধ জানিয়ে ডা. শেখ ফজলে রাব্বি বলেন, 'ঈদের পরে নতুন ভ্যাকসিন আসার পরে আমরা দ্বিতীয় ডোজ সম্পন্ন করতে পারবো। এই মুহুর্তে আমরা চট্টগ্রামবাসীর কাছে অনুরোধ করবো, শুধুমাত্র যাদের কাছে এসএমএস যাবে তারা আসবেন, আমরা সুষ্ঠুভাবে তাদের ভ্যাকসিন দিতে পারবো। যারা এই মুহুর্তে ভ্যাকসিন পাচ্ছেননা তাদেরকে ধৈর্য ধারন করতে বলছি। তারা অবশ্যই ভ্যাকসিন পাবেন, আমরা আশ্বস্ত করছি। সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে আমাদের আশ্বস্ত করা হয়েছে।'
সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে জানা গেছে, চট্টগ্রামে করোনা ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া শুরু হয়েছে ৮ এপ্রিল থেকে। প্রথম ডোজ ভ্যাকসিন গ্রহণ করেছেন এমন প্রায় দেড় লাখ টিকা গ্রহীতা এখনও দ্বিতীয় ডোজ পাননি। কিন্তু চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য বিভাগের হাতে টিকা মজুদ আছে মাত্র ২৭ হাজার ৩৮০ ডোজ।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর-দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'আমাদের হাতে ভ্যাকসিন নেই। উপজেলা গুলোতে সীমিত সংখ্যক মানুষকে টিকা দেওয়া হচ্ছে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। আন্দরকিল্লায় জেনারেল হাসপাতালে হয়ত আর এক-দুইদিন চলবে।'
খুলনায় দ্বিতীয় ডোজের টিকা নিয়ে অনিশ্চয়তায় ৬০ হাজার মানুষ
খুলনায় করোনার দ্বিতীয় ডোজের টিকা নিতে পারেনি প্রথম ডোজ নেওয়া ৬০ হাজার মানুষ। বর্তমানে দ্বিতীয় ডোজের মাত্র ২-৩ দিনের টিকা মজুদ রয়েছে । ফলে টিকা নেওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তায় রয়েছেন প্রথম ডোজের টিকা গ্রহণকারী ৬০ হাজার মানুষ।
খুলনার সিভিল সার্জন ডা. নিয়াজ মোহাম্মদ জানান, খুলনা মহানগরীসহ জেলায় দ্বিতীয় ডোজের টিকা গ্রহণ করেছেন ১ লাখ ৮ হাজার মানুষ। বর্তমানে প্রায় ৬০ হাজার ডোজ টিকার ঘাটতি রয়েছে। তিনি বলেন, বর্তমানে যে টিকা রয়েছে ঈদের পর তা মাত্র ২-৩দিন হতে পারে। নতুন করে টিকা না আসা পর্যন্ত এর পর আর কাউকে টিকা দেওয়া সম্ভব হবে না।
খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. রাশেদা সুলতানা বলেন, বর্তমানে খুলনা বিভাগে আড়াই লাখ দ্বিতীয় ডোজের টিকার সংকট রয়েছে।
সিলেটে ম্যাসেজ দেখিয়েও অনেকে টিকা পাচ্ছেন না
সিলেটে এখন মোবাইলে ম্যাসেজ ছাড়া কাউকেউ ২য় ডোজের টিকা দেওয়া হচ্ছে না। তবে ম্যাসেজ দেখিয়েও অনেকে টিকা পাচ্ছেন না। সিলেট নগরে দুই হা্জার ডোজ ও নগরনের বাইরে জেলায় প্রায় ৭ হাজার ডোজ ভ্যাকসিন মজুদ রয়েছে। দু তিন দিনেরর মধ্যে এই মজুদ শেষ হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিস্টরা।
এখন পর্যন্ত সিলেট নগরে যাদের প্রথম ডোজ দেওয়া হয়েছে তাদের সবার দ্বিতীয় ডোজ সম্পন্ন করতে সিলেট নগরে আরও ১৫ হাজার ডোজ ভ্যাকসিন লাগবে।
সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. জাহিদুল ইসলাম বলেন, যদি প্রতিদিন ১ হাজারের বেশি মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়, তাহলে আগামী ২ দিনের মধ্যে মজুদ শেষ হয়ে যাবে। এছাড়া রোববার টিকা কেন্দ্রে উপস্থিত সকল গ্রহীতাকে টিকা দেয়া সম্ভব হয়নি। তাই দেশে নতুন করে টিকা না আসা পর্যন্ত দ্বিতীয় ডোজের জন্য নিবন্ধিতদের অপেক্ষায় থাকতে হবে।
সিলেটের সিভিল সার্জন প্রেমানন্দ মণ্ডল বলেন, সিলেট জেলায় আরও সাত হাজার ডোজ ভ্যাকসিনের মজুদ রয়েছে। তা দিয়ে ঈদের আগে পর্যন্ত চালিয়ে যাওয়া যাবে।
বগুড়ায় বুধবার পর্যন্ত টিকাদান চালু রাখা সম্ভব হবে
টানা চারদিন বন্ধ থাকার পর আবার করোনা টিকা দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। উপজেলা পর্যায় থেকে