বগুড়ায় ঈদের আনন্দ কেড়ে নিয়েছে বন্যা
'গত বছর ১৩ হাজার টাকা দিয়ে ভাগে কোরবানি করেছিলাম, এবার আশা ছিলো একাই একটি গরু দেবো কিন্ত তা হয়নি, বন্যার কারনে,' বললেন কৃষক মো: আনিস সরকার।
বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার 'পাকের দহ' গ্রামের চাষী মো: আনিস সরদার আশা করেছিলেন, ৯ বিঘা জমির পাট থেকে যে আয় হবে- তা দিয়েই তিনি এবার গরু কোরবানি করবেন। কিন্ত বন্যায় সব পাট নষ্ট হওয়ায়, তার সে আশা আর পূরন হয়নি।
'গ্রামে, শরিকদের মধ্যে যারা কোরবানি করেছেন, তারা মাংস দিলেই ৪ সদস্যের পরিবারে মাংস খাওয়া হবে,' জানান তিনি।
বন্যাদুর্গত সারিয়াকান্দি উপজেলার কাজলা ইউনিয়নে সাড়ে ৫ হাজার পরিবার থাকলে এবার কোরবানি দিয়েছে ৩শ' পরিবার; জানালেন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রাশেদ সরকার।
তিনি জানান, বন্যার কারনে কাজলা ইউনিয়নের প্রায় পুরোটাই ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় চরম আর্থিক সংকটে আছেন প্রায় ৩৫ হাজার মানুষ। এদের মধ্যে যারা গত বছর গরু কোরবানি করেছেন তাদের অনেকেরই অবস্থা এবার মো: আনিস সরকারের মতোই।
একই উপজেলার চালুয়াবাড়ি ইউনিয়নেও অনেক মানুষ এবার কোরবানি দিতে পারেননি- বন্যায় ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়ায়। আর্থিক সংকটে থাকা প্রায় ৫ হাজার পরিবারের অনেকের ঘরে এখনো পানি আছে। কোরবানি দেয়া তো দূরের কথা- এলাকার মানুষ মাংস দিলে তা রান্না করে খাওয়াও কঠিন হবে।
'গত বছর বাড়িতে পোষা একটি ছাগল কোরবানি করেছিলাম আর এবার ভাগে গরু দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল। কিন্ত তা হয়নি, বানে ফসল নষ্ট হওয়ায়,' বললেন চাষী মোয়াজ্জেম হোসেন ব্যাপারী।
চালুয়াবাড়ি ইউনিয়নের গ্রাম পাঁচগাছি। এ গ্রামে এবার কোরবানি হয়েছে মাত্র ৫/৬টি পরিবারে- জানালেন মোয়াজ্জেম। কিন্তু ওই গ্রামে আছে অন্তত ১শ' পরিবার।
ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো: শওকত আলী জানান, ৪৮শ' পরিবারের মধ্যে কোরবানি করতেই পারেনি অন্তত ২ হাজার ৯শ' পরিবার। এসব পরিবারের অধিকাংশ মানুষই খুশির এ দিনে চেয়ে থাকবেন প্রতিবেশিদের দিকে।
সরকারি হিসাবে বলা হয়েছে, বন্যায় এবার বগুড়ার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে- প্রায় ৩২ হাজার পরিবারের দেড় লাখ মানুষ।
বাধে, স্কুলে, আশ্রয় নেওয়া এসব মানুষের আনন্দে ঈদ উদযাপনের অবস্থা নেই।